গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদের দালালমুক্ত করতে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম

বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৬:৫৮ অপরাহ্ন, ২২ অক্টোবর ২০২৪ | আপডেট: ৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
ছবিঃ বাংলাবাজার পত্রিকা
ছবিঃ বাংলাবাজার পত্রিকা

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলেও শেখ হাসিনা সরকারের চিহ্নিত দালালরা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বহাল তবিয়তে থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ১৫ দিনের মধ্যে গণমাধ্যম থেকে ফ্যাসিবাদের দালালদের বহিষ্কার করতে হবে। 

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী কালাকানুন বাতিল, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যমের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এ হুঁশিয়ারি দেন।

আরও পড়ুন: বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকাশ করা হয়নি উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদের হিসাব

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহামুদুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতন হলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থামেনি। ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ পরাজিত হলেও তারা ফিরে আসার চেষ্টা করছে। গণমাধ্যমে হাসিনা সরকারের চিহ্নিত দালালদের মাধ্যমে আবারো ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

আমরা ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি, আমাদের সংগ্রাম জারি রাখতে হবে। বাংলাদেশের সব সেক্টর থেকে ফ্যাসিবাদ দূর না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যমত্য থাকতে হবে। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘যেসব সাংবাদিক ফ্যাসিবাদের পক্ষে দালালি করেছে তাদের অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে। দেশ ও জনগনের বিরুদ্ধে গিয়ে যারা ফ্যাসিবাদের পক্ষ নিয়েছে তারা সাংবাদিক হতে পারে না। আন্দোলনে গুলি চালাতে যারা টকশোতে বক্তব্য দিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের উপহাস করেছেন তারা সাংবাদিক নন। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বার বার আহ্বান জানানোর পরও দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কুখ্যাত সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।

সেই সুযোগে তারা বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি তৈরির ষড়যন্ত্র করছে। আমি বলব, এটি এই সরকারের ব্যর্থতা।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘আজ ফ্যাসিস্ট মুক্ত দেশে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। কিন্তু ফ্যাসিস্টদের ঝড়ানো রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা করায় দালাল সাংবাদিকরা আমাদের জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বের করে দিয়েছিল। শেখ হাসিনার আমলে সাগর-রুনিসহ অসংখ্য সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলোর মালিকদের প্রতি আহ্বান জানাই, অবিলম্বে ফ্যাসিস্ট সরকারের দালাল সাংবাদিকদের অপসারণ করুন, নতুবা আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, ফ্যাসিবাদের দালাল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। সুষ্ঠু সাংবাদিকতার পথ সুগম করতে ফ্যাসিবাদী সরকারের তৈরি করা সব নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করতে হবে। আইন প্রণয়ন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে হবে। আমার দেশসহ যেসব পত্রিকাকে ফ্যাসিবাদী সরকার ধ্বংস করেছে তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আজও ফ্যাসিবাদের দোসররা বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করছে। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও শেখ হাসিনার দোসরদের পুর্ববাসনের ষড়যন্ত্র করছে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করে গণমাধ্যম সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। ফ্যাসিবাদের আমলে ৬৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদের দালাল মুক্ত করতে হবে। নাহলে ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংবাদিকদের নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামব।’

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন,সহ সভাপতি খায়রুল বাশার, একএম মহসিন, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুররশীদ আলম, সহ সভাপতি রফিক মোহাম্মদ, রাশেদুল হক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনেওয়াজ, ডিইইজের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ কান, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর, প্রেসক্লাবের নির্ভাহী কমিটির সদস্য শাহনাজ পলি, বিএফইজের অর্পণা রায় প্রমুখ।