দেশবাসীকে পরিস্থিতি অবহিত করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা

Sadek Ali
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:১৫ পূর্বাহ্ন, ২৩ মে ২০২৫ | আপডেট: ৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, ২৩ মে ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশেষ করে বিভিন্ন মহলের দাবি আদায় জিম্মি দশা ও রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য অসহযোগিতায় বিব্রত কর অবস্থায় পড়েন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন। এই অস্বস্তিকর অবস্থার বিবরণ দেশবাসীকে অবহিত করে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে পদত্যাগ করার জন্য অন্যদের সাথে আলোচনাও করেছিলেন। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে শাহবাগ সচিবালয় কাকরাইল প্রেসক্লাব ও যমুনামুখী মানুষের দাবি আদায়ের আন্দোলনের নগরবাসীর কার্যত জিম্মি হয়ে পড়ে। সরকারের স্বাভাবিক কাজকর্ম অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।  বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সহকর্মীদের সাথে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। 

আরও পড়ুন: ১৫ আগস্ট ঘিরে আ. লীগ-ছাত্রলীগকে সড়কে নামতে দেওয়া হবে না: ডিএমপি কমিশনার

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ইচ্ছার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পরই রাজনৈতিক দলগুলা তৎপর হয়ে ওঠে।  সন্ধ্যায় প্রথমেই যান এনসিপির সভাপতি নাহিদ ইসলাম। এর পরই রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে প্রধান উপদেষ্টা কে সহায়তা করার আশ্বাস দেন।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যান। সেখান থেকে বেরিয়ে নাহিদ ইসলাম রাতে বিবিসি বাংলাকে বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন।’

আরও পড়ুন: সরকারি প্রশিক্ষণে বাড়লো ভাতা ও সম্মানী

এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে দীর্ঘক্ষণ উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র বলেন, ঢাকায় প্রতিদিন সড়ক আটকে আন্দোলন, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোদের মধ্যে ঐকমত্য না হওয়া, রাষ্ট্রীয় কাজে নানা পক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। আলোচনার এক পর্যায়ে কাজ করতে না পারার বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, সংস্কারের বিষয়েও এখনো তেমন কিছু হলো না। তাহলে তিনি কেন থাকবেন এমন প্রশ্নও আলোচনায় আনেন তিনি।

উপদেষ্টা পরিষদের ওই আলোচনায় উপস্থিত থাকা সূত্রগুলো আরও জানায়, একপর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের বলেন, তাঁরা যেন আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। কারণ, তিনি চলে যেতে চান। বর্তমানে যে পরিস্থিতি আছে তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে ব্যালট ছিনতাইয়ে মতো ঘটনা ঘটলে পুলিশ–প্রশাসন তা ঠেকাতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। অন্যদিকে ভালো নির্বাচন করতে না পারলে মানুষ তাঁকে দায়ী করবে বলেও আলোচনায় উল্লেখ করেন তিনি।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিভিন্ন পক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে তুলে ধরার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। একপর্যায়ে তাঁর ভাষণের একটি খসড়াও তৈরি করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ভাষণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরে আবার আলোচনা হতে পারে।

বিবিসি জানায়

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন এমন খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন মি. ইসলাম।

বিবিসি বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মি. ইসলাম ।

তিনি বলেন, “দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারেরতো পদত্যাগের একটা খবর আমরা আজকে সকাল থেকে শুনছি। তো ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সাথে দেখা করতে গেছিলাম।”

প্রধান উপদেষ্টা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন মি. ইসলাম।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “ স্যার বলছেন আমি যদি কাজ করতে না পারি... যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলা একটা গণ অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার.....। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে।”

“আমিতো এভাবে কাজ করতে পারবো না। তো রাজনৈতিক দলগুলা তোমরা সবাই একটা জায়গায়, কমন জায়গায় না পৌঁছাতে পারো “ বলেন মি. ইসলাম।

প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত না নিতে আহ্বান জানিয়েছেন জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন গঠিত দলটির নেতা মি. ইসলাম।মি. ইসলাম প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, “ আমাদের গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও দেশের ভবিষ্যৎ সবকিছু মিলিয়ে উনি যাতে শক্ত থাকেন। এবং সবগুলা দলকে নিয়ে যাতে ঐক্যের জায়গায় থাকেন। সবাই তার সাথে আশা করি কো-অপারেট করবেন। “

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন বলে জানান মি. ইসলাম।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “হ্যাঁ যদি কাজ করতে না পারেন, থাকবেন, থেকে কী লাভ।”

এই আলোচনার পরে প্রধান উপদেষ্টা মি. ইসলামকে জানিয়েছেন “পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন” তিনি।

“উনি বলছেন উনি এ বিষয়ে ভাবতেছেন। ওনার কাছে মনে হয়েছে পরিস্থিতি এরকম যে তিনি কাজ করতে পারবেন না।

পদত্যাগের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার এখনকার মনোভাবের বিষয়ে মি. ইসলাম বলেন, “এখন ওনি যদি রাজনৈতিক দল তার পদত্যাগ চায়.... সেই আস্থার জায়গা, আশ্বাসের জায়গা না পাইলে উনি থাকবেন কেন?”