ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১০০ ছাড়ালো ইপিজেড কর্মী, ঠাঁই নেই হাসপাতালে

Sanchoy Biswas
এম.এ. কিবরিয়া, নাটোর থেকে ফিরে
প্রকাশিত: ৭:৪৩ অপরাহ্ন, ০১ জুন ২০২৫ | আপডেট: ৩:১২ পূর্বাহ্ন, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নাটোরের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হঠাৎ করেই একের পর এক ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন ঈশ্বরদী ইপিজেড শ্রমিকরা। গত তিন দিনে শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যাদের সবাই পাবনার ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানের (ইপিজেড) শ্রমিক। ধারণা করা হচ্ছে ওখানকার অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি খেয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন তারা।

এদিকে, হাসপাতালে পর্যাপ্ত সরকারি ওষুধ না থাকায়, জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের চিকিৎসার জন্য সিভিল সার্জন ,সেনাবাহিনী ও জেলা পুলিশ ৪০০ পিচ ইনজেকশন (আইভি স্যালাইন) পাঠিয়েছে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের সেবায় খুশি রোগী ও তাদের স্বজনরা।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেত্রকোণায় যুবদলের মিলাদ মাহফিল

রোববার (১ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে। আক্রান্ত শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে ডেনিম ভিনটেজ (এ্যাবা), নাকানো ইন্টারন্যাশনাল বিডি এবং আরও কয়েকটি কারখানার কর্মীরা।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ইপিজেডে খাবার ও পানি গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই শ্রমিকদের মধ্যে বমি, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানার উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। প্রথমে কয়েকজন হালকা অসুস্থতা অনুভব করায় ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যান। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।

আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে জাফলং থেকে লুট হওয়া ৭ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত ১১৩  জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অনেকে বাড়ি ফিরে গেলেও গুরুতর অবস্থায় বর্তমানে অন্তত ৯৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

এ বিষয়ে এ্যাবা কারখানার শ্রমিক সিয়াম রেজা বলেন, “আমি বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে কাজের ফাঁকে ইপিজেড এলাকার সরবরাহ করা পানীয় পানি (স্লালাই) খেয়েছিলাম। এরপর থেকেই পেট ব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়।” নাকানো ইন্টারন্যাশনালে কর্মরত অভিষেক কুমারও একই অভিজ্ঞতা জানান।

হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গিয়ে চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স, চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।

এবিষয়ে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. খোরশেদ আলম রানা বলেন, “শ্রমিকদের খাবার বা পানিতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খাদ্যজনিত বিষক্রিয়ার কারণেই তাদের ডায়রিয়া, বমি ও পেট ব্যথা দেখা দিয়েছে। রোগীর চাপ সামাল দিতে ছুটি বাতিল করে অতিরিক্ত নার্স ওয়ার্ডে কাজ করছে।

এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মুনজুর রহমান 'বাংলাবাজার পত্রিকা'কে জানান, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া/কলেরায় আক্রান্ত হয়ে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে শতাধিক রোগী। আমাদের হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ৫০ শয্যা হওয়ায় জায়গা সংকটের সমস্যা হলেও আমাদের চিকিৎসা দিতে কোনো অবহেলা হয়নি । আমরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিতে কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে অতিরিক্ত ডিউটির মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য সিভিল সার্জন, সেনাবাহিনী ও জেলা পুলিশের সহযোগিতায় জরুরী ভিত্তিতে রোগীদের জন্য আরো ৪০০ পিচ ইনজেকশন (আইভি স্যালাইন) নেওয়া হয়েছে।

নাটোর সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মাদ মুক্তাদির আরেফীন বলেন, ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত।