৫ স্বজনের লাশ নিতে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে বেঁচে যাওয়া নবদম্পতি

Shakil
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ন, ১৬ অগাস্ট ২০২২ | আপডেট: ৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, ১৬ অগাস্ট ২০২২

রাজধানীর উত্তরায় গার্ডার চাপায় পাঁচ স্বজনকে হারিয়েছেন নবদম্পতি রিয়া মনি ও হৃদয়। একই দুর্ঘটনায় ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এ নবদম্পতি। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের রিলিজ দেন। তারা এখন পুরোপুরি সুস্থ।

লাশ বুঝে নিতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাইরে বাকরুদ্ধ রিয়া মনিকে স্বামী হৃদয়ের হাত ধরে বসে থাকতে দেখা যায়। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পুরো মর্গ এলাকা।

আরও পড়ুন: জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ, উচ্চপদস্থ তদন্ত বোর্ড গঠন

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্বের অবতারণা হয়েছে।

সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে বিমানবন্দর সড়কে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপা পড়া থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১)। গত শনিবার তাদের বিয়ে হয়েছে। এদিন বউভাতের অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন হৃদয়ের বাবা, রিয়ার মা, খালা ও খালাতো ভাই এবং বোন। দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে মামলা করার কথা জানিয়েছেন হৃদয়। এ ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবি তার।

আরও পড়ুন: সংস্কার করে কালক্ষেপণ করলে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনবে: রুহুল কবির রিজভী

হৃদয় বলেন, আমি আর আমার বাবা সামনে ছিলাম। আর পেছনে আমার স্ত্রীসহ বাকিরা ছিলেন। এয়ারপোর্ট রোডে ক্রেনে একটা বক্স গার্ডার ঝুলছিল। আমরা দূর থেকে এটা দেখেছি। একের পর এক গাড়ি এর নিচ দিয়ে চলে যাচ্ছিল। ভাবলাম, আমরাও যেতে পারবো। যখনই পার হতে গেলাম তখনই গার্ডারটা গাড়ির ওপর পড়লো। আমি বাবার বামপাশে ছিলাম, আমার স্ত্রী পেছনের সিটে বামপাশে ছিলেন। আমার বাবাসহ বাকিরা ডানপাশে ছিলেন। তারা সবাই ঘটনাস্থলেই মারা যান।

তিনি বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় সহজেই আমাকে উদ্ধার করা হয়। আমার পা আটকে ছিল। গাড়ির গ্লাস ভেঙে আমাকে সহজেই উদ্ধার করা হয়। আমার স্ত্রী পুরোপুরি আটকে ছিলেন, ওকে বের করতে অনেক সময় লাগে। আমাকে ১০ মিনিটে বের করে ফেলে কিন্তু আমার স্ত্রীকে বের করতে আধঘণ্টার মতো সময় লাগে। এ ঘটনায় আমরা মামলা করেছি, এর বিচার চাই।

হৃদয় বলেন, ভাবতেও পারিনি এটা আমাদের ওপর পড়বে। ঝুঁকির কাজ রাস্তায় কেন করবে? ঝুঁকি নেই দেখেই তো সেখানে যানবাহন চলছিল। সব গাড়ি যাচ্ছে, এজন্য আমরা রানিংয়ে গাড়ি টান দিয়েছিলাম। ক্রস করার সময় ওইটা গাড়ির ওপর পড়ে। দুই/এক সেকেন্ডের মধ্যেই ক্রেন কাত হয়ে যায়। সেখানে তো আরও গাড়ি থাকতে পারতো। সরকারের কাছে এই ঘটনার বিচার চাই যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে।

এদিকে সোমবার উত্তরা পশ্চিম থানায় এ দুর্ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অবহেলাজনিতভাবে ক্রেন পরিচালনাকারী চালক, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।