দেশের সব উপজেলায় সাপের কামড়ের অ্যান্টিভেনম সরবরাহের নির্দেশ

Any Akter
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫৯ অপরাহ্ন, ০৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৮:৪০ অপরাহ্ন, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

সাপের কামড়ে মৃত্যুহার কমাতে দেশের সব উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। একইসঙ্গে প্রতিটি উপজেলা সদরের অন্তত দুটি ফার্মেসিতে অ্যান্টিভেনম মজুত রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

এই তথ্য উঠে এসেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে, যা উপস্থাপন করা হয় হাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। রিটের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মীর এ কে এম নুরন্নবী শনিবার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন: তফসিল ও ভোটের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান ইসির

এর আগে গত ১৭ আগস্ট হাইকোর্ট উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম সরবরাহ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছিল। সেই আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানাতে স্বাস্থ্য সচিব, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

রিটের প্রাথমিক শুনানি হয় ১৮ আগস্ট, যেখানে অংশ নেন বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মীর এ কে এম নুরন্নবী, সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট ইসমাঈল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান, তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

আরও পড়ুন: চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে খালেদা জিয়াকে: মির্জা ফখরুল

রিট আবেদনটি করেন অ্যাডভোকেট মীর এ কে এম নুরন্নবী, যেখানে সংযুক্ত ছিল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন। এসব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সাপের কামড়ে ৩৮ জনের মৃত্যু এবং ৬১০ জন দংশিত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ বছর জানুয়ারি থেকে ৪১৬ জন সাপের দংশনে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৯১টি বিষধর সাপের কামড়, ১৮টি চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপারের কামড়। এদের মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচজন চন্দ্রবোড়ার কামড়ে মারা যান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, বিষধর সাপের কামড়ের কার্যকর চিকিৎসা হলো অ্যান্টিভেনম। বাংলাদেশে এখনো অ্যান্টিভেনম তৈরি হয় না। ভারত থেকে আমদানি করা অ্যান্টিভেনম সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়। অ্যান্টিভেনম তৈরির প্রক্রিয়ায় বিষধর সাপের বিষ ঘোড়ার শরীরে প্রয়োগ করে তৈরি অ্যান্টিবডি থেকে ওষুধ তৈরি করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সাপের কামড়কে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের জাতীয় জরিপে দেখা যায়, প্রতি বছর দেশে চার লাখের বেশি মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন, এর মধ্যে প্রায় ৭,৫০০ জনের মৃত্যু হয়।

প্রধান বিষধর সাপগুলোর মধ্যে রয়েছে গোখরা, কালাচ (ক্রেইট), চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) ও সবুজ সাপ। কিছু এলাকায় সামুদ্রিক সাপের কামড়ের ঘটনাও ঘটে থাকে।

চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপটি ভাইপারিড পরিবারভুক্ত, যা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রাণঘাতী দংশনের কারণ হয়ে আসছে। ১৯২০ সাল থেকে এ সাপের কামড়ে মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া যায়। ২০১৩ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের রিপোর্ট সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমানে এ সাপের বিস্তার ২৭টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।