ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা: সময়মতো সচেতনতা জীবন বাঁচাতে পারে

Sanchoy Biswas
ডা. ফেরদৌসী মমতা
প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ন, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ৭:০৬ অপরাহ্ন, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
ডা. ফেরদৌসী মমতা । ছবিঃ সংগৃহীত
ডা. ফেরদৌসী মমতা । ছবিঃ সংগৃহীত

গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই সময়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, যা মা ও অনাগত সন্তানের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা বলতে এমন অবস্থা বোঝানো হয় যেখানে মা বা শিশুর স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা ও সতর্কতা গ্রহণের মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থার কারণ বিভিন্ন হতে পারে। মায়ের বয়স যদি ১৮ বছরের কম বা ৩৫ বছরের বেশি হয়, তবে জটিলতার সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া পূর্বের গর্ভাবস্থায় জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, থাইরয়েড সমস্যা, কিডনি রোগ, অথবা সংক্রমণ থাকলেও গর্ভাবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কখনো কখনো গর্ভধারণের সময় অতিরিক্ত ওজন বা অতিরিক্ত কম ওজনও ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন: গণ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে হতাশার মুখোমুখি

গর্ভাবস্থার সময় কিছু লক্ষণ বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন নির্দেশ করে। যেমন: অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, তীব্র পেটব্যথা, শিশুর নড়াচড়ায় অস্বাভাবিকতা, দৃষ্টিতে ঝাপসা দেখা, হাত-পা অতিরিক্ত ফুলে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষ করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা মোকাবিলায় প্রথম পদক্ষেপ হলো নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা। গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই নির্ধারিত সময় অন্তর চেকআপ করানো উচিত। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। পুষ্টিকর খাদ্য, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, হালকা ব্যায়াম ও মানসিক চাপ কমানো গর্ভাবস্থাকে সুস্থ রাখতে সহায়ক। কোনো ধরণের ওষুধ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীর: আলাদা পরিচয় থেকে জাতীয় মূলধারায়

সঠিক পরিকল্পনা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতাই ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থাকে নিরাপদ গর্ভাবস্থায় রূপান্তরিত করতে পারে। পরিবারের সমর্থন, সঠিক চিকিৎসাসেবা এবং সময়মতো পদক্ষেপ একটি সুস্থ সন্তান জন্মদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি গর্ভাবস্থাই আলাদা। তাই গর্ভাবস্থার যেকোনো সমস্যা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করাই সবচেয়ে ভালো পথ।

সন্তানের আগমনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, মা ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হওয়া উচিত সকলের প্রথম অগ্রাধিকার। সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থাও হতে পারে সুন্দর ও নিরাপদ।

লেখক-

ডা. ফেরদৌসী মমতা 

রেজিস্ট্রার- স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগ, ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা