আবারও আত্মহত্যা ববিতে: চার বছরে ঝরে গেল ৪টি প্রাণ

Any Akter
বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১:২৬ অপরাহ্ন, ১০ জুন ২০২৪ | আপডেট: ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

আত্মহত্যা প্রতিরোধে পৃথক কাউন্সিলিং দফতর চালু করার পরও আবারও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)তে। গত ৯ জুন রবিবার রাত সাড়ে ১২টায় একজন শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানালেন বরিশালের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল। এই নিয়ে ববিতে চার বছরে চারজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও ১১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে জানা গেছে। 

জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ববি'র বঙ্গমাতা আবাসিক হলের রিডিং রুমে শেফা নুর ইবাদী নামের এক ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নবম ব্যাচের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। শেফা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা হলের ১৪১১ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলো বলে জানা যায়। 

আরও পড়ুন: ফেসবুকে কমেন্ট করা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত

ওসি আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, বঙ্গমাতা হলের তৃতীয় তলায় রিডিং রুমের জানালার গ্রিলের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ওই ছাত্রীকে পাওয়া গেছে। তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেছে। 

এটা আদৌ আত্মহত্যা নাকি হত্যা? কিম্বা কি কারনে সে আত্মহত্যা করেছে এসব কিছুই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি পুলিশ বা ববি প্রশাসন। তার লাশ মর্গে রয়েছে। পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে পরবর্তি সিদ্বান্ত নেয়া হবে বলে জানালেন ওসি মুকুল। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রেমিকের সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় তাকে ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যা করেছে শেফা। 

আরও পড়ুন: বিজিবির হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হলো আহত হাতির চিকিৎসায় গিয়ে গুরুতর আহত ২ চিকিৎসকসহ ৩ জনকে

এদিকে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা বাতিলের দাবিতে সাধারন শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলো শেফা। “বৈষম্যমুলক কোটা বাতিল চাই ! মেধা ভিত্তিক নিয়োগ চাই !” ব্যানার নিয়ে মিছিলে অংশ নিয়েছে সে। তাই তার মতো সচেতন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করতে পারেনা বলে দাবী করেন একাধিক সহপাঠী। 

এ বিষয়ে ওসি আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, আমিও শুনেছি। তার মোবাইল সেট এখনো হাতে পাইনি। যে কক্ষে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে গিয়ে তদন্ত করে বলতে পারবো আসলে কি ঘটেছে। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আব্দুল কাইউম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মেন্টাল হেলথ এন্ড গাইডিং সেন্টার খোলা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কাউন্সিলিং করা হয়। তারপরেও এ ধরনে ঘটনা অনাকাংখিত। আমরা আরো বেশি উদ্যোগ নেব। সাধারন শিক্ষার্থীরা যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এর আগেও ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তারা হলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বৃষ্টি সরকার, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শাহরিন রিভানা ও গণিতের সুপ্রিয়া দাস। একই সময়ের মধ্যে ১১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে দুজন, শের-ই-বাংলা হলে তিন জন, শেখ হাসিনা হলে একজন, মেসে চার জন এবং নিজ বাসায় এক ছাত্র আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি রাতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৮ম ব্যাচের বৃষ্টি সরকার মেসে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।