এসএসসি-এইচএসসির খাতা টিকটকার দিয়ে মূল্যায়ন! ৮ পরীক্ষককে শোকজ, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

Any Akter
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন, ২১ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, ২১ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, তারা খাতার ওএমআর অংশ বা ‘বৃত্ত’ পূরণের কাজ নিজেদের স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন এমনকি টিকটকার শিক্ষার্থীদের দিয়ে করিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া প্রায় ১০টি ভিডিও ও স্থিরচিত্রে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ মেলে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।

প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড আটজন পরীক্ষককে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যমুনা সেতু অবরোধ

অভিযুক্ত পরীক্ষকরা হলেন, মুরছানা আক্তার (রোকেয়া আহসান কলেজ, এইচএসসি ইংরেজি ২য় পত্র), মো. রাকিবুল হাসান (আব্দুল জব্বার আনসার ভিডিপি কলেজ, এইচএসসি বাংলা ২য় পত্র), মো. জাকির হোসাইন (হাজি ইউনুছ আলী কলেজ, এইচএসসি বাংলা ২য় পত্র), মধুছন্দা লিপি (বারৈচা কলেজ, এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র), মহসীন আলামীন (সেন্ট যোসেফস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এসএসসি উচ্চতর গণিত), মো. সাখাওয়াত হোসাইন আকন (যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এসএসসি ইসলাম শিক্ষা), আবু বকর সিদ্দিক (মুন্সীনগর উচ্চ বিদ্যালয়, এসএসসি গণিত), সমীরময় মন্ডল (রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, এসএসসি গণিত)।

এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন ৬ লাখ ৬৬০ শিক্ষার্থী—যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি। অনেকে ১১ বিষয়ে এ+ পেলেও একটি বিষয়ে ফেল করেছেন—যা ফলের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র নারী ভিপি মাহফুজা খানমের মৃত্যু

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি, খাতায় নম্বর ভুলভাবে যোগ করা হয়েছে বা বৃত্ত ভুল ভরাট হয়েছে, এবং অনেক ক্ষেত্রে খাতা মূল্যায়ন করেছেন পরীক্ষকের পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই।

এ নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সামনে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার বিক্ষোভ করে। শিক্ষার্থীরা খাতা দেখিয়ে বলেছে, এসব খাতা দিয়ে রিলস বানিয়ে তা টিকটকে আপলোড করা হয়েছে।

ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।

চলতি বছর রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছে। ঢাকা বোর্ডে আবেদন জমা পড়েছে ৯২ হাজার ৮৬৩ জন শিক্ষার্থীর খাতার জন্য। সব মিলিয়ে দেশের সব বোর্ডে মোট আবেদন হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৬৬৪টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন গণিত বিষয়ে (৪২,৯৩৬টি), এরপর রয়েছে ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান ও বাংলা।

ঢাকা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৯ আগস্ট এর মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হবে এবং ফল পরিবর্তন হলে তা এসএমএস ও বোর্ডের ওয়েবসাইটে জানানো হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দারের সই করা চিঠিতে বলা হয়, পরীক্ষার উত্তরপত্র একটি গোপনীয় দলিল। অন্য কাউকে দিয়ে বৃত্ত ভরাট করানো বা মূল্যায়ন করানো একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এতে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেগুলোতে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা খাতা কাটছে, খাতার পাশে বসে খাবার খাচ্ছে এবং তাচ্ছিল্য ভঙ্গিতে ‘বোর্ডের খাতা আমাদের হাতে’ বলে মন্তব্য করছে।

এই ঘটনাগুলো শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে অভিমত অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের।