নেত্রকোনায় পাটচাষে চাষীদের অনাগ্রহ, হুমকির মুখে ‘সোনালি আঁশের’ সম্ভাবনা

একসময় দেশের রপ্তানির প্রধান খাত ছিল পাট। ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত এই ঐতিহ্যবাহী ফসল এখনও দেশের নানা অঞ্চলে চাষ হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে পাটচাষ। নেত্রকোনা জেলার কৃষকেরাও এর ব্যতিক্রম নন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, আধুনিক প্রযুক্তির ঘাটতি ও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্রমেই পাটচাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
নেত্রকোনা জেলায় একসময় বর্ষা মৌসুমে হাওর অঞ্চলের উর্বর জমিতে প্রচুর পাট উৎপাদন হতো। কৃষকরা এ থেকে ভালো আয় করতেন। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই পাটের পরিবর্তে ধান বা সবজির দিকে ঝুঁকছেন। কারণ, উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাজারে ন্যায্য মূল্য মিলছে না। ফলে পাটচাষ অনেকে পরিত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চোরাইকৃত ৮টি মোবাইল ফোনসহ দুই আসামি গ্রেফতার
১৮৩৫ সালে ডান্ডিতে প্রথম যান্ত্রিকভাবে পাটের আঁশ প্রক্রিয়াজাত হয়, যা কলকাতার বন্দর হয়ে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করে। ব্রিটিশ আমলের ১৮৭৭ সালের এক প্রতিবেদনে বর্ধমান, রংপুর ও নেত্রকোনার নাম বিশেষভাবে উল্লেখ ছিল পাটচাষের জন্য। তখন পাটের ঘ্রাণে মুখরিত ছিল গ্রামের ঘর-বাড়ি। কিন্তু সেই জৌলুস এখন অতীত।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, হাট-বাজারে পাটের দাম নির্ভর করে মৌসুমি চাহিদা ও পাইকারদের ওপর। সরকারি কোনো মূল্য নির্ধারণ বা সরাসরি কেনার ব্যবস্থা নেই। ফলে দালালদের হাতে পড়ে তারা ন্যায্য দাম পান না। প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধা না থাকায় দ্রুত বিক্রি করতে হয় সস্তা দামে।
আরও পড়ুন: শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত, জনজীবন বিপর্যস্ত, লোকসানের মুখে ব্যবসায়ীরা
নেত্রকোনা জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, “পাটচাষ থেকে কৃষকদের সরে যাওয়া শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং দেশের ঐতিহ্যবাহী ফসল ও সম্ভাবনাময় পাটশিল্পের জন্য এক অশনিসংকেত। উন্নত জাতের বীজ, আধুনিক যান্ত্রিকীকরণ ও বাজার কাঠামোর উন্নয়ন করতে পারলে উৎপাদন বাড়বে এবং ‘সোনালি আঁশ’ আবারও দেশের গৌরব হয়ে উঠবে।”