দুদকের মামলা থেকে বাঁচতে ধর্মীয় লেবাসে তদবির
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের অবৈধ টাকা অগাস্টিন হেফাজতে

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিপুল পরিমাণ অবৈধ উপার্জিত সম্পদ তারই খুব ঘনিষ্ঠ ধর্মীয় নেতা অগাস্টিনের হেফাজতে থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরিবারের দুর্নীতি তদন্তে গোয়েন্দারা অগাস্টিনের সম্পদে কামাল পরিবারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব থাকাকালীন মন্ত্রীকে ব্যবহার করে অগাস্টিন সুযোগ সুবিধা নিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছে। সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের পক্ষে অগাস্টিন খুবই বেপরোয়া ছিল। মন্ত্রীর নির্দেশে এলাকায় ধর্মীয়সহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে তদবীর বাণিজ্য করে গড়ে তোলে বিপুল এই অর্থবিত্ত। অগাস্টিনের অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করলে ধর্মীয় প্রভাবশালীরা সরকারের মহলে তদবির করলে থেমে যায়। একই সাথে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের পরিবারের দুর্নীতি তদন্তে উঠে এসে অগাস্টিনের সম্পদ কানেকশন।
আওয়ামী লীগের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামালের আশির্বাদে অল্প কয়দিনের মধ্যেই হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন সমবায় মাফিয়া আগস্টিন পিউরেফিকেশন। ধর্মীয় নেতার ছদ্মবেশে জড়িয়েছে নানা অপরাধে। মূলত কোন ব্যবসা বা চাকুরি না থাকা সত্ত্বেও দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: (এমসিসিএইচএসএল) এর টাকা লুটে অবৈধ পথে আগস্টিন পিউরিফিকেশন এখন হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি গা ঢাকা দিলেও আবার ধর্মীয় নেতাদের তদবীরে সরকারের একটি গোষ্ঠিকে ম্যানেজ করে ফিরে এসেছে।
আরও পড়ুন: ভারতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশের
তার অবৈধ উপার্জিত অর্থে অনেকেই হতবাক। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের প্রধান সহযোগী হিসেবে তাকে মন্ত্রীর ক্যাশিয়ার হিসেবে জানতো। কামালের অবৈধ উপর্জিত অনেক টাকা তার কাছে। কলকাতার বাড়ি ভাড়া যায় তার কাছ থেকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যে বাড়ি, গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধিন পাগাড়ে বিলাসবহুল বাড়ি, টঙ্গীস্থ জীনুর মার্কেটে একটি ৫তলা ও একটি ৭ তালা বিল্ডিং, তেজগাঁও হুন্ডা গলিতে ২টি ফ্লাট, মনিপুরিপাড়ায় ১টি ফ্লাট, উওরা ১৬ নং সেক্টরে ৫ কাঠা প্লট , এশিয়ান টাউনে ২টি প্লট, পাগাড়ে ১ বিঘার প্লট, পাগাড়ে ১৫ কাঠার উপর বাড়ী, শেরপুর বার মারিতে আড়াই বিঘা প্লট, তুমিলিয়ায় ২০ বিঘা প্লট, বাটারা ৪ নং সেক্টরে ২টি প্লট, ২য় স্ত্রী লতার নামে উওরার ৯ নং সেক্টরে ২টি প্লট, মাউসাইদে ২ বিঘা প্লট এবং ভাদুনে ১টি প্লট সংশ্লিষ্ট মহলের মতে দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এ লুটপাট করেই তিনি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি আগস্টিনের দুই ছেলে, ভাই সেবাস্টিনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সমবায়ের সম্পদ লুটপাট করে প্রচুর অর্থ বিত্তের মালিক। সম্প্রতি আগস্টিন পিউরিফিকেশন এর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করেছেন সোসাইটির সদস্য অমূল্য লরেন্স পেরেরা।
অন্যদিকে, দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এ অবৈধভাবে চতুর্থ মেয়াদে সেক্রেটারির পদ দখলে রাখা ইমানুয়েল বাপ্পি মন্ডল, অবৈধভাবে চতুর্থ মেয়াদে ট্রেজারার পদ দখলে রাখা বাদল বি. সিমস্যাং, অবৈধভাবে চতুর্থ মেয়াদে পরিচালক পদ দখলে রাখা কল্পনা ফলিয়া, পরিচালক ডেভিড প্রবিন রোজারিও এবং সিনিয়র ম্যানেজার (ল্যান্ড) রতন আর. পেরেরা সমবায় প্রতিষ্ঠানটি লুটপাট করে অঢেল অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন।
আরও পড়ুন: চিকিৎসকদের অনুমতি পেয়ে বাসায় ফিরেছেন মির্জা ফখরুল
সূত্রমতে, আগস্টিন পিউরিফিকেশন দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এ বর্তমানে অবৈধভাবে চেয়ারম্যান পদে আছেন। কেননা, সমবায় আইন ২০০১(সংশোধিত ২০১৩) এর ১৮(৮) ধারায় বলা হয়েণে, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে একাধিক্রমে তিনটি মেয়াদ পূর্ণ করিয়াছেন এমন কোন সদস্য উক্ত মেয়াদের অব্যবহিত পরবর্তি একটি মেয়াদের নির্বাচনে প্রার্থী হইবার যোগ্য হইবেন না। অথচ সমবায়ের মাফিয়া খ্যাত দর্জি আগষ্টিন পিউরিফিকেশন দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: (এমসিসিএইচএসএল) এ অবৈধভাবে চতুর্থ মেয়াদে চেয়ারম্যানের পদ দখল করে আছেন।
এবিষয়ে সমবায় অধিদপ্তরের ২০২০-২১ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত দেখানো চেয়ারম্যান সহ ৪ জনকে অপসারনের নির্দেশনা দেয়া হয় এবং তাদের স্বাক্ষরে ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা বন্ধ করতে বলা হয়। কিন্ত দেশের সকল প্রকার আইনকে উপেক্ষা করে আগষ্টিন পিউরিফিকেশন দম্ভের সাথে চেয়ারম্যানের পদ দখল করে রেখেছেন।
সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক ও অডিট দল প্রধান মোছা: নূর-ই-জান্নাত এর নেতৃত্বে সম্পাদিত অডিট রিপোর্টের ১৫ নং পৃষ্ঠায় পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- বর্তমান কমিটির পূর্বের কমিটির মেয়াদ ২৯/১০/২০২১ পর্যন্ত বলবৎ ছিল।
কোভিড মহামারির অজুহাত দেখিয়ে ব্যববস্থাপনা কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ৪ ধারা হতে অব্যাহতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে (আদেশ নং-৪৭.৬১.০০০০.০৩২.০৬.০৮৬.১৬-৩৬৮ তারিখ ১৪/৯/২০২১)৪ ধারাা হতে অব্যাহতি পেয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ ১২০ দিন বৃদ্ধি পায়। সে মোতাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ ২৮/২/২০২২ তারিখ পর্যন্ত বহাল থাকে।
পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, ১৯/২/২০২২ তারিখের নির্বাচনে চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরফিকেশন, সেক্রেটারী ইমানুয়েল বাপ্পি মন্ডল, পরিচালক অর্থ ও প্রশাসন বাদল বি সিমস্যাং ও সদস্য কল্পনা মারিয়া ফলিয়া চতুর্থ বারের মত নির্বাচিত হয়েছেন। উক্ত চার ব্যক্তি সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ১৮(৮) ধারা এবং জারিকৃত সংশ্লিষ্ট তফসিলের নির্বাচনী জ্ঞাতব্য বিষয়ের ৬ নং শর্ত অনুযায়ী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অযোগ্য।
দ্রুত তাদের ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে অপসারণ করার লক্ষ্যে সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ধারা ২২(১) অথবা সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ এর ৩৮ ও ৩৯ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন। পরবর্তিতে উক্ত চারটি শূন্য পদে সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ধারা ২০(১) অনুসরণ করে যোগ্য সদস্যকে কো-অপ্ট করা যেতে পারে।
আবার সমিতির উপ-আইন অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব সভাপতি, সেক্রেটারি এবং ম্েেযানজারের যেকোন দুই জনের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়ে থাকে। যেহেতু সভাপতি এবং সেক্রেটারি দুই জনই সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ১৮(৮) ধারা মোতাবেক ব্যবসস্থাপনা কমিটির সদস্য হওয়ার অযোগ্য, সেহেতু তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও ব্যাংক হিসাব পরিচালনা নৈতিক ও আর্থিক বিধির পরিপন্থি।
পর্যবেক্ষণ অন্তে সুপারিশে বলা হয়, সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ১৮(৮) ধারা মোতাবেক অযোগ্য ব্যক্তিবর্গকে দ্রুত একই আইনের ধারা ২২(১) অথবা সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ এর ৩৮ ও ৩৯ বিধি মোতাবেক অপসারন করে সমবায় সমিতি আইন ২০০১(২০০২,২০১৩)এর ধারা ২০(১) অনুসরণ করে যোগ্য সদস্যকে কো-অপ্ট করার পরামর্শ দেয়া হলো। একই সাথে ব্যাংক হিসাব পরিচালনার স্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে সহ-সভাপতিকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়ার পরামর্শ দেয়া হল।
অথচ রহস্যজনক কারণে আজ পর্যন্ত দর্জি আগস্টিন পিউরিফিকেশনসহ অবৈধ চার জনকে অপসারণ করা হয়নি। অডিট রিপোর্টের সুপারিশ ও দেশের সকল আইন কানুনকে উপেক্ষা করে দম্ভের সাথে চেয়ারম্যানের পদ দখল করে অবৈধ সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন। এই অবৈধ ক্ষমতা দখলে সহযোগিতা করেছে সমবায় অধিদপ্তরের কতিপয় অবৈধ সুবিধাভোগী কর্মকর্তা।
১৯/২/২০২২ তারিখের প্রহসনের নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, সদস্য হিসেবে ছিলেন পরিদর্শক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদিন ও পরিদর্শক মো: শাকিলুজ্জামান। নেপথ্যে ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের তৎকালীন যুগ্ম নিবন্ধক রিয়াজুল কবির।
চতুর্থ মেয়াদে অবৈধভাবে আগস্টিন পিউরিফিকেশন এর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করেছেন অমূল্য লরেন্স পেরেরা। রীট পিটিশন নং-৫৫৯১/২০২৩। হাইকোর্ট এই আইন বহির্ভূত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধকের প্রতি আদেশ প্রদান করেন।
সূত্রমতে,তিনি ০৮-১২-২০০৬ হতে ০৮/১২/২০০৯ পর্যন্ত সমিতির বোর্ড ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। গত ০৬-১২-২০১২ তারিখ থেকে একটানা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। কেবল প্রথমবার নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। পরে সমবায় অধিদপ্তরের কতিপয় অবৈধ সুবিধাভোগী কর্মকর্তার সহায়তায় কায়দা কৌশল করে প্রহসনের নির্বাচন দেখিয়ে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায়’ নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জেল জুলুমের ভয় দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। এখন সমিতির সদস্যদের একটাই প্রশ্ন আগস্টিন পিউরিফিকেশন কি আইন আদালতের ঊর্ধ্বে?
গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানার পাগার গ্রামের এক কালের দর্জি ও জমির দালাল আগস্টিন পিউরিফিকেশন গত ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: (এমসিসিএইচএসএল) এর সদস্য হন। তদবিরের মাধ্যমে বাগিয়ে নিয়েছেন শ্রেষ্ঠ সমবায়ের পুরস্কার। সমবায় সমিতির টাকা ব্যয় করে সেজেছেন সমাজসেবী। দর্জি আগস্টিন অবৈধ টাকার জোরে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। আইন আদালত পর্যন্ত তোয়াক্কা করছেন না।
তিনি দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: ও দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ লি:(কালব) এ অবৈধভাবে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। সমিতিকে বানিয়েছেন নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এমসিসিএইচএসএল-এ নাই কোন জবাবদিহিতা। বোর্ড সদস্যরা তার অধীনস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীর মতো কাজ করেন।
নির্বাচিত ইন্টারনাল অডিট কমিটি আছে কিন্তু কমিটি যে নামকাওয়াস্তে রিপোর্ট প্রদান করে তাও বোর্ড সভা বা সাধারণ সভায় উপস্থাপন করা হয় না।
সমবায় অধিদপ্তরের ২০২০-২১ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে এবিষয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। ইন্টারনাল অডিট কমিটির একজন সাবেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমিটির আসলে কোন ক্ষমতা নেই। সমিতি চলে চেয়ারম্যানের ইচ্ছায়।
নামমাত্র একটা কমিটি আছে, রিপোর্টও নাম মাত্রই দেয়া হয়। এখানে আইন কানুনের বালাই নাই। চেয়ারম্যানের কথাই আইন। সমবায় অধিদপ্তরের ২০২০-২১ অর্থবছরের জোড়াতালির অডিটেও অনেক অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। মামলার পিছনে অতিরিক্ত ব্যয়, বিলের ভাউচার যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করা, একাউন্ট পেয়ি চেকে লেনদেন না করে নগদ অর্থ প্রদান, অতিরিক্ত নগদ অর্থ হাতে জমা রাখা, সরাসরি জমি না কিনে পাওয়ার অব এটর্নীর মাধ্যমে বেশি দামে জমি কেনা, উন্নয়ন কাজে দরপত্র ছাড়া ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম, বারবার বাজার দরের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ভাবে জমির ঊর্ধ্ব মুল্যায়নসহ নানা অনিয়মের সমালোচনা করা হয়েছে অডিট রিপোর্টে।
জমি সরাসরি ক্রয় না করে তার স্ত্রী, পুত্র, ভাই ও আত্মীয় স্বজনের নামে পাওয়ার অব এটর্নী নিয়ে আবার বেশি দামে সমিতির কাছে বিক্রি করেন। প্লট ফ্লাট বিক্রির ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন।
এমসিসিএইচএসএল’র সকল ঠিকাদারি কাজ নামে বেনামে তার পুত্রদ্বয়, স্ত্রী, ভাইসহ পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনরাই করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবসা বলতে এমসিসিএইচএসএল’র ঠিকাদারি। সমবায় আইন, বিধি, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস ও সমিতির উপ-আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঠিকাদারি কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।
অন্যদিকে, আগস্টিন পিউরিফিকেশন এর অবৈধভাবে চেয়ারম্যানের পদ দখলে রাখা, অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করার জন্যে সমবায় মন্ত্রণালয়, সমবায় অধিদপ্তর ও দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করেছেন অমূল্য লরেন্স পেরেরা ও রিচার্ড যেভিয়ার কল্লোল প্যারিশ। দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর সদস্য অমুল্য লরেন্স পেরেরা ও রিচার্ড যেভিয়ার কল্লোল প্যারিশ এর আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে সমবায় মন্ত্রণালয় আগষ্টিন পিউরিফিকেশন এর দুর্নীতি তদন্তের জন্যে কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছে সমবায় অধিদপ্তরকে।
সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মাফরোজা আক্তার স্বাক্ষরিত এক পত্রে (স্মারক নং- ৪৭.৬১.০০০০.০২৪.৪০.০৭০.১৮.৭৭ তারিখ-১/৩/২০২৩) এই আদেশ প্রদান করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, আগষ্টিন পিউরিফিকেশনের অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় অমুল্য লরেন্স পেরেরাসহ প্রতিবাদী সদস্যদের বেআইনিভাবে সদস্য পদ বাতিল করেছেন। এমনকি আলামত বিহীন ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় অমুল্য লরেন্সকে জেলও খাটিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক আগস্টিন পিউরিফিকেশনের অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তের জন্যে ঢাকা বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধককে নিযুক্ত করা হয়েছে।