দেওয়ানগঞ্জে বাড়ছে জ্বরের প্রকোপ

Sanchoy Biswas
আশরাফ হোসেন রাজা, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর)
প্রকাশিত: ৬:৫১ অপরাহ্ন, ১৭ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১:৩৯ পূর্বাহ্ন, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ঋতু পরিবর্তন এবং হঠাৎ প্রচণ্ড গরম-ঠান্ডার কারণে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে বাড়ছে জ্বরের প্রকোপ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন গড়ে অন্তত চার থেকে পাঁচ শত রোগী জ্বরের চিকিৎসার জন্য আসছেন। এ রোগে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কম হলেও আক্রান্তের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে। উপজেলার প্রায় অধিকাংশ পরিবারের এ রোগের রোগী দেখা যাচ্ছে। জুলাইয়ের শুরু থেকে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আগস্টের শেষের দিকে এ জ্বরের প্রকোপ কমবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, এ জ্বর ভাইরাসজনিত রোগ। এ জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রথমে ঠান্ডা, কাশি হবে। পরে মাথা, চোখ ও শরীরে ব্যথা অনুভূত হবে, শরীর দুর্বল হবে। এ জ্বর ছোঁয়াচে। এক পরিবারে একজন আক্রান্ত হলে খুব দ্রুত ওই পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ জ্বর সাধারণত চার থেকে পাঁচ দিন স্থায়ী হয়। বাতাস ও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ রোগ খুব দ্রুত ছড়ায়। জ্বর নামলেও অন্তত দুই সপ্তাহ আক্রান্ত রোগীর শরীরে দুর্বলতা থাকতে পারে। এ সময় ভিটামিন সি-সহ ফলমূল ও তরল খাবার বেশি বেশি খেতে হয়।

আরও পড়ুন: মহাখালীতে পেট্রোল পাম্পে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০ ইউনিট

সূত্রটি আরও জানায়, এ উপজেলায় দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ছাড়াও ২টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ৩০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন বহিরাগত অন্তত ১৫০ জন রোগী জ্বরের চিকিৎসার জন্য আসেন। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন রোগী এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে খুব কম সংখ্যক রোগী ভর্তি হন। ৯০ শতাংশ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। শিশু ও বয়স্করা এ জ্বরে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

পোল্যাকান্দি নামাপাড়ার রেজুয়ান জানান, হঠাৎ করে অতিরিক্ত গরমে প্রথমে হাঁচি হয়। পরে জ্বর শুরু হয়। জ্বরের সঙ্গে মাথা ও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। তিন দিন পর শুধু প্যারাসিটামল খেয়ে তার জ্বর নেমে যায়। কিন্তু তার পরিবারে আরও তিনজন এ জ্বরে আক্রান্ত হন। তিন দিন পার হয়ে গেছে, তারা এখনও সেরে ওঠেনি।

আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে নারীকে গলা কেটে হত্যা মামলার প্রধান আসামি নীরব গ্রেপ্তার

কলিকাপুরের মহসিন রেজা বলেন, হঠাৎ প্রচণ্ড গরমে গত রবিবার থেকে তার শরীরে জ্বর ওঠে। এ জ্বর থেমে থেমে ওঠে। শরীর দুর্বল করে। এখনও তিনি ডাক্তার দেখাননি। বাজার থেকে প্যারাসিটামল কিনে খাচ্ছেন। সোমবারের মধ্যে জ্বর না সেরে গেলে তিনি ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

বড়খাল গ্রামের শফিকুল ইসলামের ভাষ্য, সুস্থ শরীরে রাতে ঘুমিয়ে যান। সকালে উঠে দেখেন শরীরে প্রচণ্ড জ্বর। একদিন বাজার থেকে প্যারাসিটামল কিনে খান। তাতেও জ্বর না সাড়ায় সরকারি হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখান। দুই দিন পর জ্বর সেরে গেছে। তবে তার বাড়িতে আরও তিনজন এ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।

পাথরেরচরের আব্দুল জব্বার জানান, আমার বাড়িতে প্রথমে আমার স্ত্রীর এ জ্বর হয়। পরে একে একে পরিবারের সবার এ জ্বর হয়। ডাক্তারের চিকিৎসা নেওয়ার পাঁচ-ছয় দিন পর আমাদের সবার জ্বর সেরে গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. এস.এম. অরিফুল ইসলাম জানান, জুলাই মাসের শুরু থেকে এ জ্বরের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ জ্বর ছোঁয়াচে। পরিবারের একজনের হলে পরিবারের সবার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমি নিজেও এ জ্বরে আক্রান্ত। তবুও প্রতিদিন হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। তুলনামূলক কম চিকিৎসায় এ জ্বর সেরে যায়। তবে শিশু ও বয়স্করা এ জ্বরে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আহসান হাবীবের সাথে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে ভাইরাসজনিত জ্বরের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন অন্তত ১৫০ জন জ্বরের রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। আমাদের কাছে আসা রোগীদের আমরা প্রপার ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি এবং সরবরাহ থাকলে ওষুধ সাপোর্ট দিচ্ছি।