আমাদের ‘কৃতঘ্ন স্বভাব’ (উপকারীর অপকার) ও ‘অকৃতজ্ঞতার’ সংস্কৃতি

গতকালের সেই মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি আমাদের সামনে একটি কঠিন প্রশ্ন রেখে গেছে: সত্যিকার সংকটে কারা প্রকৃত সাহায্যের হাত বাড়ায়? আমরা কি গভীরভাবে একটু ভেবে দেখেছি কখনও? সেনাবাহিনী ও ডাক্তাররা সারাদিন গালি খায়, সমালোচনার শিকার হয়—কিন্তু যখন সবাই পিছিয়ে যায়, তখনই এই দুই পেশার মানুষগুলো এগিয়ে আসে।
আসুন জানি, সেই ভয়াবহ দিনে কে কী করেছিল?
আরও পড়ুন: গণ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে হতাশার মুখোমুখি
- সাধারণ মানুষ:
- ২/৩% স্হানীয় মানুষ সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন।
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীর: আলাদা পরিচয় থেকে জাতীয় মূলধারায়
- কতিপয় অভিভাবক এগিয়ে এসেছেন।
- বড় জোর ৮ থেকে ১০% স্বেচ্ছাসেবক জীবন বাজি রেখে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন।
- কিন্তু বাকি ৮০%? তাদের ফোনের ক্যামেরা শিশুটির দগ্ধ হওয়ার মুহূর্ত ক্যাপচার করতে ব্যস্ত ছিল।অনেক সেনসেটিভ মর্মান্তিক দৃশ্য ও মুহূর্তগুলো রেকর্ড করেছেন শুধু "ভাইরাল" হওয়ার জন্য।
- পুলিশ:
- রেস্কিউ অপারেশনে অনুপস্থিত।
- রাতে এসে "সিন টেকওভার" করেছে—দুর্ঘটনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নয়, ফুটেজ সংগ্রহে ব্যস্ত।
- ব্যবসায়ীরা:
- পানিওয়ালা ৩০ টাকার বোতল ৭০০ টাকায় বিক্রি করছে।
- রিকশাওয়ালা, সিএনজি চালক— ভাড়া ২০ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
- সুযোগ পেলেই লুটেরা মনোবৃত্তি!
- রাজনীতিবিদরা:
- দুর্ঘটনার পিক টাইমে রাস্তা বন্ধ করে ফটোশুটের প্রতিযোগিতা।
- ভুক্তভোগীদের চেয়ে মিডিয়া কভারেজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার:
- অর্ধেক কন্টেন্ট বানাতে ব্যস্ত, বাকিরা গুজব ছড়াচ্ছে।
- ট্র্যাজেডিকে ট্রেন্ডে পরিণত করার লড়াই।
এদিকে সেনাবাহিনী ও ডাক্তাররা কী করছিল?
- সেনাবাহিনী:
- প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে জীবন বাচাতে লড়াই শুরু করেছে।
- ইউনিফর্ম খুলে পুড়ে যাওয়া মানুষদের গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে, এবং এটাই হচ্ছে আমাদের প্রকৃত সেনাবাহিনীর পরিচয়—-আমি গর্বিত এমন কাজের জন্য।
- যে দৃশ্য তাদের চোখে পড়েছে, তা আমাদের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন।
- অথচ আমরা? "ওরা সংখ্যা গোপন করছে!"—এই আমাদের থিওরি?
- ডাক্তাররা:
- সিক লিভ (ছুটি) বাদ দিয়ে হাসপাতালে ফিরে এসেছে।
- ঘণ্টার পর ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে চলেছে।
- আর আমাদের প্রতিক্রিয়া? "এটা তো তাদের দায়িত্ব!"
- ভাই, এই ঘটনা যেন না ঘটে—সেই দায়িত্ব তো অনেকেরই ছিল। কেউ কি পালন করেছে?
পাইলটদের নিয়ে অযৌক্তিক সমালোচনা
একদল পাইলটকে দোষ দিচ্ছেন, আরেকদল তাকে "হিরো" বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
- একজন পাইলটেরও প্রাণের ভয় থাকে।
- সে শুধু ইউনিফর্ম পরেছে বলে নির্বিকারভাবে মরতে যাবে, এমন নয়।
- আপনি যদি উবারে রেটিং কম দেখলে গাড়িতে উঠেন না, তাহলে একজন ট্রেন্ড পাইলট কেন সেই বিমান চালাচ্ছিল—সেটা একবার ভেবে দেখেছেন?
আমরা বাঙালি—অকৃতজ্ঞতার চূড়ান্ত উদাহরণ
- আঙুল তোলার অভ্যাস আমাদের রক্তে।
- কিন্তু সঠিক দিকে আঙুল তোলেন না।
- ত্রুটিপূর্ণ বিমান কেনার সিস্টেম, নিরাপত্তা ফাঁকি দিয়ে বিল্ডিং অনুমোদন দেওয়া কর্তৃপক্ষ, মধ্যরাতে বোর্ড পরীক্ষার মতো জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া আমলা—এদের দিকে কেউ তাকায় না।
পরিশেষে একটি অনুরোধ
- যদি কিছুই না করতে পারেন, অন্তত দুই হাত তুলে একটি দোয়া করুন।
- এই ফালতু বিতর্কে সময় নষ্ট করে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো যেন ঢাকা পড়ে না যায়।
> "সিস্টেম ভাঙার কথা বলুন, যারা সিস্টেম ভেঙে জীবন বাঁচাচ্ছে—তাদের দোষ খুঁজবেন না।”