কোটি টাকার অস্ত্রোপচার দেশে হয়েছে বিনামূল্যে

Abid Rayhan Jaki
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬:১৪ অপরাহ্ন, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ | আপডেট: ৬:৩০ পূর্বাহ্ন, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে প্রায় ১৫ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো দুই শিশুকে আলাদা করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারটি করা হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। বাইরের যে কোনও দেশে এই অস্ত্রোপচারটি করাতে গেলে খরচ পড়ে যেত কোটি টাকার উপরে। বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচারকে দেখা হচ্ছে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে। 

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ১০ম তলায় নাভা ও নোভা নামের শিশু দুটিকে দেখতে আসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

আরও পড়ুন: ফেসবুকে কমেন্ট করা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত

সেখানে শিশু দুটিকে সুস্থ অবস্থায় দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি প্রথম থেকেই এই বাচ্চা দুটির চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত। এর আগেও কয়েকটি অপারেশন হয়েছে, তখনও আমি এসেছি। আজকে আমি দেখলাম, বাচ্চা দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ও ভালো আছে।

এরপর দেশের চিকিৎসকদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, 'চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। আমাদের দেশে প্রচুর শিক্ষার্থী প্রতিবছর মেডিকেল পড়ালেখা শেষ করে চিকিৎসক হচ্ছেন। আমাদের চিকিৎসকরা যেমন মেধাবী তেমন দক্ষ। শুধু একটু সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে এবং তাদেরকে দায়িত্ব অনুযায়ী ভরসা দিয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ থেকে কোনও রোগীকে আর আগামীতে বিদেশ যেতে হবে না।'

আরও পড়ুন: বিজিবির হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হলো আহত হাতির চিকিৎসায় গিয়ে গুরুতর আহত ২ চিকিৎসকসহ ৩ জনকে

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, কিছুদিন আগেই আমরা ভুটানের ক্যান্সার আক্রান্ত এমন এক মেয়েকে চিকিৎসা দিয়ে ভালো করেছি, যার চিকিৎসা ভারত ও ব্যাংককেও সম্ভব হয়নি। কাজেই বাংলাদেশ পারে না এমন কোন কাজ নেই। বাংলাদেশেই এখন সব রোগের চিকিৎসা সুবিধা আছে। আজ বিএসএমএমইউতে নাভা ও নোভা নামের দুটি শিশুর জোড়া মেরুদণ্ড আলাদা করার অপারেশন সফল হলো। এটি সাধারণ কোনও কাজ নয়। এই অপারেশন ভারত বা বাইরের দেশে করতে গেলে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হত। কিন্তু বাংলাদেশে এই দুই অবুঝ শিশুর চিকিৎসা ব্যয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে করেছেন।

তিনি বলেন, আমি বলতে পারি, দায়িত্ব নিয়ে আমরা চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিলে বাংলাদেশ থেকে এখন জটিল সব রোগেরই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।


প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২১ মার্চ কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ী এলাকার পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানার স্ত্রী নাসরিন মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো নুহা-নাভার জন্ম দেন। সে বছর এপ্রিলে তাদের চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউর সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো স্পাইন সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে ভর্তি করা হয়।

গতকাল সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত তাদের শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে ৩৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১০০ জন মেডিকেল সদস্যের টিম অংশ নেন। ১৫ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে সফলভাবে আলাদা করা সম্ভব হয় নুহা-নাভাকে।

এর আগে ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি নুহা-নাভার প্রথম ধাপের সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই ধাপে নুহা-নাভার দেহে টিস্যু বর্ধনকারী চারটি এক্সপান্ডা ডিভাইস প্রতিস্থাপন করা হয়। এ অস্ত্রোপচারে ছিলেন বিএসএমএমইউর বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, নার্সিং অনুষদের ডিন ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বনিকসহ আরও ১০ চিকিৎসক। ওইদিনও ডা. সামন্ত লাল সেন উপস্থিত ছিলেন।