দেশের সর্বত্র মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে -পীর সাহেব চরমোনাই

Abid Rayhan Jaki
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:৪৬ অপরাহ্ন, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ | আপডেট: ৩:৪৮ অপরাহ্ন, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের সর্বত্র অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। কোথাও শান্তি নেই। সর্বত্র মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। দেশে গুম-খুনের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। ঘরে থাকলে খুন আর রাস্তায় বের হলে হয় গুম।

গতকাল বুধবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে ১৫-২৯ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী দাওয়াতি পক্ষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন: চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন

তিনি বলেন, মায়ের কোলের শিশুও আজ নিরাপদ নয়। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদীরা নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বিদেশী প্রভুদের কাছে আমাদের মাথা বিক্রি করে দিয়েছে। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা নিয়ে আমার আজ উদ্বিগ্ন। গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ হওয়ার জন্য লাখো মানুষ জীবন দেয়নি। আজ আমার দেশের সীমানা অরক্ষিত। সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের বিএসএফ গুল করে হত্যা করলেও বাংলাদেশ সরকার প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। একটি স্বাধীন দেশে এমন নতজানু পররাষ্ট্র নীতি মেনে নেয়া যায় না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাধীনতা আক্ষরিক অর্থেই রক্তে কেনা। কথা ছিল, দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। বৈষম্য দূর হবে। দুর্নীতি, দুঃশাসনমুক্ত দেশ গঠন হবে। এদেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিঃসৃত শাসনতন্ত্র হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর দেখা গেল, রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে কোন ধরনের জনমত যাচাই না করেই ভিনদেশিদের অন্ধ অনুসরণ করা হলো। সরকার পদ্ধতি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, অর্থনীতি নিয়ে মস্কো-ওয়াশিংটন দোলাচালে ব্যাহত হলো দেশগঠন। ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রের বিকাশ হুমকির মুখে পড়লো। শিল্প বিকাশ থমকে গেলো। আইন-শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়লো। রাজনীতি হয়ে পড়লো আদর্শহীন, পেশীশক্তি ও কালো টাকা নির্ভর। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আমরা ৭১ কে ধারণ করি। অসহায়, মজলুম ও গণমানুষের জন্য সংগ্রাম করি এবং এদেশের মানুষের বোধ

আরও পড়ুন: বেগম খালেদা জিয়ার ৮১ তম জন্মদিন আজ

বিশ্বাস ও ইসলাম নিঃসৃত নীতিতে নারীর উন্নয়ন ও মুক্তির আন্দোলন করি। দেশের সকল ধর্মের ও বিশ্বাসের মানুষের অধিকার এবং নিরাপত্তায় আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকি। আমরা সংঘাত নয়: বরং শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করি। আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। খেদমতে খালকের মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনের চেষ্টা করি। আমরা শুধু ক্ষমতা অর্জনকেই মুখ্য মনে না করে নীতির পরিবর্তনে কাজ করি। এমন বাস্তবতায় ১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী, উলামায়ে কেরাম, পীর মাশায়েখ, শিক্ষাবিদ ও গণমানুষের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে পীর সাহেব চরমোনাই (রহ.)-এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (রাজনৈতিক নিবন্ধন নং-০৩৪)। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ ভূখণ্ডের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, বোধ-বিশ্বাস বিশ্লেষণ করে এবং মানুষের মনস্তত্ত্ব অনুধাবন করে ইসলাম ও দেশীয় ঐতিহ্য উদ্ভূত নীতিকে দেশ পরিচালনার যথার্থ নীতি হিসেবে গ্রহণের দাবি নিয়ে জনমত গঠনের কাজ করে আসছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, মানুষ শান্তি মুক্তি চায়। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের দুঃশাসনে আজ দেশবাসী দিশেহারা। আল্লাহপ্রদত্ত জীবনব্যবস্থা উপেক্ষা করে মানবরচিত মতবাদের অনুসরণের কারণেই আমাদের এই পরিণতি। তাই আসুন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, দেশের স্বার্থরক্ষা এবং ঈমানী দায়িত্ব পালনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর পতাকাতলে শ্রেণী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সকলে সমবেত হই। তিনি আগামি ১৫-২৯ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী দাওয়াতি পক্ষ যথাযথ পালন করার জন্যে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, মানুষ ন্যায় থেকে বঞ্চিত। মানুষ ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। জাবিতে ছাত্রলীগের নেতা স্বামীকে বেধে স্ত্রীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে সর্বত্র ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তিনি বলেন, পৃথিবীতে যেখানে যতটুকু শান্তি তা কেবল ইসলামের জন্যই। তাই ইসলামকে বিজয়ী করার আন্দোলনে সকলকে শরীক হতে হবে।

প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, পুরো পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিলো। এ পৃথিবীকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করে গড়ে তোলেন মুহাম্মদ সা.। ফলে বর্বর, অসভ্য ও জাহেল মানুষগুলো সোনার মানুষে পরিণত হয়ে উঠে। ইসলামের ইতিহাসে যাকে আইয়ামে জাহিলিয়্যাত বলে অভিহিত করা হয়। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি করতে হলে ইসলামের আলোকে দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। তখন দেশে অশান্তি কী জিনিস তা থাকবে না। সর্বত্র শান্তির সুবাতাস বইবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, আলহাজ আলতাফ হোসেন, ডা. শহীদুল ইসলাম, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, ফজলুল হক মৃধা প্রমুখ।