আইজিপির অপসারণ দাবি নিয়ে নানা আলোচনা
পিলখানায় সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের মর্মান্তিক ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলা সহ গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বর্তমান আইজিপি ডা. বাহারুল আলমের বিরুদ্ধে। স্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সরকারের ভুল বোঝানো হত্যাকাণ্ড আড়াল করা, বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
আইজিপির অপসরণের দাবিতে পুরান ঢাকায় বিএনপি'র নিহত নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছে। আইজিপিকে অপসারণ করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে সরকারকে। বর্তমানে আইজিপির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ও তার অপসারণ দাবি করে সারাদিন নানা আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে আলোচনায় এসেছে নতুন আইজিপির সম্ভাব্য নাম: এসবি প্রধান গোলাম রসুল ও র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মহাপরিচালক এফএম শহিদুর রহমান।
আরও পড়ুন: তফসিল ও ভোটের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান ইসির
বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে দায়ী ব্যক্তিদের তালিকায় নাম আসায় বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকে অপসারণ করতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও আইন সচিবকে এই নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়েছে, নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইজিপি বাহারুল আলমকে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো আইনজীবীরা হলেন অ্যাডভোকেট মো. আব্দুস সামাদ, অ্যাডভোকেট শাহিন হোসেন ও অ্যাডভোকেট মো. আতিকুর রহমান।
আরও পড়ুন: চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে খালেদা জিয়াকে: মির্জা ফখরুল
উল্লেখ্য, বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার নাম এসেছে। স্পর্শকাতর ওই প্রতিবেদনে আইজিপির নাম আসার পর প্রশাসনের ভেতরে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
প্রতিবেদনে আইজিপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখা এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠে এসেছে।
সরকারের একটি স্পর্শকাতর প্রতিবেদনে আইজিপির নাম আসার পর প্রশাসনের ভেতরে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের বিশেষ শাখায় দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এমন বিতর্কিত অতীত থাকা একজন কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা কতটা যৌক্তিক।
সততা ও দক্ষতার জন্য পরিচিত হলেও পিলখানা হত্যাকাণ্ড তদন্তে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে গুরুতর মন্তব্য এসেছে। ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সময় বাহারুল আলম ছিলেন এসবি প্রধান। গত বছর সরকারের পরিবর্তনের পর ২০ নভেম্বর তাকে চুক্তিভিত্তিক আইজিপি করা হয়। তবে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা’ অভিযোগ তুলে তার নাম এসেছে তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে।
স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, “তদন্তে পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম এসেছে। তাদের মধ্যে আছেন বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলমও। তাদের নাম প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে।” তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, “তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ জাতির সামনে প্রকাশ করা এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করা এখন সরকারের দায়িত্ব।”
গত রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশন প্রতিবেদন জমা দেন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৮ জন সেনা সদস্য নৃশংসভাবে হত্যা হন। এ ঘটনায় ৭ সদস্যের স্বাধীন জাতীয় কমিশন গঠন করা হয়েছিল।
এই প্রতিবেদকের হাতে আসা তদন্ত প্রতিবেদনের কপি অনুযায়ী, ১৪৬ নম্বর পয়েন্টের ‘গ’ অংশে পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম রয়েছে। তারা হলো তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদ, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার নাইম আহমেদ, অতিরিক্ত আইজিপি (এসবি প্রধান) বাহারুল আলম, অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ এবং তার অধীনস্থ তদন্ত দল। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্ত চলাকালে এসবি প্রধান বাহারুল আলম কমিশনকে অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী দলের কর্মীদের ফাঁসিয়েছেন।
সচিবালয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “মন্ত্রণালয় বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। প্রতিবেদনটি বড়, সব পড়া হয়নি। পড়া হলে রিকমেন্ডেশনগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে। অনেক ভালো সুপারিশ আছে, তবে পুরোটা না পড়া পর্যন্ত বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।”
এদিকে নিহত সেনা সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আব্দুল হান্নান বলেন, “তদন্তে অনেকের নাম এসেছে। তাদের যেন দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার কার্যকর করা হয়। একই সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়—এটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।”





