চেয়ারম্যান অঙ্গীকার না রাখায় আবার উত্তপ্ত হচ্ছে

বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলায় এনবিয়ারের ৮ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরখাস্ত

Sanchoy Biswas
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ৪:৪৩ অপরাহ্ন, ১৫ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, ১৫ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বদলি আদেশ অবজ্ঞা করে প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর আট কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) জনস্বার্থে এ সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন কর অঞ্চল-২ এর বিভাগীয় প্রতিনিধি (যুগ্ম কর কমিশনার) মাসুমা খাতুন, কর অঞ্চল-১৫ এর যুগ্ম কর কমিশনার মুরাদ আহমেদ, কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দিন খান, নোয়াখালী কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, কক্সবাজার কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মো. আশরাফুল আলম প্রধান, খুলনা কর অঞ্চলের উপ কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম, রংপুর কর অঞ্চলের উপ কর কমিশনার মোসা. নুশরাত জাহান শমী, কুমিল্লা কর অঞ্চলের উপ কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিল

আরও পড়ুন: সরকারি কর্মচারীদের বেতন সমন্বয়ে জাতীয় বেতন কমিশনের প্রথম সভা আজ

এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনগুলোতে বলা হয়, ২২ জুন জারিকৃত বদলি আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। এতে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯ (১) ধারা অনুসারে, তাদেরকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন তারা বিধি মোতাবেক খোরপোশ ভাতা পাবেন।

আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী প্রধানের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই: আইএসপিআর

উল্লেখ্য, এর আগে ২৪ জুন আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে দুই কর্মকর্তার বদলি আদেশ ‘প্রতিহিংসামূলক ও নিপীড়নমূলক’ উল্লেখ করে তা ছিঁড়ে ফেলেন এনবিআরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই এই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় এনবিআর ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, রাজস্ব বিভাগের চাকরি অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণার পর সরকার ও ব্যবসায়ী মহলের আহ্বানে এনবিআরস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান পরদিনই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈঠকে অতীত ভুলে গিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। আন্দোলনের জন্য কাউকে কোনো প্রকার পায়রানি করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা চেয়ারম্যানের কাছে ব্যক্তিগতভাবে ও দলবদ্ধভাবে গিয়েও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু এর পরেও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে অনুসন্ধান করানো হয়। বদলি করা হয় শতাধিক কর্মকর্তাকে। বাধ্যতামূলক অবসর ও বরখাস্ত করা হয় শীর্ষ ৬ কর্মকর্তাকে।

সরকারের এসব পদক্ষেপে এনবিআর কর্মকর্তাদের মাঝে আবারও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অভিযোগ করা হয়, এনবিআর চেয়ারম্যান ও তার ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে পরিস্থিতিকে উত্ত্যক্ত করে তুলছেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দুইজন সদস্য গোপনে অস্থিতিশীলতার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। দাবি আদায়ের আন্দোলনে এনবিআরের সকল পর্যায়ের কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন।

ওই দুই সদস্য চেয়ারম্যান ও তার সহযোগী ব্যাচমেট সদস্য কায়কোবাদ পক্ষকে আন্দোলনের বিরুদ্ধে দিয়েছেন। আবার গোপনে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে আন্দোলনকারীদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

চেয়ারম্যান অপসারিত হলে ওই দুই সদস্যের একজন চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। কার্যত তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধই অস্থিতিশীল করে জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে।