আগাম গোয়েন্দা তথ্য না থাকায় উদ্বেগ
এবার "প্রত্যুষ মিছিল' ঠেকাতে মাঠে সাদা পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দারা

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী যুবলীগের নেতাকর্মীদের অপতৎপরতা ও প্রত্যুষ মিছিল ঠেকাতে মঙ্গলবার থেকে টহল পুলিশের পাশাপাশি মাঠে নামছে সাদা পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। রাজধানী ঢাকায় অতি প্রত্যুষে হঠাৎ হঠাৎ মিছিল উদ্বেগে ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এ নিয়ে সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অপরাধ সভায় বসেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার। গোয়েন্দা তথ্য কেন সঠিক সময়ে পাওয়া যাচ্ছে না এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মাঠ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন এসবির গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভরসা না করে নিজেদেরকেই তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং সাদা পোশাকে মাঠে থেকে যে কোনো অপতৎপরতাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রত্যুষ মিছিল ঠেকাতে মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে সন্দেহজনক এলাকায় টহল পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। যৌথবাহিনী পুলিশ ও রাবের তৎপরতার মাঝেও হঠাৎ করে প্রত্যুষ পরিকল্পিত জটিকা মিছিল বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগে পড়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এদিকে রাজধানীর প্রত্যুষ মিছিল গুলো হয়েছে বাড্ডা যাত্রাবাড়ী ডেমরা মিরপুর রামপুরা শাহবাগ এমনকি ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জ কিশোরগঞ্জ ও খুলনায় সহদেশের বিভিন্ন এলাকা মিছিল হয়েছে। এই স্পট গুলিতে প্রত্যুষ মিছিল নিয়ে রাজনৈতিক কৌতূহলীদের মাঝে নানা আলোচনা চলছে।
আরও পড়ুন: অসহায় পরিবারের দুই শিশুকে চিকিৎসা সহায়তা ও অটোরিকশা দিলেন তারেক রহমান
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে মহল্লা মহল্লায় নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মীদের গ্রেফতারের পুলিশ অভিযান চলছে। প্রতিদিনই নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জানা যায় নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বুঝে ফাঁকফুকুরে গভীর রাতে , প্রত্যুষে নির্জন এলাকায় ১০-১৫ জনের দুই তিন মিনিটের একটি জটিকা মিছিল করে ছবি ও ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। আওয়ামী লীগের ফেসবুক ও অন্যান্য ভাবে গণমাধ্যমে পাঠিয়ে দে য়। গত কয়েকদিন ধরে এই ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে ঢাকায় ৫ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মনু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুরাদ অর্থ সম্পাদক আনিসুর রহমান সহ অর্ধশ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের টার্গেট করে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে ৫ আগষ্টের পর আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরে যারা ফ্রন্টলাইনে থেকে সংগঠন করেছে, চাদাবাজী, টেন্ডারবাজী সহ নানা কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন তারাই মুলত গা ঢাকা দেন এ সময়। অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে জুলাই আগষ্টে ছাত্র জনতা হত্যা মামলাও। তবে তবে সাধারনত যারা আওয়ামী লীগ করেন কিন্তু দলীয় কোনো কার্যক্রমে যোগ দিতেন না বা দিলেও কদাচিৎ তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে না গেলেও সতর্কতার সঙ্গেই চলতেন।
আরও পড়ুন: একটি গোষ্ঠী মব সন্ত্রাসকে ক্যানসারে পরিণত করেছে: রিজভী
ইদানিং বেরিয়ে আসছেন এসব নেতাকর্মী। দলের সিনিয়র সব নেতা যারা মন্ত্রী এমপি ছিলেন তারা পালানো ও দেশত্যাগ। এতে দীর্ঘদিন অভিমান ও ক্ষোভ বিরাজ করলেও ইদানিং সব ভূলে আবারও মাঠে নামতে শুরু করেছেন। শুধু মাঠেই নয়, শুরু করছেন ঝটিকা মিছিল। একের পর এক মিছিল সুষ্টমত হওয়ায় অন্যরাও সাহস পাচ্ছেন। এমনকি দেশের বাইরে থেকে যেসকল এমপি মন্ত্রীরা রয়েছেন তারাও তাদের নির্বাচনি এলাকার নেতাকর্মীদের মাঠে নামার জন্য উদ্বুব্ধকরন করছে বলে জানা গেছে। খবর সংশিলিষ্টসূত্রের।
এসব মিছিলে শ্লোগান দেয়া হচ্ছে, শেখ হাসিনা আবারও ফিরবে। দেশ হাসবে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুসেরও পদত্যাগ দাবী করা হচ্ছে এসব মিছিল থেকে। মুলত ঝটিকা মিছিলের উদ্দেশ্য যারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছেন তাদের উদ্বুব্ধকরন, বের হয়ে আসার। কারন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী লাখ লাখ। সবাই ধীরে ধীরে মাঠে নামলে ভীতিটা কেটে যাবে।
এছাড়া সকল থানাকে দেয়া এক অফিস আদেশে জানানো হয় যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার মামলায় আসামি গ্রেফতার করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গত শনিবার (১২ এপ্রিল) ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ডিএমপির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এমন নির্দেশনা দিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সংক্রান্ত মামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এজাহারনামীয় আসামির সংখ্যা বেশি। এসব মামলার এজাহারনামীয় বা তদন্তে নাম আসা আসামি গ্রেফতারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
গত ২০ এপ্রিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সংক্রান্ত মামলায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত আসামি গ্রেফতার না করার অফিস আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন ওইদিন রির্টটি করেছেন। বিচারপতি ফাতেমা নজীব এবং বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চে রিটটির শুনানি হতে পারে।
গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ পুলিশের এক অফিস আদেশে বলা হয়, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সংক্রান্ত রুজুকৃত মামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এজাহার নামীয় আসামির সংখ্যা অধিক। এসব মামলার এজাহারনামীয় কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত আসামি গ্রেফতারের নিমিত্তে উপযুক্ত প্রমাণসহ (ভিকটিম/বাণী/প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী, ঘটনা সংশ্লিষ্ট ভিডিও/অডিও/স্থির চিত্র ও সিডিআর ইত্যাদি) অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গ্রেফতার করতে হবে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত বৈষম্যবিরোধী মামলার এজাহারনামীয় কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত কোনো আসামি গ্রেফতার না করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
ধারনা করা হচ্ছে পুলিশের প্রতি এমন আদেশে যারা প্রকৃত অপরাধের সঙ্গে জড়িত তারাও আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বের হয়ে প্রকাশ্যে চলে আসতে পারেন। এতে করে সমাজে ভীতি তৈরী হতে পারে। এবং যে মিছিল ইদানিং শুরু হচ্ছে এর নেপথ্যে পুলিশের সম্ভব্য নমনীয়তা ও দুর্বল অবস্থান বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর আলম হুশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে থানা আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল রুখতে না পারবে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হবে। কিন্তু এ নির্দেশনাতেও কাজ হচ্ছেনা।
এরই মধ্যে অভিযোগ তুলেছে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিও। তারা দাবী তুলেছেন, যারা আওয়ামী লীগের মিছিলের সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেফতার করতে হবে। দলের মুখ্য সচিব হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করে বলেছেন, কতিপয় রাজনৈতিক দলের সমঝোতা মুলক রাজনীতির জন্য ক্রমশ বাড়ছে আওয়ামী লীগের মিছিলে লোক সংখ্যা।