৩০ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পাস করলেন স্বামী-স্ত্রী

“শিক্ষার কোনো বয়স নেই”—এ কথাটিই সত্য করে দেখালেন কিশোরগঞ্জের কাইসার হামিদ ও রোকেয়া আক্তার দম্পতি। বিয়ের তিন দশক পর, জীবনের এক বিশেষ অধ্যায়ে এসে একসঙ্গে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই সাংবাদিক দম্পতি।
৫১ বছর বয়সী কাইসার হামিদ এবং ৪৪ বছর বয়সী রোকেয়া আক্তার এবার নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.১১ অর্জন করেছেন। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ফলাফল প্রকাশের পর পরিবারের মধ্যে আনন্দ-উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: ৪০ কেজি গাঁজাসহ বরখাস্ত পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার
এই দম্পতির সংসার জীবনের শুরু ১৯৯৪ সালের ১৬ মার্চ। বিয়ের পরপরই সংসার ও সন্তানদের নিয়েই ছিল ব্যস্ততা। একে একে পাঁচ সন্তানের জনক-জননী হন তারা। সময়ের অভাব, দায়িত্বের ভার আর সমাজের নানা চাপে উচ্চশিক্ষা অসমাপ্তই রয়ে গিয়েছিল। তবে ইচ্ছের কাছে বয়স হার মানে—এই বাস্তবতা সামনে এনে তারা আবার বই-খাতা হাতে তুলে নেন।
দুই জনই পেশায় সাংবাদিক—কাইসার হামিদ দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার কুলিয়ারচর প্রতিনিধি এবং রোকেয়া আক্তার দৈনিক বুলেটিন পত্রিকায় কাজ করেন।
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে যৌথ টহল, নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ ও সেনাবাহিনী একসাথে মাঠে
কাইসার হামিদ বলেন, “৩০ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছি। কাজের স্বীকৃতি পেয়েছি, মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছি। কিন্তু ভিতরে একটা খচখচে কষ্ট ছিল—এসএসসি পাস করিনি। অনেকে খোঁচা দিত, প্রশ্ন করত—এসএসসি না পাস করে সাংবাদিকতা করছেন কীভাবে? আমরা দু’জনেই সেই অপূর্ণতা বুকে নিয়ে কাটিয়েছি। এবার আর থামিনি।”
রোকেয়া আক্তার জানান, “অল্প বয়সে বিয়ে, সন্তান জন্ম—এসবের কারণে নিজের পড়ালেখা অসমাপ্ত থেকে যায়। অনেক বছর সেই কষ্ট বুকের মধ্যে ছিল। অবশেষে আমরা দু’জন সাহস করে পরীক্ষায় বসি। এখন ফলাফল পেয়ে মনে হচ্ছে—একটা পাহাড় যেন সরে গেছে বুক থেকে।”
এই দম্পতির পাঁচ সন্তানের সবাই পড়াশোনায় নিয়োজিত। বড় মেয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন, দ্বিতীয় মেয়ে অনার্স শেষ বর্ষে, তৃতীয় মেয়ে নার্সিংয়ে, আর দুই ছেলে যথাক্রমে নবম ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে।
মেয়ে জেসমিন সুলতানা বলেন, “মা-বাবা এসএসসি পাস না—এটা প্রকাশ করতে সংকোচ হতো। কিন্তু এখন আমরা গর্বিত। তাদের এই অর্জন আমাদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা।”