নওগাঁর কিছু প্রবাদ

বাংলা প্রবাদ এদেশের অমূল্য সম্পদ। বাঙালির রয়েছে হাজার বছরের সংস্কৃতি। বাঙালীর সামগ্রিক জীবনাচরণে প্রবাদ একটি সমৃদ্ধ ধারা। এর মাধ্যমে বাঙালির জীবন, ধর্ম, সংস্কৃতি, আচার, বিশ্বাস ও রসবোধ ফুটে উঠেছে।
নওগাঁ শব্দর উৎপত্তি হয়েছে ‘নও’ (নতুন) ও ‘গাঁ’ (গ্রাম) শব্দ দু’টি হতে। রাজশাহী বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল নওগাঁ ভৌগোলিকভাবে বৃহত্তর বরেন্দ্র ভূমির অংশ। এখানে নওগাঁর কিছু প্রবাদ পড়ে নেওয়া যাক-
আরও পড়ুন: কবি এনামূল হক পলাশ, নিমগ্ন এক কাব্যসাধক
* ছুঁচতে যাঁই ল্যগ ভাঙ্গে,
দুপুর কালে ভিখ মাঙ্গে!
আরও পড়ুন: শেষ হলো বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা
- সামান্য কাজই যার দ্বারা ঠিকঠাক হয় না, ভিক্ষা করা ছাড়া জোয়ান কালেও তার আর গতি থাকে না!
* ক্ষেত তুষ্ট মইয়ে, খাদ্যি তুষ্ট দইয়ে।
- চাষের পর ক্ষেতে মই দিলে তবে চাষ সম্পন্ন হয়, যেমন খাবার পর দই দিয়ে সুসম্পন্ন করা হয় ভোজন।
* ক্ষ্যাতের ঢ্যাল ক্ষ্যাততই ভাঙা লাগে! ( ধামইর হাট)
- যেখানকার কাজ/ সমস্যা সেখানেই সমাধা করতে হয়।
* খড়ম পায়ি, চিরল দাঁতি, মটুক মাথার চুল,
সেই কন্যা ডুবাই জাতির কূল!
- নারীর বিশেষ বিশেষ অঙ্গ বৈশিষ্ট্যকে অশুভ বিবেচনা করা হয়।
* খলের অভাব নাই কো ছলের।
- যে চতুর ও দুষ্ট প্রকৃতির, সে নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে নানান মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে।
* খাওয়ার আগে মুতে
গতর না তার জুতে!
- খেতে বসার আগে প্রস্রাব করা স্বাস্থ্যহানিকর।
* খাওয়ার আগে, বিচারের পরে।
খাওয়ার পরেই হাগে, গতর না তার লাগে।
- খেয়ে উঠেই পায়খানা করতে বসা স্বাস্থ্যহানিকর।
* খাওয়ার সোময় শোতার চিন্তা।
- একটা কাজ শেষ না হতেই আরেকটি কাজের ফিকির করা।
* খাজনার চায়ে বাজনা বেশি!
- আয়ের চাইতে ব্যয় বা আড়ম্বর বেশি!
* খাবা জানলে চাউলই চিরা,
বসপ্যা জানলে মাটিই ফিড়া!
- অভ্যাস বড় জিনিস, যেমন অ ভ্যাস করবে, তেমনই কাজ হবে
* খাটার মজা তলে আছে।
- কোন কাজে একেবারে শেষে প্রাপ্তিযোগ থাকলে বলা হয় এ প্রবাদ
*খাবার আছে, অ্যানব্যার নাই,
বুড়া মরলে,ক্যানব্যার নাই!
- বুড়ো বয়সে জীবনের অন্তিম সময়ের কথা বলা হয়েছে!
*খাবি তে খ্যাস না, না খাবি তে খা!
- মিতাহারই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, মিতাহারিরা সুস্বাস্থ্যের কারণ বেশি দিন বাঁচে এবং,বেশি,দিন ধরে খাবার গ্রহণ করতে পারে।
* খালি পান স্বাদ লাগে না, স্বাদ লাগে চুনে,
রূপ দেখে মন ভোলে,না, মন ভরে তার গুণে!
- রূপ যথেষ্ট নয়, তার গুণই আসল।
* খায়, খিলায়, আল্লায় মিলায়! ( ধামইরহাট)
- যে অাশপাশের মানুষের খোঁজ নিয়ে একলা না খেয়ে সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে খায়, আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন।
* খায়দায় জব্বারে, মোটা হয় শিকদারে।
- কেউ আয়োজন করেও পায় না, আবার কেউ এমনিতেই পেয়ে যায়!
* খায়দায় ললি চোষে, শরিল হয় না আক্কেল দোষে!
- খাবার গ্রহণের পরও অতিরিক্ত যে খেতে চায়, তার স্বাস্থ্য ঠিক থাকে না।
* খ্যায়্যা উটাই হাগে, কোন কাজে,না লাগে!
- খাওয়ার সাথে সাথে পায়খানায় বসা স্বাস্হ্য হানিকর!
* খ্যায়্যাদ্যায়্যা ভুরত লাত্তি,
যা ভুর তুই ইতিউতি।
- স্বার্থ হাসিলের পর অবজ্ঞা করা।
* খেয়ে পরে টিকলে ট্যাকা,
মরেবেঁচে টিকলে ব্যাটা।
- সব খরচের পর যা থাকে, সেটি সঞ্চয় ; আর সন্তানের মধ্যে রোগেশোকে মরার পর যে বাঁচে, সে ছেলে কিংবা মেয়ে হোক, সেটিই ছেলের মত কাজে আসে।
* থ্যায়্যা হাগে, শুয়্যা জাগে, তার গতি কভু না লাগে!
- খাদ্য গ্রহণের পরপরই পায়খানায় যাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়, ঘুমানোর জন্য বিছানায় যেয়ে ঘুমহীন রাত পার করাও স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর!
* খুঁটি গ্যাঁড়ব্যা পারে না, ম্যাট্যা গ্যাঁড়ব্যা বায়না ল্যায়!
- সামান্য কাজের মুরদ নাই, বিশাল কাজের পরিকল্পনা করা।
* খুঁকড়া গাও ঘাও করা!
- নাই জিনিস বলে বলে আমলে আনা বা ইচ্ছা করে বিপদ ডেকে আনা!
* খাবা দিলে শুবা চায়!
- মানুষের স্বভাব হল একটু সুবিধা দিলে আরেকটুর আবদার করা।
* খোজার গপ্প বোজা বোজা!
- অকর্মার কাজের চাইতে গল্পই বেশি!
উৎস: নওগাঁর লোকপ্রবাদ। সংগ্রহ ও সম্পাদনা: কাজী রাহাত। প্রকাশক: বাঙলায়ন