শেরপুরে ব্রহ্মপুত্র ও দশানী নদীর ভাঙনে দিশেহারা মানুষ
শেরপুরে ব্রহ্মপুত্র নদ ও এর শাখা নদী দশানীর ভাঙনে দিশেহারা কামারেরচর ইউনিয়নের ৬ ও ৭নং চরের মানুষ। গত তিনদিনে চরাঞ্চলের শতাধিক বাড়ি-ঘর, কবরস্থান মসজিদ, ও বাজার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দিন-রাত ২৪ ঘন্টা ভাঙছে নদী। লোকজন তাদের মাথা গোজার শেষ সম্বল বসতঘর রক্ষা করতে পারছেন না। স্বপ্নের ঘরগুলো নিজ হাতে গড়ে নিজ হাতেই ভেঙ্গে সরিয়ে নিচ্ছেন নিরাপদ স্থানে। ৬ ও ৭নং চরের শতাধিক পরিবার গত কয়েক দিনে হারিয়েছেন শত একর জমি, বসতঘর। সব হারিয়ে তারা এ সঙ্কট মোকাবেলায় চরাঞ্চলে একটি বেরীবাঁধ নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন। জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ৪ নং চর হয়ে ব্রহ্মপুত্রের আদি চ্যানেল শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের ৬ নং চর এলাকা দিয়ে প্রবাহমান।
অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী দশানী কামারের চরের ৭নং চর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ৬নং চর বড়বাড়ির কাছে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই দুই নদীর সংযোগস্থলেও পানির তীব্র স্রোতে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন কামারেরচর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, গত তিনদিনে কৃষকের ফসলের জমি, বসতঘর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গ্রাস করেছে ব্রহ্মপুত্র ও দশানী। নদী ভাঙনের পাশাপাশি বন্যার পানিও বাড়ছে। উল্লিখিত দুই চরের হাজারো মানুষ সবজীচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সারাবছর এখানে সব ধরনের সবজী চাষ হয়। কিন্তু কয়েক দিনে ঢলের পানি ও নদী ভাঙনে সবকিছু পানিতে তলিয়ে গেছে। পাটের ক্ষেত, পটল, বেগুন, মরিচসহ সবজীক্ষেত পানির নিচে। কামারেরচর বাজারের সাথে ৬ ও ৭নং চরের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন হয়ে পড়েছে। নৌকা দিয়ে লোকজন বাজারে যাতায়াত করছেন।
আরও পড়ুন: সাবেক রাষ্ট্রপতির সড়কে টেম্পু ছাড়া কিছুই চলে না: ফাওজুল কবির
বিদ্যুতের খুঁটিগুলো পানির নিচে। বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যেকোন সময় বড় ধরণের প্রাণনাশের ঘটনা ঘটতে পারে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। সব মিলিয়ে দুর্বিসহ দিন যাচ্ছে চরের মানুষের। কথা হয়, ৬নং চরের বাসিন্দা গৃহবধু সমেলা (৩৫) বেগমের সাথে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নদী আমগরে সব গিল্লা খাইছে। তিন একর জমি ছিল। এখন সেখানে শুধু পানি পানি আর পানি। গত ৬ বছরে তিনবার বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে গেছে। এখন অন্যের বাড়িতে থাকি। এইবার সেই বাড়ি নদী গ্রাস করতাছে। কোথায় যামু জানি না।
গৃহবধূ মাজেদা বেগমের ভাষ্য- নদী ভাঙন ও বন্যার পানি আসার পর গত কয়েকদিনে তারা কোন সরকারী সাহায্য পাননি। সবকিছু হারিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তিনবেলা খেতে পারছেন না।কামারেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও শেরপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিদিন বাড়ছে নদী ভাঙন, পাশাপাশি বন্যার পানিও বাড়ছে। দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বেরী বাঁধ নির্মাণ না হলে কয়েক বছরের মধ্যে নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে ৬ ও ৭ং চর।সোমবার ও মঙ্গলবার গত দুদিন বন্যা কবলিত ব্রহ্মপুত্র ও দশানী নদীর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো: ছানুয়ার হোসেন ছানু। তিনি নৌকা করে কামারেরচর ইউনিয়নের ৬ ও ৭নং চর, চরমোচারিয়া ও চরপক্ষীমারী এলাকায় যান।
আরও পড়ুন: টেকনাফে নৌবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার
এসময় তাঁকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। তারা কামারেরচর এলাকায় একটি বেরীবাঁধ নির্মাণের দাবী জানান। এমপির সাথে এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ দলীয় নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সংসদ সদস্য এদিন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে কথা বলে সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। পাশাপাশি বেরীবাঁধ নির্মাণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন বলে সবাইকে আস্বস্থ্য করেন। শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নকীবুজ্জামান খাঁন এর ভাষ্য- স্থানীয় বাঁধ নির্মাণ ছাড়া কোনভাবেই ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন ঠেকানো যাবেনা। তিনি বলেন, আপাততঃ লোকজনকে নিরাপদ রাখতে আমরা অস্থায়ী ও জরুরী ভিত্তিতে কিছু কাজ হাতে নেবো। পাশাপাশি একটি বাঁধ নির্মাণের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু করেছি। তারপর প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। তিনি বলেন প্রতিদিন পানি বাড়ছে। এটি অব্যাহত থাকলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে। শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন,
ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে কাজ করছে প্রশাসন। মানুষ যাতে কোন অসুবিধায় না পড়ে সেজন্য সবধরণের সহায়তা দেওয়া হবে। শেরপুর-১ আসনের এমপি আলহাজ্ব মোঃ ছানুয়ার হোসেন ছানু বলেন, চরাঞ্চলের মানুষ খুব কষ্টে আছে। আমরা তাদের পাশে আছি। দ্রুত একটি বেরীবাঁধ নির্মাণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও পানি সম্পদ মন্ত্রীর কাছে যাবো। আশা করছি এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী পূরণ হবে।





