দোয়া মিলাদ, দরিদ্রদের খাবার বিতরণসহ গণসংযোগ কর্মসূচি চলছে

দেশনেত্রীর চিকিৎসার পাশাপাশি নির্বাচনের পুরোপুরি প্রস্তুতিতে বিএনপি

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৭:২৬ অপরাহ্ন, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৮:৩০ অপরাহ্ন, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হঠাৎ করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও নির্বাচনী মাঠ ধরে রেখেছে বিএনপি প্রার্থীরা। রাজধানী ঢাকা সহ প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সবার সমাবেশ ছাড়াও খালেদা জিয়া রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া-মিলাদ, কোরআন খতম, দরিদ্রদের খাবার বিতরণসহ ধর্মীয় ভিত্তিক গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা।

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা গৌরবময় দেশনেত্রীর দ্রুত সুস্থতা কামনায় বিএনপি নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনতা গভীর উদ্বিগ্ন। এরপরেও নির্বাচনী মাঠে পুরোপুরি প্রস্তুতি আছে বিএনপির। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপলক্ষে বিএনপি ইতোমধ্যে দুই দফায় ২৭৩ আসনে মনোনয়ন ঘোষণা করেছে। প্রথম ধাপে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণার এক মাস পর গত বৃহস্পতিবার বিএনপি আরও ৩৬টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

দলটি এই ঘোষণা দিয়েছে এমন এক সময়ে, যখন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ সময়ে প্রার্থী ঘোষণাকে বিএনপির নির্বাচনী তৎপরতা সচল রাখার স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অসুস্থ খালেদা জিয়া। তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। গত ২৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তার অবনতিশীল স্বাস্থ্য দলের নেতা-কর্মীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে দলের প্রথম দফার অনেক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমও কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়েছিল।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান সম্পন্ন, রিপোর্ট স্বাভাবিক: মেডিকেল বোর্ড

দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী ঘোষণার বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা শুরু থেকেই নির্বাচন চেয়ে আসছি। আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতেই হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব। সে লক্ষ্যে ৩৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি আসনগুলোতেও ঠিক সময়ে আমরা প্রার্থী দিয়ে দেব।”

যদিও খালেদা জিয়ার অসুস্থতা গোটা দলকে চাপে রেখেছে, তবুও দলের কিছু শীর্ষ নেতা ও প্রার্থী নির্বাচনী এলাকায় সীমিত আকারে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সালাহউদ্দিন আহমদ প্রমুখ নিজ নিজ এলাকায় জনসভা ও মতবিনিময় করছেন। এসব অনুষ্ঠানে প্রার্থীরা ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি দলের চেয়ারপারসনের সুস্থতার জন্য দোয়া প্রার্থনারও আহ্বান জানাচ্ছেন।

বিএনপির অবস্থা দেখা যায় নেত্রীর মারাত্মক অসুস্থতার খবরে দলসহ গোটা দেশের মানুষ উৎকণ্ঠিত। অনেক নেতা হাসপাতালে অবস্থান করায় প্রচারণা কিছুটা ম্লান হয়ে পড়েছে। কিন্তু নতুন প্রার্থী ঘোষণা কর্মীদের কাছে স্পষ্ট বার্তা দেয়—আমাদের আবার মাঠে ফিরতে হবে।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও তার সমর্থকরা নেত্রীর গুরুতর অসুস্থতায় অনেকেই ঢাকা আসলেও আবার এলাকায় ফিরে গেছে। বিদেশ যাত্রা চূড়ান্ত না হওয়ায় মেডিকেল বোর্ড ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার অনুরোধে প্রস্তুতিতে জিয়া পরিবারের অন্যতম জনপ্রিয় সদস্য, এরপর চেয়ারম্যানের সহধর্মিনী ডাক্তার জোবায়দা রহমান লন্ডন থেকে দেশে এসে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং দলীয় কার্যক্রমের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি খোঁজখবর নিচ্ছেন।

বিএনপি প্রথম দফায় গত ৩ নভেম্বর ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ধাপে ৩৬টি আসন যোগ হওয়ায় এখন পর্যন্ত মোট ২৭২ আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে। বাকি ২৮টি আসন সমঝোতা ও জোটসঙ্গীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে, বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন আট দলীয় জোট ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে বড় বড় সমাবেশ করেছে। তারা আজ শনিবার সিলেটে সমাবেশের আয়োজন করেছে। নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “বড় ধরনের সংকট না হলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রমজানের আগেই নির্বাচন হবে এবং বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।” স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও বলেছেন, “আমরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আছি। অনিবার্য কোনো কারণ ছাড়া আমরা এই প্রক্রিয়ার বাইরে যাব না।”

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা জনমনে যে সহানুভূতি ও আবেগ তৈরি করেছে, বিএনপি তা নির্বাচনী শক্তিতে রূপান্তরের চেষ্টা করছে। দ্বিতীয় দফার প্রার্থী ঘোষণা সেই কৌশলেরই অংশ, যা দলের ভেতরে-বাইরে নির্বাচনী মনোযোগ ফিরিয়ে আনার বার্তা দিচ্ছে।