রাজধানীতে এনসিপি নেত্রী রুমির মৃত্যু নিয়ে নানা রহস্য

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৬:৪৩ অপরাহ্ন, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৬:৪৩ অপরাহ্ন, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

রাজধানীর জিগাতলায় একটি হোস্টেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির আলোচিত নেত্রী রুমির মৃত্যু নিয়ে নানা রহস্য দেখা দিয়েছে। পরিবার থেকে পরিষ্কারভাবে কিছু না বললেও প্রশ্ন উঠেছে—হঠাৎ তার রুমমেট কেন ওধাও হলো। দলের এক নেতা বিবৃতি দিয়ে এটিকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছেন। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আওয়ামী সমর্থক এক নারীকে রাস্তায় পিটিয়ে আলোচনায় আসেন এই এনসিপি নেত্রী।

রুমি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, প্রায় দুই মাস ধরে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছিলেন রুমী। তিনি হত্যা ও ধর্ষণের হুমকিও পেয়ে আসছিলেন। এসব কারণে গত কিছুদিন ধরে ট্রমাটাইজড ছিলেন। দলের কর্মসূচিতে এলেও বিমর্ষ থাকতেন রুমী।

আরও পড়ুন: ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান, ৩০০ ফিটে বিশাল সংবর্ধনা

এদিকে রুমীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ‘রাজনৈতিক হুমকি ও পারিবারিক জটিলতা’—এই দুটি বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তারা রুমীকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।

আরও পড়ুন: দেশের স্বার্থ ও গণতন্ত্র রক্ষায় বিএনপির কোনো বিকল্প নেই : ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ

জানা যায়, গত ১৪ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ চলাকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে মধ্যবয়সী এক নারী মারধরের শিকার হন। সেই মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আলোচনায় আসেন জান্নাত আরা রুমী।

রুমীর বর্তমান ঠিকানা, পারিবারিক পরিচয়, গ্রামের ঠিকানা—সবই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন এনসিপি নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব।

তিনি বলেন, রুমীর পরিবারের সদস্যরাও একই রকম হুমকি-ধমকির মুখে পড়ায় সেটি পারিবারিক জটিলতা বা চাপের কারণ হয়ে থাকতে পারে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা—তা পুলিশ তদন্ত করে দেখবে। তবে যদি আত্মহত্যাও হয়ে থাকে, এর পেছনে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের কর্মীদের ক্রমাগত হুমকি-ধমকি দায়ী বলে আমি মনে করি।

ভোরে উদ্ধারের পর সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হলেও পুলিশ সম্ভাব্য সব বিষয় আমলে নিয়ে তদন্ত করছে বলে জানান হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে জান্নাত আরা রুমী হুমকি ও হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন বলে তার দলের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে পারিবারিক ও ব্যক্তিজীবনেও তিনি কিছু জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।

রুমী আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে—সে প্রশ্ন জোরালোভাবে ওঠার আরেকটি কারণ হলো, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অ্যাক্টিভিস্টের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে তাকে নিয়ে সাইবার বুলিং করা হচ্ছিল। দেওয়া হচ্ছিল হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি। এমনকি তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্যও অনলাইনে ছড়িয়ে দেয় পতিত আওয়ামী লীগের অ্যাক্টিভিস্টরা।

সব মিলিয়ে তিনি এক ধরনের হতাশা ও বিষণ্নতায় ভুগছিলেন বলে জানান রুমীর স্বজন ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা।

এ ছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় যে অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে—রুমীর দুবার বিয়ে হয়, দুই সংসারই ভেঙে গেছে। দুই ঘরে তার দুটি সন্তান আছে। তারা বাবাদের কাছেই থাকে। সে কারণে তিনি বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। এ বিষয়ে তিনি চিকিৎসাও নিচ্ছিলেন।

হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, এনসিপির নেত্রী জান্নাত আরা রুমীর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। সেই মামলায় বিষণ্নতার কথা উল্লেখ করেছে পরিবার।

তিনি আরও বলেন, জিগাতলায় যে বাসায় তিনি থাকতেন সেটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন। ছোট ছোট রুম করে মালিক নারীদের জন্য মেস ভাড়া দিয়েছেন। রুমীর বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর বাসস্ট্যান্ডে। বাবার নাম জাকির হোসেন। তিনি ধানমণ্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নার্সিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। এরপর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করছিলেন। কিছুদিন হলো তিনি বেকার ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি শাহাদাত হোসেন বলেন, এমন কোনো অভিযোগ পুলিশের কাছে করা হয়নি। তবু তার মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।

রুমীর চাচাতো ভাই মেহেদী হাসানও গণমাধ্যমকে জানান, রুমীর দুই বিয়ে ও সংসার ভেঙে যাওয়ার কথা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বিস্তারিত তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন রুমীর পরিবারের সদস্যরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এনসিপির নেত্রী জান্নাত আরা রুমীর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।