ব্রিটিশ আমলে চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত শতবর্ষী ৩৪৮ ফুট লম্বা গার্ডার ব্রীজের সংস্কার কাজ শেষ

Abid Rayhan Jaki
পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৬:০৫ অপরাহ্ন, ০৭ জুন ২০২৪ | আপডেট: ৬:২৬ পূর্বাহ্ন, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

পশ্চিমাঞ্চল পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় দিলপাশার রেলস্টেশনের কাছে গার্ডার ব্রিজে স্থায়ী রেললাইন বসানোর সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে।

১০৯ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে ইটের মধ্যে  চুন-সুড়কি আর ভাতের মাড় দিয়ে ৬ স্প্যান বিশিষ্ট ৫ পিয়ারের ৩৪৮ ফুট লম্বা ২৬ নাম্বার  দিলপাশার গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। গার্ডার ব্রীজটি আগে সংস্কার  হয়নি। 

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেত্রকোণায় যুবদলের মিলাদ মাহফিল

শুক্রবার (৭ জুন) ভোর সাড়ে ৫ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা সাড়ে ৭ ঘন্টায় দেড় শতাধিক রেলকর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে কাজটি শেষ হয়। 

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নে ভাঙ্গুড়া উপজেলার কুড়াগাছা গ্রামের (সিরাজগঞ্জ-উল্লাপাড়া) সেকশনের মাঝে ২৬ নাম্বার গার্ডার ব্রিজে অস্থায়ী সিসিক্লাভে থাকা রেললাইন সরিয়ে নতুন ঢালাই করা পিয়ারের ওপর বেডব্লকে ৩৪৮ ফুট লম্বা রেলওয়ে ব্রিজে রেললাইন বসানো হয়।

আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে জাফলং থেকে লুট হওয়া ৭ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার

এরপর রাজশাহী থেকে আসা ঢাকাগামী ৭৫৪ নাম্বার আন্তঃনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস এই নতুন গার্ডার ব্রিজ দিয়ে পারাপার করা হয়।

আর একমাস পর থেকে ওই গার্ডার ব্রিজ দিয়ে আন্ত:দেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ ২১ জোড়া আন্তঃনগর যাত্রীবাহী ট্রেন, এক জোড়া মেইল ট্রেন এবং এক জোড়া মালবাহী ট্রেন ৯০ কিলোমিটার গতিতে চলবে। পশ্চিমাঞ্চল পাকশী বিভাগীয় রেলওয় সূত্র জানায়, চার কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বর্ষা মৌসুমের আগেই ছয় মাস প্রকল্পের কাজ ২ মাস ৮ দিনে শেষ হয়েছে। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রদধান প্রকৌশলী লিয়াকত শরীফ খান, পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ, সেতু প্রকৌশলী আব্দুর রহিম, পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল, পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী শিপন আলী, সহকারী সেতু প্রকৌশলী জুয়েল মিয়া, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) আহসানূর রহমান, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী (ব্রিজ) হাসান আলী, ঊর্ধ্বত  উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আতিকুর রহমান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আরটিসির প্রকৌশলী আলমগীর কবীরসহ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ব্রীজটি অনেক পুরোনা হওয়ায় অতিরিক্ত ভারী ট্রেন চলাচলের কারণে গার্ডার ব্রীজের পিয়ার, বেডব্লক ফাঁটল ধরে ব্রিজ অতিক্রম করার সময় ট্রেন কেঁপে উঠতো। 

২৬ নাম্বার গার্ডার ব্রীজ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ ডেডস্টপ ঘোষনা করে। অস্থায়ী রেললাইন তৈরী করে শূন্য কিলোমিটার গতিতে ট্রেন থামিয়ে ১০ কিলোমিটার গতিতে ব্রীজের ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল চালু রাখে।

এর আগে গত ৩১ মার্চ শত বছরের বেশি পুরোনা ওই গার্ডার ব্রিজের আরসিসি বেডব্লক ও পিয়ারগুলো সম্পুর্ণ ভেঙ্গে জ্যাকেটিং ঢালাই করে অস্থায়ী রেললাইন তৈরী করে সংস্কার কাজ চলমান রাখা হয়।

সংস্কার কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আরটিসির প্রকৌশলী আলমগীর কবির  কে জানান, ব্রিটিশ আমলে ইটের মাঝে চুন-সুড়কি এবং ভাতের মাড় নির্মিত গার্ডার ব্রিজের ওপর দিয়ে অতিরিক্ত ভারী ট্রেন চলাচলের কারণে চুন-সুড়কির গুনাগুন নষ্ট হয়ে ছাইয়ের মত হয়ে গিয়েছিল। ব্রিজের পায়ারে এবং বেডব্লকে ফাটল ধরেছিল। এই রেলরুটে ট্রেন চলাচল যেন বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য সিসিক্লিভ (লোহার এ্যাঙ্গেল) দিয়ে অস্থায়ী রেললাইন তৈরী করে সংস্কার কাজ চলে। 

এছাড়া প্রতিদিন দেড় শতাধিক শ্রমিক জ্যাকেটিং আরসিসি ঢালাই করে নতুন বেডব্লক (যার ওপরে রেললাইন বসানো থাকে) সংস্কার করতে ৬৮ দিন সময় লাগলো।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শিপন আলী জানান, গার্ডার ব্রীজটির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই সম্পুর্ণ নতুনরুপে সংস্কার করা হলো। এই রেলপথ দিয়ে আন্ত:দেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ উত্তর-দক্ষিনাঞ্চলের ২২ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। সংস্কার কাজের আগে সকল ট্রেন ব্রিজে এসে শূন্য কিলোমিটার গতিতে থেমে যেত। ডেডস্টপ তুলে একমাস পর থেকে এই রুটে ৯০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে বলে জানান তিনি। 

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল  জানান, সেই ব্রিটিশ আমলে ১০৯ বছর আগে পাকশীতে পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে 'হার্ডিঞ্জ ব্রিজ' নির্মানের পর ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মিত হয়েছিল। ওই রেলপথ নির্মাণকালে ৪৯টি রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজ তৈরী করা হয়। তার মধ্যে ৪৫টি গার্ডার ব্রীজ রয়েছে। ব্রীজগুলো  ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হলেও এখনো ২৫ টন এক্সেল লোড নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। কিন্তু দিলপাশার গার্ডার ব্রিজটি শতবছর অতিবাহিত হওয়ার কারণে গার্ডার ব্রীজের পিয়ার, বেডব্লক ফাঁটল ধরে ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হলো।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক আসাদ জানান, রেলবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলপথ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, রেলপথে কোন ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ থাকবে না। ব্রীজগুলো সংস্কার করার জন্য আদেশ দিয়েছিল। সেই মোতাবেক রেলপথ মন্ত্রনালয় সেতুগুলো পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাঁচটি ব্রিজের সংস্কার কাজ শেষ। কিছু চলমান রয়েছে।