সকালে ক্লাস, বিকেলে চা বিক্রি, শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ালেন আনসার বাহিনীর জেলা কমান্ড্যান্ট

Any Akter
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৩:৫০ অপরাহ্ন, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৫:৩৬ অপরাহ্ন, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

শরীয়তপুরে এক প্রত্যন্ত গ্রামের বেড়ে ওঠা বৃষ্টি খাতুন (১১) পড়াশোনা আর খেলাধুলা করার কথা থাকলেও সংসারের বোঝা কাধে নেওয়ায় একবেলা মাঠে খেলতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি তার। মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান এদিকে বাবা প্রতিবন্ধী হওয়ায় নিজের ভরণ পোষণ এবং বৃদ্ধ দাদা-দাদির দায়িত্ব এখন তার ঘাড়ে। তিন বছর ধরে পরিবারের হাল টানছেন সে।

আরও পড়ুন: অমানবিক পুশইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুনকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করলো বিজিবি

পালং মধ্য বাজারের পৌর সুপার মার্কেটের পাশে মোবাইল সার্ভিসের দোকানের সামনে চা বিক্রি করেন বৃষ্টি। মাদ্রাসা বন্ধ থাকলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চা বিক্রি করেন সে। আর এই চা বিক্রির টাকা দিয়েই চালাচ্ছেন নিজের পড়াশোনা ও সংসারের যাবতীয় খরচ। বৃষ্টি খাতুন শরীয়তপুরের ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন: জামালপুরের আলোচিত মনিরুল হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার

বৃষ্টি খাতুনের মানবেতর জীবন-সংগ্রামের কথা জানতে পেরে মাদ্রাসায় পড়ার স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিয়েছেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর শরীয়তপুর জেলা কমান্ড্যান্ট মোঃ জাহিদুল ইসলাম। কথা অনুযায়ী বৃষ্টি খাতুনের মাদ্রাসার বেতন ও পঞ্চম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার ফি, ব্যাগ, বোকরা, জুতা সহ অন্যান্য খরচ প্রদান করেছেন তিনি।

শিশু বৃষ্টি খাতুন বলেন, আমার মা আমাকে ছোট রেখে নিজের সুখের চিন্তা করে অন্যত্র বিয়ে করে চলে গেছেন। প্রতিবন্ধী বাবা ও দাদা-দাদি নিয়ে আমার অনেক চিন্তা হয়। মাদ্রাসায় আমি মনিং শিফটের শিক্ষার্থী হওয়ায় আমার ক্লাস সকালে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমার দাদি চায়ের দোকান পরিচালনা করেন। একটায় মাদ্রাসা ছুটি হলে আমি মাদ্রাসা থেকে সরাসরি দোকানে চলে আসি। এরপর দাদি বাসায় গিয়ে রান্না করে নিয়ে এলে খেতে পাই। কোনদিন বিকেলে, কোনদিন রাতে বাসায় যাই।

তিনি আরও বলেন, আনসার বাহিনীর শরীয়তপুর জেলা কমান্ড্যান্ট মোঃ জাহিদুল ইসলাম স্যার আমার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছে। আমার মাদ্রাসার বেতন, পরীক্ষার ফি, ব্যাগ, বোকরা, জুতা, ক্রয় করে দিয়েছেন। এখন আমি ভালো ভাবে পড়াশোনা করতে পারব এটা আমার কাছে আনন্দের সংবাদ। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন শিক্ষক হয়ে অন্য এতিম ছেলে মেয়েদের বিনামূল্যে পড়াতে পারি।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর শরীয়তপুর জেলা কমান্ড্যান্ট মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ভিডিপি'র সদস্য'র মাধ্যমে জানতে পারি বৃষ্টির পরিবারের জীবন সংগ্রামের কথা। পরবর্তীতে বৃষ্টির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পড়াশোনা খোঁজখবর নিয়েছিআনসার বাহিনীর মহাপরিচালক মহোদেয় দিক নির্দেশনায় গ্রাম পর্যায়ে আনসার বাহিনীর সেবা পৌঁছে দিতে মানবিক এমন কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করেন। বৃষ্টির পড়াশোনার খরচ আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে বহন করা হয়েছে। সমাজে এমন অনেক বৃষ্টি রয়েছে, সচেতন মানুষরা একটু উদ্যোগ নিলেই এরা সমাজদেশের কল্যাণে কাজ করার জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারে