রাজনীতি-সাংবাদিক করাপ্টেড হলে দেশ চলে না: শামীম ওসমান

Abid Rayhan Jaki
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ৭:৪৭ অপরাহ্ন, ০৪ জুন ২০২৪ | আপডেট: ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, বাসা থেকে খুব ভালো একটি মুড নিয়ে বের হয়েছিলাম। তবে আজকের দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার একটি নিউজ আমাকে ভিষণ ভাবে কষ্ট দিয়েছে। নিউজটা চট্টগ্রামের। আমরা এখানে জাতীয় সংগীত গাইলাম। জাতীয় সংগীতের প্রতিটি লাইনে মা শব্দটা আছে। এই ইহকালে মায়ের উপর কারো অবস্থান হয় না। পত্রিকায় লেখা ‘চট্টগ্রামে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে খুন হলেন মা’। ওই মাদকাসক্ত ছেলে তার মায়ের কাছে মাদকের জন্য টাকা চেয়েছিলো। মা টাকা দেন নাই, তাই তার ছেলে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করেছে। কি উত্তর দিবেন আপনারা, আমিই বা কি উত্তর দিবো। এর আগে ঐশি আক্তার নামে একটি মেয়ে তার পুলিশ অফিসার বাবা ও মাকে ঘুমের মধ্যে মেরে ফেলেছে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি দুইটি পেশার লোককে কথা বলা উচিত। এক, রাজনীতিবিদ; যদি তার সত্য বলার সাহস থাকে। যদি সত্য বলার সাহস না থাকে তাহলে রাজনীতি করার দরকার নাই। আর সাংবাদিকদের সত্য লিখতে হবে অথবা সত্য নিউজ উপস্থাপন করতে হবে। এই দুইটা সেক্টর যদি করাপ্টেড হয়ে যায় তাহলে সমাজ চলে না, দেশ চলে না। এমন অবস্থায় সামাল দিবে কে?

আরও পড়ুন: ফেসবুকে কমেন্ট করা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন।

শামীম ওসমান বলেন, আপনারা লেখাপড়া শিখবেন, শিখেন। মানুষ হবেন তো? মানুষ হওয়া খুব প্রয়োজন। যদি সবাই মানুষই হতো তাহলে সারা পৃথিবীতে এত যুদ্ধ হতো না। ইজরায়েল গাজার ছোট্ট্ বাচ্চাদের গুলি করে মারতে পারতো না। ওরাও তো লেখাপড়া জানে, তাহলে ওরা মারছে কেনো? সারা পৃথিবীতে যদি অস্ত্র কম্পানিগুলো অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ করে, তাহলে পৃথিবীর কোন মানুষ এক দিনও না খেয়ে থাকবে না। কিন্তু ওরা এটা করবে না। কারণ ওরা মানুষ মারতে চায়।

আরও পড়ুন: বিজিবির হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হলো আহত হাতির চিকিৎসায় গিয়ে গুরুতর আহত ২ চিকিৎসকসহ ৩ জনকে

তিনি বলেন, যেখন কোন অন্যায় হয় তখন তোমাদের প্রতিবাদ দেখি না কেনো। ছাত্রলীগের ছেলেরা প্রতিবাদ করে, এটা তাদের কাজ। শামীম ওসমানও যদি কোন অন্যায় করে, তোমরা প্রতিবাদ করো না কেনো। তোমাদের কাজ হচ্ছে সমাজকে পরিবর্তন করে দেওয়া। পৃথিবীর অনেক দেশে শ্রমিক সমাজ আন্দোন করে। কিন্তু বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যেখানে ছাত্ররা আন্দোলন করে দেশ স্বাধীন করেছে। তোমরা জানো না হয়তো, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে সারা দেশে ১১জন ছাত্র মারা গিয়েছিলো। এই ১১জনের মধ্যে ১০জন নারায়ণগঞ্জের। এই নারায়ণগঞ্জ সব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। এই কলেজে ছাত্রদের পক্ষে কথা বলার কারণে এক সময়ে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে আমাকে ১৫ রাউন্ড গুলি করা হয়েছিলো। আমি লাফালাফি করছিলাম, আমার শরীরে গুলি লাগায় নাই। তখন আমার স্যার আমার সামনে এসে দাড়িয়েছিলো। পরে যখন আমাকে পারে নাই, পরিক্ষা চলাকালিন আবু আউয়াল নামের এক ছাত্রকে গুলি করে মেরেছিলো। আমাদের ৮৫জন ছেলে সেদিন গুলিতে আহত হয়েছিলো।

তিনি আরও বলেন, আমি তোমাদের সাহায্য চাই। আমার বয়স হয়ে গেছে, আমি পারি না। যেখানেই অন্যায়, অবিচার সে যেই হোক না কেন; হোক শামীম ওসমান, তোমাকে তার প্রতিবাদ করতে হবে। কারণ এই দেশ তোমার। লেখাপড়া করলে ভালো ভাবে করো, না হয় কইরো না। খেললে ভালো করে খেলো, না হয় খেইলো না।

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজের কথা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে এই নারায়ণগঞ্জের চেহারা পাল্টে যাবে। লিং রোড আরও সুন্দর হবে, এখনো পুরোটা হয় নাই। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়ক ১২০ফুট চওড়া হবে। রোডটা চাষাড়া এসে মিলিত হয়ে উপর দিয়ে লুপ হবে। রাইফেল ক্লাব পুরোটাই ভাঙ্গা পরবে। এটাকে অন্য কোথাও জায়গা দেওয়া হবে। এই লুপ গিয়ে নাগিনা জোহা সড়কে গিয়ে মিলিত হবে। তিনটা মেট্রো রেলের লাইন নারায়ণগঞ্জে যোগ হবে। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে। আইটি ইনস্টিটিউট হবে। এগুলোর কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। মেক্সিমাম কাজ এনে ফেলেছি। আমি চাই এই ট্রেন লাইন বন্ধ হয়ে যাক। চাষাঢ়া থেকে ২নং গেইট পর্যন্ত রেল লাইন দরকার নাই। আমি চাই এই শহরের সব ফুটপাত উঠিয়ে দিতে এবং তাদের অন্য কোথাও জায়গা করে দিতে।

তিনি বলেন, যাদের বাবা-মা আছে তাদের কাছে আমার অনুরোধ, আমি তোমাদের কাছে কিচ্ছু চাই না। তুমি আমাকে পছন্দ কইরো না। আমার বিপক্ষে থাকো। কিন্তু নিজের মা-বাবাকে সময় দাও। বাসায় ভাই-বোনদের সাথে আনন্দ করো। তুমি বাসায় গেলে যাতে মনে হয়, ঈদের আনন্দ আসছে।

আলোচনা সভায় তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে ও তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান রিয়াদের সঞ্চালনায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও শামীম ওসমানের সহধর্মিনী সালমা ওসমান লিপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল। আরও উপস্থিত ছিলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল, শামীম ওসমানের পুত্র  অয়ন ওসমান প্রমুখ।