প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি কমলগঞ্জের ‘মাধবপুর লেক’

Any Akter
আসহাবুজ্জামান শাওন,কমলগঞ্জ( মৌলভীবাজার)প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ৪:৪১ অপরাহ্ন, ১৯ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৭:৪৭ অপরাহ্ন, ১৯ অগাস্ট ২০২৫
কমলগঞ্জের ‘মাধবপুর লেক’। ছবিঃ সংগৃহীত
কমলগঞ্জের ‘মাধবপুর লেক’। ছবিঃ সংগৃহীত

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ‘মাধবপুর লেক’ দেশি-বিদেশি পর্যটকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্থান। ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মাধবপুর চা বাগানের ১১ নম্বর সেকশনে অবস্থিত এই লেক। চা শ্রমিকরা এটিকে ‘ড্যাম’ বলে অভিহিত করেন।

চারদিকে সবুজে ঘেরা একটি লেক যার জল আকাশের ছায়ায় হয়ে যায় টলটলে স্বচ্ছ নীল। আর সেই জলে ফুটে থাকে অজস্র নীল শাপলা। এ লেকটি স্বপ্ন বা কল্পন কিংবা বিদেশেও নয়, এ লেকের অবস্থান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায়। লেকটি সবার কাছে ‘মাধবপুর লেক’ নামে পরিচিত।

আরও পড়ুন: ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের ভোগান্তি

‘মাধবপুর লেক’ দেশি-বিদেশি পর্যটকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্থান। ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মাধবপুর চা বাগানের ১১ নম্বর সেকশনে অবস্থিত এই লেক। চা শ্রমিকরা এটিকে ‘ড্যাম’ বলে অভিহিত করেন।

এ লেকের রয়েছে নিজস্ব সৌন্দর্য। যার কারণে এর আকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারেন না পর্যটকরা। চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি অপূর্ব মায়া ছড়িয়ে রেখেছে। লেকের টলটলে পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি আর জলজ পাখির কলতান পরিবেশটাকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। সেই লেকে ভেসে বেড়ায় বড় বড় কচ্ছপ আর মাছ।

আরও পড়ুন: ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে শিক্ষক ও নৈশ প্রহরীকে বিদায়

টিলার মাঝেই টলমলে জলের হ্রদ। হ্রদে ভাসছে শাপলা-শালুক। ছায়াবৃক্ষের ডালে বসে ডাকছে পাখিরা। মাধবপুর লেকের এমন সৌন্দর্যে মন হারানোর কেমন একটা ভাব যে কাউকেই পেয়ে বসবে। প্রকৃতিপ্রেমীরা এই লেকে এসে খুঁজে পান অপার শান্তি। আর মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন নিঃস্বর্গের নিস্তব্ধতা, সৌন্দর্য আর ভালোবাসা।

হ্রদের দু-পাশের টিলাগুলোতে চায়ের গাছ। চা-বাগান যেন হ্রদকে দুই পাঁজর দিয়ে আগলে রেখেছে। এটি মূলত মাধবপুর চা-বাগানেরই অংশ। চা-গাছের ফাঁকে ফাঁকে চিরল পাতার ছায়াবৃক্ষ। হ্রদের তীর ঘেঁষে চেনা-অচেনা অনেক ঝোপঝাড়। ঝোপঝাড়ে ফুটে আছে হরেক রকমের মায়া লাগা বুনো ফুল।

হ্রদের পাড়ে পাড়ে চা-গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। হ্রদের পাড় ঘেঁষে হাঁটার জন্য চা-বাগান কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছে সরু পথ। টিলার ওপর আছে তাঁবু। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্তি পেলে এখানে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। শীত মৌসুমে যেকোনো জায়গায় বসা যায়। কিন্তু বর্ষায় হয় তাঁবু, নয়তো সঙ্গের ছাতাটিই ভরসা।

টিলার ওপর থেকে যেদিকেই চোখ যায়, দেখা মেলে বনের নীল রেখা। অনেক দূরে গিয়ে নীল রেখা যেন ছুঁয়েছে আকাশের সীমা! মাধবপুর লেকে একসঙ্গে জল, পাহাড়, চা-বাগান, আর বুনো নির্জনতার আমেজ মেলে। প্রকৃতির এমন মেলবন্ধন কোথায় মেলে।

প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মাধবপুর লেকের আয়তন ৫০ একর। লেকের পাশাপাশি উঁচু উঁচু টিলা। সমতল চা বাগানে গাছের সারি। পাহাড়ি পাখির গান আর নৃত্য ছাড়াও দেখা যায় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। মাধবপুর লেক যেন প্রকৃতির নিজ হাতে তৈরি মায়াবী স্বর্গ।

শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক, শিক্ষার্থীসহ ভ্রমণপিপাসুদের ঢল নামতে শুরু করে। লেকের প্রবেশপথটি শুধু পর্যটকদের জন্য পাকা ও আকর্ষণীয় করা হয়েছে। পর্যটকরা যাতে হেঁটে লেকটি দেখতে পারেন, সে জন্য লেকের চারপাশে টিলার ওপর উঠতে সিঁড়ি করে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা লেকসিটি থেকে কমলগঞ্জে বেড়াতে যাওয়া হাসান আল মামুন বলেন, ‘এখানে এসেই প্রশান্তিতে ভরে গেল মন। লেকের শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশ, চারপাশে বড় বড় গাছ, চা বাগান সব মিলে এখানকার পরিবেশটাই অন্যরকম। এর আকর্ষণ উপেক্ষা করা কঠিন। মনটা পড়ে আছে এখানে বার বার আসতে মন চায় এই চা বাগানের লেকে। তবে এখন চলে যাচ্ছি, আবার আসবো।’

এ বিষয়ে মাধবপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক দিপন সিংহা বলেন, ‘প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের অপার লীলা নিকেতন মাধবপুর লেক দেখতে প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে অসংখ্য লোকের ঢল নামে। লেকের কাছে ন্যাশনাল টি কোম্পানির একটি চা বিক্রয় কেন্দ্রও রয়েছে।’

আসবেন কিভাবে আর থাকবেন কোথায়?

মাধবপুর লেকে যেতে হলে ট্রেন বা বাসে করে শ্রীমঙ্গল অথবা কমলগঞ্জে আসতে হবে। এখানে আন্তনগর ট্রেনের যাত্রা বিরতি আছে। তারপর কমলগঞ্জের ভানুগাছ চৌমুহনা থেকে মাধবপুর লেক। প্রাইভেট কার বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সেখানে যাওয়া যায়। রাতে থাকতে হলে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে বেশ কিছু রিসোর্ট আছে। সেখানে থাকা যাবে।