২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটকে ডিএমপি কমিশনারের ঘোষণা রহস্যজনক

ওসমান হাদির শুটারদের নিয়ে পুলিশ অন্ধকারে

Sanchoy Biswas
মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব
প্রকাশিত: ৭:৪৫ অপরাহ্ন, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৯:৩৩ অপরাহ্ন, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যা চেষ্টাকারীদের অবস্থান নিয়ে পুলিশ এখনও গভীর অন্ধকারে। ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতারের ঘোষণা দিলেও এখনও গ্রেফতার তো দূরের কথা তাদের অবস্থান নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই আসামিরা ভারতে পালিয়ে গিয়ে সেলফি পাঠিয়েছে এবং তথ্য দিয়েছেন এক প্রবাসী সাংবাদিক। আবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে পড়েছে চিহ্নিত তিন আসামি এখনও দেশেই আছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি গণমাধ্যমকে বলেছে দুর্বৃত্তদের সীমানা পার হওয়ার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। প্রশ্ন উঠেছে রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রকাশ্য দিনের বেলায় রাস্তায় গুলি করে হত্যা চেষ্টা করলেও আসামিদের পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি। তাদের অবস্থানও চিহ্নিত করতে পারেনি। দ্য ডিসেন্ট এর প্রতিবেদনে আসামিদের শনাক্ত করা গেলেও তাদের অবস্থান জানা ও গ্রেফতারের চেষ্টা নিয়ে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রহস্যজনক ভূমিকা তৈরি হয়েছে।  গুলি বর্ষণকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ডাকসুর নেতৃত্বে ছাত্রদলতা গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেছে। শহিদ মিনারের সর্বদলীয় সমাবেশ করেছে ইনকিলাব মঞ্চ একই দাবিতে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দিনই হাদিকে গুলি করার ঘটনায় ভোটের মাঠে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

আরও পড়ুন: সাংবাদিক আনিস আলমগীর ৫ দিনের রিমান্ডে

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনা করে হামলাটি চালানো হয় এবং উদ্দেশ্য ছিল দেশে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি করা; হামলার পরপরই সীমানা পাক করে দেয়া হয় দুর্বৃত্তদের।

সরাসরি ঘটনায় জড়িত হিসেবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তিনজনকে শনাক্ত করাছে। তাঁদের মধ্যে মোটরসাইকেলের পেছনে বসে গুলি চালান ছাত্রলীগের নেতা ফয়সল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল, চালক ছিলেন আলমগীর শেখ। ঘটনার আগে হাদিকে অনুসরণকালে (রেকি) এই দুজনের সঙ্গে আরও একজন ছিলেন। তাঁর নাম রুবেল। তিনি আদাবর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন: আদালতে ফয়সালের স্ত্রীর জবানবন্দি, হত্যাচেষ্টা মামলায় নতুন তথ্য

হাদির বিভিন্ন গণসংযোগে ওই তিনজনের একসঙ্গে থাকার ছবিও পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই ছবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এই তিনজনই আওয়ামী লীগ–সংশ্লিষ্ট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।

তদন্ত-সূত্র মনে করছে, হাদিকে হত্যার লক্ষ্যে কয়েক মাস ধরে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিরা তাঁকে অনুসরণ করেছে। তফসিল ঘোষণার পরদিন তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা ছিল অন্যতম লক্ষ্য। 

এদিকে ‘শুটার’ ফয়সল করিম ও হোন্ডা চালক আলমগীর শেখ ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে। তাঁদের সম্ভাব্য অবস্থান শনাক্ত করে শনিবার রাতেই ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করে ঢাকায় আনা হয়েছে। তাঁরা হলেন সঞ্জয় চিসিম ও সিবিরন দিও।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সঞ্জয় চিসিম জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে দুজন বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতে পাচারে সহযোগিতা করেছেন তাঁরা। ওই দুজন ফয়সল ও আলমগীর বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধারণা করছে।

আটক দুই ব্যক্তি সম্পর্কে গত রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে লোক পারাপারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, ফয়সল ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। তাঁর সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান ওরফে জ্যোতির ঘনিষ্ঠতা ছিল। জ্যোতির সঙ্গে ফয়সলের একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।

অবশ্য পটুয়াখালীর বাউফলের গ্রামের বাড়িতে ফয়সলের যাতায়াত ছিল না। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ফয়সলের সহযোগী আলমগীর শেখ আদাবর থানা যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। 

হাদিকে গুলি করার ঘটনার আগে ফয়সল করিমের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন,  র‍্যাব নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফয়সল করিমের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীকে আটক করেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীর ভূমিকা ও দুর্বৃত্তদের অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে। ঘটনার পরপরই গণমাধ্যমকে পুলিশ কমিশনার বলেছিলেন ২৪ ঘণ্টা হয় নাই দুর্বৃত্তরা ট্র্যাক এ আছে। তাদের আটক করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে যাওয়া যায় মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে গুলি বর্ষণকারীরা ঢাকা থেকে গাজীপুর ময়মনসিংহ হয়ে আলুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে আসামের গোহাটি গিয়ে সেলফি ছবি পাঠিয়েছে। গত রবিবার ব্রেকিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশন নজরুল দাবি করেন দুর্বৃত্তরা দেশেই আছে। প্রকাশ দিনের বেলা ঘটনার পর আসামিদের ধরা নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ডাকসু নেতৃবৃন্দ আসামিদের ভারত যাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানান এটি এখন বলা যাবে না গোপনীয় বিষয়। তবে এখন অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে আসামিরা সীমানা পার হয়েছে। সর্বাত্মক অভিযানের পরেও কিভাবে আশা করে সীমানা পার হলো তাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ ও রহস্যজন।

এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে  সীমান্তে সতর্ক বিজিবি; শেরপুরের নালিতাবাড়ি সীমান্ত থেকে মানুষ পারাপারে সহায়তাকারী ফিলিপের ২ সহযোগীকে আটক করেছে বিজিবি। দুর্বৃত্তরা মাত্র পার হয়েছে কিনা তারা নিশ্চিত নয়।