প্রধান উপদেষ্টার কাছে জাতির আর্তনাদ !

Any Akter
এম এ মতিন
প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ন, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১০:১৯ পূর্বাহ্ন, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

মাফিয়া-বড় দলদের কে কেন এত গুরুত্ব?—এক আহত দেশের পক্ষ থেকে আবেদন ! 

বাংলাদেশ আজ এক অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মান: চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সেনাবাহিনীর অবদান

একদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জন্ম নেওয়া মানুষের আকাঙ্ক্ষা—ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবিক রাষ্ট্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন।

অন্যদিকে দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক পচন, মাফিয়া সংস্কৃতি, বিদেশনির্ভর ষড়যন্ত্র, লুটপাট, নাশকতা ও অন্ধকার রাজনীতির উত্তরাধিকার।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক–মাধ্যমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে স্থগিত বার্ষিক পরীক্ষা, বিপর্যস্ত শিক্ষাপঞ্জি

এই দুই বাস্তবতার মাঝখানে আছেন আপনি—ড. মোহাম্মদ ইউনূস, এই দেশের সবচেয়ে সম্মানিত নাগরিক, আন্তর্জাতিক দিগন্তে বাংলাদেশের ‘মানবতা, ন্যায় ও সহানুভূতি’র প্রতীক।

আর এই দেশের জনতা আজ গভীর ব্যথা, ক্ষোভ ও প্রশ্ন নিয়ে আপনার দ্বারস্থ।

একটি প্রশ্ন—যা আজ প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে দহন জ্বালাচ্ছে

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,

আপনি কেন এই দলগুলোর প্রতি এত গুরুত্ব দিচ্ছেন—

যে দলগুলো এই দেশের মানুষ আজ ‘ঘৃণিত মাফিয়া-রাজনীতি’র প্রতীক হিসেবে জানে?

কেন আপনার কণ্ঠ কখনও কখনও তাদের মতো শোনায়—

যে দলগুলো জনগণের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতা করেছে,

যে দলগুলো কখনও দেশকে ভালোবাসেনি,

যে দলগুলো বিদেশের দরজায় মাথা ঠুকতেই বেশি অভ্যস্ত,

যে দলগুলো নিজের দেশের ভোটারদের চোখে চোখ রাখতে সাহস পায় না?

এ প্রশ্ন আজ শুধু রাজনৈতিক নয়—এটা এক আহত জাতির হৃদয়ের প্রশ্ন।

যে জাতি হতাশ, ক্ষতবিক্ষত, বিভ্রান্ত, অবহেলিত—তারা আপনাকে আশার শেষ আলো হিসেবে দেখছে।

কিন্তু সেই আলো যদি কখনও অদৃশ্য হয়ে যায়?

যদি সেই আলোতে মিশে যায় বিএনপির অন্ধকার?

যদি ন্যায়ের কণ্ঠে ভর করে মাফিয়াদের দাবি ঢুকে পড়ে?

তাহলে জনগণ প্রশ্ন তো করবেই,

আর সেই প্রশ্ন করতেই আমরা এই প্রবন্ধ লিখছি।

বড়দল কেন ঘৃণিত?—আবেগ নয়, ইতিহাসই সাক্ষী

এদেশে রাজনৈতিক মতভেদ নতুন নয়; কিন্তু দেশবিরোধিতা, মাফিয়া-সংস্কৃতি, বিদেশনির্ভর ষড়যন্ত্র—এসব বিএনপিকে এক ভিন্ন স্তরে নিয়ে গেছে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, স্যার—

১. এইসব বড়দলগুলোর  নাসকতাবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল।

এদের কারো আমলে জন্মেছিল বাংলা ভাই, সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হত্যাযজ্ঞ।

২. এদের রাজনীতি শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিশোধ, নাশকতা ও ধ্বংসের রাজনীতি।

যখনই ক্ষমতা পায়, প্রতিহিংসা;

যখন ক্ষমতায় নেই, তখন সন্ত্রাস ও নাশকতা।

৩. বিদেশনির্ভরতা এদের মৌলিক রাজনৈতিক চরিত্র।

জনগণের ঘরে না গিয়ে বিদেশি দূতাবাসের দোরগোড়ায় দাঁড়ানোই তাদের মূল কৌশল।

৪. দুর্নীতি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজী —এই দলগুলোর শিরায় শিরায় প্রবাহিত।

এদের পুত্র কন‍্যা আত্নীয় স্বজন সবার নামই দুর্নীতির ইতিহাসে লেখা আছে।

৫. জনগণের আস্থা এদের নেইঃ-

নেই নীতির ভিত্তি, নেই আদর্শের মেরুদণ্ড।

যে সব দলে জনগণ বিশ্বাস হারায়, সেই সব দল দেশের শত্রুতে পরিণত হয়।

তাহলে কেন, স্যার—

আপনি তাদের প্রতি এত বিবেচনা, এত সহানুভূতি দেখাচ্ছেন?

আপনার কাছে জাতির প্রত্যাশা অন্যরকম—অন্য মাত্রারঃ-

আপনি কেবল একজন উপদেষ্টা নন।

আপনি একটি জাতির নৈতিক ভিত্তি।

একটি অন্যায়-সংকীর্ণ রাজনীতিতে ক্লান্ত দেশের আশার বাতিঘর।

দেশ-বিদেশে আপনি মানবতা ও ন্যায়বোধের প্রতীক।

তাই আমরা এই শক্ত প্রশ্ন করার অধিকার রাখি—

আপনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি কথার প্রতিটি ছায়া-রেখাও জাতিকে প্রভাবিত করে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে—

আপনার অনেক বক্তব্যই আপনি তাদের অযথা গুরুত্ব দিচ্ছে।

তাদের দাবি, তাদের বক্তব্য, তাদের বিদেশ-নির্ভর চাপ—

এসবকে কি সত্যি সরকার-পরিচালনার মানদণ্ড হতে পারে?

না, স্যার।

এই জাতি কখনও মাফিয়াদের রাজনৈতিক বক্তব্যকে গ্রহণ করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।

আপনাকে বলতেই হয়—বিএনপি জনগণ নয়, দেশের প্রতিনিধিও নয়ঃ-

যদি তারা জনগণের অংশই হতো—

তাহলে তারা কেন জনসম্পৃক্ত আন্দোলন করতে পারে না?

কেন তাদের সমাবেশে বিদেশি অর্থ লাগে, নিজেদের মানুষের ভালোবাসা লাগে না?

কেন তারা বারবার দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়?

কেন তারা গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু গণতন্ত্র মানতে অস্বীকৃতি জানায়?

সত্য হলো—

বড় দল দাবি দলগুলো জনগণের নয়;নিজেদের স্বার্থের রাজনৈতিক কারখানা।

আর সেই কারখানাকে বৈধতা দেওয়া মানে

জনগণের রক্ত, সংগ্রাম, ইতিহাস, স্বাধীনতার আত্মাকে অবমাননা করা।

মহামান্য প্রধান উপদেষ্টাঃ- 

আপনাকে আমরা বলছি-আপনি তাদের ফাঁদে পড়বেন না!

বড় দলগুলো আজ দেশের নয়, বিদেশী শক্তির উপর ভরসা করে রাজনীতি করছে।

তাদের চরিত্র আজও লোভী, অবিশ্বাসী, বিভ্রান্তিকর ও দেশবিরোধী।

তারা গণতন্ত্রের নামে চাঁদাবাজি, রাষ্ট্রধ্বংস ও বিদেশি প্রভুর সেবা করে।

আপনি তাদের গুরুত্ব দিলেই তারা শক্তি পায়।

তাদের বিষাক্ত বক্তব্য বৈধতা পায়।

আপনার নৈতিকতার সুনাম তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।

এটা জাতির জন্য ক্ষতি।

এটা আপনার ওপর মানুষের আস্থার জন্য বিপজ্জনক।

এটা দেশের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক।

এই দেশের মানুষ আপনাকে অন্য চরিত্রে দেখতে চাযঃ-

একজন কঠোর, সাহসী, আপসহীন ন্যায়পরায়ণ নেতা হিসেবে!

আপনার প্রতি মানুষের আস্থা অসীম।

কিন্তু এই আস্থার বিনিময়ে তারা শুধু একটাই জিনিস চায়—

আপনি যেন শত্রু-মিত্র চিনে নেন,

জনগণ ও দেশের শত্রুকে কখনও ক্ষমা বা গুরুত্ব না দেন।

আপনি যদি শক্ত অবস্থান নেন—

দেশের মানুষ আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাবে।

আপনি যদি আপসহীন থাকেন—

দেশ আপনার দিকে তাকিয়ে বলবে: “এটাই আমাদের অভিভাবক!”

কিন্তু আপনি যদি এই সকল জনবিচ্ছিন্ন দলকে অযথা গুরুত্ব দেন—

তাহলে মানুষের হৃদয়ে প্রশ্ন উঠবে:

“এ কোন পথে যাচ্ছে দেশ?

এ কোন বিভ্রান্তিতে চলেছেন প্রধান উপদেষ্টা?”

মহামান্য প্রধান উপদেষ্টাঃ-

আজ আপনাকে জাতির পক্ষ থেকে সরাসরি আবেদন জানানো হচ্ছে!

আপনি কেন সে সব দলের উপর ভরসা করতে চান,

সেই জনবিচ্ছিন্ন দলের দাবি শুনে বিবেচনা করেন,

যাদের বক্তব্য কখনও কখনও আপনার সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হয়—সেই সব দলের চরিত্র, অতীত, আচরণ, মানসিকতা ও উদ্দেশ্য কি আপনি ভুলে গেছেন?

এই দেশের রক্তাক্ত ইতিহাস সাক্ষী—

বড় দল নামধারী সংগঠনগুলো রাজনীতির ছদ্মবেশে একটি সুসংগঠিত মাফিয়া-কারখানা।

তাদের লক্ষ্য দেশ না, জনগণ না—তাদের লক্ষ্য কেবল ক্ষমতা, প্রতিশোধ, নিজেদের আখের গোছানো,বিদেশের অনুগ্রহ ও দুর্নীতি।

আপনি যদি আজ কঠিন সিদ্ধান্ত না নেন—

জেনে রাখুন, স্যার—এই সব মাফিয়া-দলগলো আপনার সদিচ্ছাকেও ব্যবহার করবে তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য।

জনগণ সেটি কখনও ক্ষমা করবে না।মনে রাখবেন এই এদেশের জনগণ সঠিক পথে পরিচালিত হতে চায় এবং আপনার সাথে আছে! 

দেশের এই অসহায় বাস্তবতা আপনাকে ডাকছেঃ-

বাংলাদেশ আজ নৈতিক নেতৃত্বের সঙ্কটে।

রাজনীতিতে সত্যের মৃত্যু হয়েছে, ন্যায়বোধ লাঞ্ছিত, এবং জনগণের কণ্ঠ চিরদিনের মতো দমন করা হয়েছে।

এই মুহূর্তে আপনার মতো এক সদাচারী, মানবিক, ন্যায়নির্ভর নেতা না থাকলে

দেশ আবার অন্ধকারে, বিশৃঙ্খলায়, মাফিয়া-শাসনে ডুবে যাবে।

তাই—

আপনাকে আমরা বলছি:-

বড় দল দাবী করা এই ধরনের ঘৃণিত, বিদেশনির্ভর, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিগ্রস্ত দলকে বরাবরই দূরে রাখুন।**

তাদের দাবি, তাদের চাপ, তাদের প্ররোচনাকে রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে রাখুন।

জনগণ যা চায়, দেশ যা চায়—সেটাই হোক আপনার নির্দেশনা।

শেষ কথাঃ-

এই দেশ আপনার কাছে প্রত্যাশার শেষ আশ্রয়! 

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,

আমরা আপনাকে আঘাত করতে চাই না—

বরং আপনাকে ভালোবাসি, সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি।

কারণ এই দেশের মানুষ আপনার মানবিকতা, সততা, ন্যায়বোধ ও প্রজ্ঞায় বিশ্বাস রাখে।

আর সেই বিশ্বাস থেকেই এই আর্তনাদ:

স্যার, দয়া করে বড দল নামক বিষাক্ত রাজনৈতিক চক্রান্ত, বিদেশনির্ভর ষড়যন্ত্র ও মাফিয়া-মানসিকতার কাছে নতি স্বীকার করবেন না।

আপনি দেশের ভবিষ্যৎ—

তারা কেবল অতীতের অন্ধকার।

আপনিই আমাদের রক্ষা করুন,

দেশকে নতুন পথে চলতে সাহায্য করুন।

আপনিই হোন এই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সাহসী, ন্যায়নিষ্ঠ এবং আপসহীন অভিভাবক।