চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে একযোগে ২৯ কর্মকর্তার বদলি

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, ১৫ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১২:৫৩ অপরাহ্ন, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে একযোগে ২৯ জন কর্মকর্তাকে বদলি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বদলির এ তালিকায় রয়েছেন ৯ জন উপ-কমিশনার (ডিসি) এবং ২০ জন সহকারী কমিশনার (এসি)।

গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) কাস্টমস ও ভ্যাট প্রশাসন শাখার দ্বিতীয় সচিব মো. আবুল মনসুর স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক আদেশে এই বদলি কার্যকর করা হয়। আদেশ অনুযায়ী, উপ-কমিশনারদের বৃহস্পতিবারের (১৪ আগস্ট) মধ্যে এবং সহকারী কমিশনারদের ২১ আগস্টের মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মস্থল ত্যাগ না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবমুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

আরও পড়ুন: চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে কর্মবিরতি, পূর্ণ শাটডাউন এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায়ে বাধা সৃষ্টি করায় এ কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর।

এনবিআরের অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত মে ও জুন মাসে ৫৯ ঘণ্টার বেশি সময় কর্মবিরতি ও দুই দিনের কমপ্লিট শাটডাউন পালন করেন কর্মকর্তারা, যার ফলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা সরাসরি অন্তত সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েন। যদিও বাস্তব ক্ষতির পরিমাণ আরও কয়েকগুণ বেশি বলে দাবি ব্যবসায়ী মহলের।

আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা, কার্যক্রম নিষিদ্ধ

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আগেই বরখাস্ত করা হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে। অভিযোগ রয়েছে, তিনিই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে চট্টগ্রাম হাউজ অচল এবং এনবিআরকে জিম্মি করার পেছনে ভূমিকা রেখেছিলেন। এমনকি আন্দোলনের পেছনে সরকার পতনের একটি ‘গোপন রাজনৈতিক এজেন্ডা’ কাজ করছিল বলেও গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার তফসির উদ্দিন ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, “বাজেটের পর সাধারণত বদলি হয়। এটিও একটি রুটিন ওয়ার্ক। তবে কিছু কর্মকর্তা আছেন যাদের মাত্র ২ বছর পূর্ণ হয়নি, তবুও বদলি করা হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, উপ-কমিশনাররা ইতোমধ্যে অবমুক্ত হয়েছেন এবং রোববারের মধ্যে নতুন কর্মকর্তারা যোগ দেবেন।

বদলি হওয়া উপ-কমিশনারদের মধ্যে রয়েছেন: ইমাম গাজ্জালী, মো. সাইদুল ইসলাম, মো. কাউছার আলম, মমিনুল ইসলাম, কাজী রায়হানুজ্জামান, মো. জাকারিয়া, অনুরূপা দেব, মো. বিল্লাল হোসেন, উম্মে নাহিদা আকতার।

সহকারী কমিশনারদের মধ্যে রয়েছেন: মো. সাকিব হোসেন, মো. রাজিব হোসেন, মো. মেহেদী হাসান, মো. আইয়ুব, ইসলামুল হক, প্রদীপ দাস, সৌরভ দত্ত বিজয়, মুক্তা চৌধুরী, মো. ওয়াহিদুল হক সিউল, আফরিন জাহান নাওমীন, সাইদুর রহমান মুন্না, সুলতানুল আরেফীন, মো. রাশেদুল হক, মো. আতিকুর রহমান, মো. মোস্তফা কামাল, আলিফ রহমান, মো. রিজওয়ান আলমগীর, মো. আকরাম হোসেন, মো. নাজমুল আহসান, মো. জসীম উদ্দিন হাওলাদার।

বদলি হওয়া উপ-কমিশনার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, “কর্তৃপক্ষ যেটা ভালো মনে করেছে সেটাই করেছে। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি আদেশ প্রতিপালন করাই আমাদের কাজ।”

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি কাস্টম হাউজে একসঙ্গে এত বড় সংখ্যায় বদলি এই প্রথম। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রম কিছুদিনের জন্য ব্যাহত হতে পারে। তবে নতুন কর্মকর্তারা দ্রুত যোগদান করলে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলেও মত দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।