রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারে ঐকমত্যকে ‘ইতিবাচক’ বললেন মির্জা ফখরুল

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৫:৪০ অপরাহ্ন, ২৯ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, ২৯ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সংস্কার নিয়ে ১২টি মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যকে ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিএনপি স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকের পত্রিকায় দেখলাম সব রাজনৈতিক দল সংস্কার ইস্যুতে ১২টি মৌলিক বিষয়ে একমত হয়েছে। এটি একটি বড় অগ্রগতি। আমরা সেই চেষ্টা ও কাজের জন্য জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ড. আলী রীয়াজ ও তার টিমকে ধন্যবাদ জানাই।”

আরও পড়ুন: চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অনেকে আমাদের বিরুদ্ধে বলেন, আমরা নাকি সংস্কার চাই না। কিন্তু সত্যটা হলো—সংস্কারের চিন্তাই বিএনপি থেকে এসেছে। ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।”

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি জিয়াউর রহমান অর্থনৈতিক সংস্কারও এনেছিলেন। তিনি মুক্তবাজার অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশের চেহারা বদলে যায়। যে দেশকে ‘বটমলেস বাসকেট’ বলা হতো, সেই দেশকে পরবর্তীতে সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র।”

আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা, কার্যক্রম নিষিদ্ধ

‘সংসদীয় সরকারব্যবস্থা ও কেয়ারটেকারও বিএনপির সংস্কার প্রসঙ্গে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ভূমিকাও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “দেশনেত্রী খালেদা জিয়া প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করেন। পরে জনগণের স্বার্থে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। সেই ব্যবস্থার অধীন তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে যেগুলো নিরপেক্ষ ছিল।”

বর্তমান সময়ের কিছু রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত ‘প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন’ (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ফখরুল। তিনি বলেন, “পিআর কী তা দেশের সাধারণ মানুষই বোঝে না। যারা ইভিএমে ভোট দিতেই জানে না, তারা পিআর কীভাবে বুঝবে? নতুন নতুন চিন্তা চাপিয়ে দিয়ে সংস্কারের নামে সমস্যা তৈরি করা উচিত নয়।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করুন, ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করুন এবং তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে বৈঠক করে নির্বাচন তারিখ দিন। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন।”

দলীয় চার নেতার চাঁদাবাজির ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, “বেদনায় নীল হয়ে যাই। আমরা রাজনীতি করি জনগণের পরিবর্তনের জন্য। যারা গুম হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন—তাদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়।”

তিনি বলেন, “শহীদ ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ ১৭০০’র বেশি নেতা-কর্মী গুম হয়েছেন। হাজার হাজার নেতা-কর্মী প্রাণ দিয়েছেন। সেই রক্তের মূল্য কত? সেই ত্যাগের দাম কী?”

শহীদ জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত শিশু একাডেমি সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “শিশুদের বিকাশের জন্য গঠিত এই প্রতিষ্ঠান সরিয়ে ফেলা ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা।”

আলোচনায় প্রয়াত শফিউল বারী বাবুকে স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “তিনি একজন বিরল প্রতিভার নেতা ছিলেন। তার স্মরণে একটি ফাউন্ডেশন গঠন করা উচিত।”

সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। এতে আরও বক্তব্য দেন আসাদুজ্জামান রিপন, আমানউল্লাহ আমান, তাহসিনা রুশদীর লুনা, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ফজলুল হক মিলন, হেলেন জেরিন খান, হারুনুর রশীদসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সকালে বনানী খেলার মাঠে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ ও ‘মায়ের ডাক’-এর যৌথ আয়োজনে ‘গণতান্ত্রিক পদযাত্রায় শিশু’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, “সংস্কার তখনই সফল হবে, যদি তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ জীবন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে।”