অন্যান্য বিষয়ের দিকে নজর না দিয়ে নির্বাচনের দিকে নজর দিন: ফখরুল

অন্যান্য বিষয়ের দিকে নজর না দিয়ে নির্বাচনের দিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে নির্বাচন কমিশনের গঠনের লক্ষে সার্চ কমিটির ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান
তিনি বলেন, আমাদেরকে সময় দিতে হবে। আমরা আশা করব যে, তারা (অন্তবর্তী সরকার) এই সময়ের সৎব্যবহার করবেন। অন্যান্য বিষয়গুলোর দিতে নজর না দিয়ে নজরটা ওই দিকে করুন, ফোকাসটা ওই দিকে করুন- ইলেকশন। এটার কোনো বিকল্প নাই। আমাদের রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে, জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে এখানে এমন একটা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, সকলের পার্টিসিপেশনে একটা নির্বাচন এবং সেটা একেবারেই নিরপেক্ষ নির্বাচন এটা করতে হবে। কারণ আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন বা চ্যালেঞ্জ একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গণতান্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের আন্দোলন-নির্যাতন-কারাভোগের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করব, অতিদ্রুত তারা (অন্তবর্তী সরকার) চেষ্টা করছেন নিশ্চয় তারা চেষ্টা করছেন একদমই কিছুই করেনি সেটা ঠিক না তো ইতিমধ্যে অনেক কিছু করেছেন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
ফখরুল বলেন, এখন সর্বশেষ যেটা করেছেন নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। যদিও আমাদের প্রত্যাশা ছিলো যে, এই কমিটি করার আগে তারা রাজনৈতিক দলগুলো যারা স্টেকহোল্ডার তাদের সঙ্গে একটু পরামর্শ করবেন। এটা আমাদের একটা প্র্রত্যাশা ছিলো। এটাকে আমরা বড় ধরনের সমস্য মনে করছি না। আমরা মনে করি সেটা হোক। দ্রুত ইলিকশন কমিশন হোক এবং ইলেকশন কমিশন অতিদ্রুতার সঙ্গে তাদের যে কাজ সেই কাজটা তারা করবেন।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই, যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি সারা পৃথিবীতে সমাদৃত এবং তিনি কমিট করেছেন যে, আমার কোনো রকমের কোন রাজনৈতিক ইচ্ছা নাই। আমি আপনারা যে দায়িত্ব দিয়েছেন তাই পালন করছি।
সেই কথা ধরে আমি বলতে চাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে যে, আপনি সারা পৃথিবীতে সমাদৃত, বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে খুবই ভালোবাসে, আপনাকে সন্মান দিয়েছে, দেবে, দিতে চায়। একটাই আপনি এই জায়গাটা যাতে নষ্ট না হয় সেই দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয় মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি(এনপিপি) ১৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, যুদ্ধ শেষ হয় নাই, রাজনীতি ও সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না। রাজনীতি-সংগ্রাম চলতে থাকে এবং রিফর্ম হচ্ছে, চলবে। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই রিফর্মের জন্য কতগুলো কমিটি করেছেন। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার দ্রুত সংস্কার কমিশন থেকে রিপোর্ট নিয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরবেন এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
একটা কথা আমি পরিস্কার করে বলতে চাই, সব রিফর্ম জনগণের দ্বারা রেটিফাই হতে হবে, জনগণকে মেনে নিতে হবে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। জনগণের পাটিসিপেশন ছাড়া কখনই রিফর্ম কখনো সাসটেইনেবল হবে না… এটা মাথায় রাখতে হবে। উপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কোনো রিফর্ম সফল হয় না। আইয়ুব খান চেষ্টা করেছেন, এরশাদ চেষ্টা করেছেন সেটা সম্ভব হয়নি। সুতরাং এমন কিছু করা যাবে না যেটা আমাদের দেশের সঙ্গে, মানুষের কালচারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা জটিল সময় পার করছি। অনেক ইস্যু সামনে আসবে… একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, চক্রান্তু কিন্তু শেষ হয়নি। ফ্যাসিস্টরা তাদের মূল লোক চলে গেলেও তাদের কাঠামো ফ্যাসিস্ট রয়ে গেছে। সেখানে এখনো যারা অবস্থান করছেন তারা কাজ করছে। ওই ব্যক্তির পরিবর্তন হলেও কাঠামোর পরিবর্তন হয় নাই।
আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে যারা আন্দোলন করেছেন তারা মিলে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা অনেক আগেই ভেবেছিলাম যে, সংস্কার প্রয়োজন। সেটা ‘১৬ সালে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি একটা ‘ভিশন’ ২০-৩০’ দিয়েছিলেন….সেখানে তিন দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, রেইনবো নেশন, মানুষের অধিকারসহ বিভিন্ন কথা বলেছেন। আমরা অত্যন্ত সচেতন যে, পরিবর্তন-সংস্কার যুগোপযোগী যদি না হয় তাহলে রাষ্ট্র সঠিকভাবে কাজ করবে না…. এই বিষয়গুলো আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে। যদিও আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব গতকাল বলেছেন যে, অস্থির হওয়ার কিছু নেই, অস্থির হওয়া চলবে না…সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রের স্বার্থ সেটা আপনার সামনে আনতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশ গর্ভনর বলছেন যে, ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগের লোকেরা । এজন্য তো এদের ট্রিজেন… রাষ্ট্রদ্রোহিতায় তাদের বিচার হওয়া উচিত, বড় শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ এরা রাষ্ট্রকে ধবংস করেছে।
অর্থনীতিকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে অর্থনীতি এমন আমরা বার বার বলতাম যে, অর্থনীতি ফোকলা হয়ে গেছে… কিচ্ছু নাই ভেতরে। প্রশাসন… এখন পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। কেনো? আওয়ামী লীগ তাদের(প্রশাসন) যে চরিত্র সৃষ্টি করেছে সেটা দূর করা যাচ্ছে না… খুঁজে পাওয়া যায় না একটা ভালো লোক প্রশাসনের মধ্যে… ঘুষ খায় না, স্বজন প্রীতি করে না, দুর্নীতি করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। সবই আপনারা ভালো করে জানেন বলার দরকার নেই… শিক্ষক থেকে শুরু করে, চিকিৎসক থেকে শুরু করে, আইনজীবী থেকে শুরু করে প্রশাসক থেকে শুরু করে বেশির ভাগ জায়গাতে দুর্নীতি। ১৫-১৬ বছরের জঞ্জাল তারা এভাবে গণতন্ত্রকে তিলে তিলে হত্যা করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি… বড় ক্রিটিক্যাল। এই মুহুর্তে শুধু আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো হঠকারিতার কারণে যদি ভুল হয়ে যায় আমরা রাষ্ট্র হিসেবে বড় বিপদে পড়ে যাবো। কারণ আমাদেরকে বিপদগ্রস্থ করবার জন্য, আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবার জন্য অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে… এই কথাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।
আমার বিশ্বাস অতীতে প্রমাণ করেছি যে, উই ক্যান ডু… আমরা পারি। আন্দোলনের আমরা বার বার বলেছি, আমরা পারব… তরুণরা এগিয়ে আসো, কে আছো জোয়ান, হাকিছে ভবিষ্যৎ। তরুণরা এগিয়ে এসেছে পরিবর্তন হয়ে গেছে। তরুণরা পরিবর্তন এনেছে। এখন এটাকে ধরে রাখার দায়িত্ব কাদের? তরুণদের। এটাকে সঠিকভাবে দায়িত্ব কাদের? অনেক সমস্যা এই সমস্যা তো আমাদেরকে মেটাতে হবে।
তিনি বলেন, এই সরকার একটা অন্তবর্তীকালীন সরকার… এটা টেকনোক্রেটদের সরকার, এরা পলিটিক্যাল লোক নয়। তারা আমাদের সাহায্য করতে এসেছে যে, তারা নিরপেক্ষ থেকে রাস্তা দেখিয়ে দেবে। রাজনীতিবিদদের সমস্যা সমাধান করতে হবে, রাজনীতিবিদ ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হয় না, হতে পারে না….এই কথাগুলো মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।
আমরা একসঙ্গে কাজ করছি, আমরা অস্থির না। আমরা মনে করি যে, ধৈর্যের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের একটা বড় সাফল্য যে, আমরা বাম-ডান সবাইকে একত্রিত করতে পেরেছিলাম… এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এটাকে(ঐক্যকে) নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা বলি, দয়া করে কেউ ধৈর্য্য হারাবেন না।
এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক আবদুল হালিম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির কেএম আবু তাহের, জাগপার খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, গণ দলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের ফারুক হাসান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি এসএম শাহাদাত, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকী, ডিএল এর খোকন চন্দ্র দাস, এনপিপির জহির হাকিম, শরীফ মনির হোসেন, বেলাল হোসেন, ফরিদ উদ্দিন, ব্যারিস্টার ফরিয়া জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।