আমাদের ‘কৃতঘ্ন স্বভাব’ (উপকারীর অপকার) ও ‘অকৃতজ্ঞতার’ সংস্কৃতি

Any Akter
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬:৪৭ অপরাহ্ন, ২৩ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গতকালের সেই মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি আমাদের সামনে একটি কঠিন প্রশ্ন রেখে গেছে: সত্যিকার সংকটে কারা প্রকৃত সাহায্যের হাত বাড়ায়? আমরা কি গভীরভাবে একটু ভেবে দেখেছি কখনও? সেনাবাহিনী ও ডাক্তাররা সারাদিন গালি খায়, সমালোচনার শিকার হয়—কিন্তু যখন সবাই পিছিয়ে যায়, তখনই এই দুই পেশার মানুষগুলো এগিয়ে আসে।  

আসুন জানি, সেই ভয়াবহ দিনে কে কী করেছিল?

আরও পড়ুন: গণ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে হতাশার মুখোমুখি

-  সাধারণ মানুষ:

  - ২/৩% স্হানীয় মানুষ সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন।

আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীর: আলাদা পরিচয় থেকে জাতীয় মূলধারায়

  - কতিপয় অভিভাবক এগিয়ে এসেছেন।

  - বড় জোর ৮ থেকে ১০% স্বেচ্ছাসেবক জীবন বাজি রেখে সাহায্যের জন‍্য এগিয়ে এসেছেন।

  - কিন্তু বাকি ৮০%? তাদের ফোনের ক্যামেরা শিশুটির দগ্ধ হওয়ার মুহূর্ত ক্যাপচার করতে ব্যস্ত ছিল।অনেক সেনসেটিভ মর্মান্তিক দৃশ্য ও মুহূর্তগুলো রেকর্ড করেছেন শুধু "ভাইরাল" হওয়ার জন্য।

-  পুলিশ:

  - রেস্কিউ অপারেশনে অনুপস্থিত।  

  - রাতে এসে "সিন টেকওভার" করেছে—দুর্ঘটনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নয়, ফুটেজ সংগ্রহে ব্যস্ত।

- ব্যবসায়ীরা:

  - পানিওয়ালা ৩০ টাকার বোতল ৭০০ টাকায় বিক্রি করছে।  

  - রিকশাওয়ালা, সিএনজি চালক— ভাড়া ২০ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

  - সুযোগ পেলেই লুটেরা মনোবৃত্তি!

-  রাজনীতিবিদরা:

  - দুর্ঘটনার পিক টাইমে রাস্তা বন্ধ করে ফটোশুটের প্রতিযোগিতা।

  - ভুক্তভোগীদের চেয়ে মিডিয়া কভারেজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

- সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার:

  - অর্ধেক কন্টেন্ট বানাতে ব্যস্ত, বাকিরা গুজব ছড়াচ্ছে।

  - ট্র্যাজেডিকে ট্রেন্ডে পরিণত করার লড়াই।

এদিকে সেনাবাহিনী ও ডাক্তাররা কী করছিল?

- সেনাবাহিনী:

  - প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে জীবন বাচাতে লড়াই শুরু করেছে।

  - ইউনিফর্ম খুলে পুড়ে যাওয়া মানুষদের গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে, এবং এটাই হচ্ছে আমাদের প্রকৃত সেনাবাহিনীর পরিচয়—-আমি গর্বিত এমন কাজের জন‍্য।

  - যে দৃশ্য তাদের চোখে পড়েছে, তা আমাদের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন।

  - অথচ আমরা? "ওরা সংখ্যা গোপন করছে!"—এই আমাদের থিওরি?  

- ডাক্তাররা:

  - সিক লিভ (ছুটি) বাদ দিয়ে হাসপাতালে ফিরে এসেছে।

  - ঘণ্টার পর ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে চলেছে।

  - আর আমাদের প্রতিক্রিয়া? "এটা তো তাদের দায়িত্ব!"

  - ভাই, এই ঘটনা যেন না ঘটে—সেই দায়িত্ব তো অনেকেরই ছিল। কেউ কি পালন করেছে?

পাইলটদের নিয়ে অযৌক্তিক সমালোচনা

একদল পাইলটকে দোষ দিচ্ছেন, আরেকদল তাকে "হিরো" বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।

- একজন পাইলটেরও প্রাণের ভয় থাকে।

- সে শুধু ইউনিফর্ম পরেছে বলে নির্বিকারভাবে মরতে যাবে, এমন নয়।

- আপনি যদি উবারে রেটিং কম দেখলে গাড়িতে উঠেন না, তাহলে একজন ট্রেন্ড পাইলট কেন সেই বিমান চালাচ্ছিল—সেটা একবার ভেবে দেখেছেন?

আমরা বাঙালি—অকৃতজ্ঞতার চূড়ান্ত উদাহরণ

- আঙুল তোলার অভ্যাস আমাদের রক্তে।

- কিন্তু সঠিক দিকে আঙুল তোলেন না।

- ত্রুটিপূর্ণ বিমান কেনার সিস্টেম, নিরাপত্তা ফাঁকি দিয়ে বিল্ডিং অনুমোদন দেওয়া কর্তৃপক্ষ, মধ্যরাতে বোর্ড পরীক্ষার মতো জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া আমলা—এদের দিকে কেউ তাকায় না।

পরিশেষে একটি অনুরোধ

- যদি কিছুই না করতে পারেন, অন্তত দুই হাত তুলে একটি দোয়া করুন।

- এই ফালতু বিতর্কে সময় নষ্ট করে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো যেন ঢাকা পড়ে না যায়।

> "সিস্টেম ভাঙার কথা বলুন, যারা সিস্টেম ভেঙে জীবন বাঁচাচ্ছে—তাদের দোষ খুঁজবেন না।”