প্রস্তুতি ছাড়াই উদ্বোধন, বাণিজ্য মেলা এখনো না জমায় ক্রেতা-বিক্রেতারা হতাশ

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় চতুর্থ দিনে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ২০ শতাংশ স্টলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অবকাঠামোর কাজ শেষ না হওয়ায় হতাশা নিয়ে ফিরছেন দর্শনার্থীরা। মেলা প্রাঙ্গণ পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের বিক্রিও বাড়ছে না। পাশাপাশি ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে সকালের দিকে তেমন দর্শনার্থী আসছে না। ব্যবসায়ীরা জানান, মেলায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও বিক্রি একেবারেই নগণ্য।
ইবিপি সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল নতুন শহরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৩১টি। এর মধ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে প্যাভিলিয়ন রয়েছে ৫৭টি। মেলায় ভারত, পাকিস্তান, হংক, তুরস্কসহ ১০টি দেশের ১৭টি স্টল রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রথম ১০ দিনে অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করলেন ৯৬ হাজারের বেশি করদাতা
সরেজমিন দেখা যায়, মেলায় গতকাল বিকেল থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় কিছুটা বেড়েছে। তবে মেলার মূল ভবনের পশ্চিমাংশের বেশির ভাগ স্টলের নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। হাতুড়ির টুংটাং শব্দে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। মূল ভবনের পূর্ব পাশের ইলেকট্রনিকস, কসমেটিকস ও ফার্নিচারের শোরুমের জন্য জায়গা দেয়া হয়েছে। এখনো বেশ কিছু ফার্নিচারের দোকানের নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া অনেক স্টলের নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো মালামাল সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। মেলা প্রাঙ্গণে স্টল নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত কাঠ, বাঁশসহ নানা জিনিস পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে কিছুটা ঘিঞ্জি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যে কারণে মেলার সৌন্দর্য অনেকটা নষ্ট হচ্ছে। তবে আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সব স্টলের নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মেলায় আগত দর্শনার্থীরা জানান, প্রতিবছরই অপ্রস্তুত অবস্থায় মেলা শুরু করা হয়। এটা খুবই হতাশাজনক। দর্শনার্থীরা দূর-দূরান্ত থেকে মেলায় ঘুরতে আসেন। কিন্তু ৪০ টাকা টিকিট কেটে মেলায় এসে দেখি যদি এখনো অপ্রস্তুত। ইপিবি কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল সবগুলো স্টল যাতে মেলা শুরুর আগে থেকেই নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে কি না সে ব্যাপারে কড়া নজরদারি রাখা।
আরও পড়ুন: পাম অয়েলের দাম লিটারে কমলো ১৯ টাকা
কথা হয় রাজধানী ঢাকার উত্তরা থেকে আসা আদনানুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আজকে মেলায় ঘুরতে এসেছিলাম। মেলার সামনের দিকের পরিবেশ অনেক চাকচিক্যময় ও সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। তবে ভেতরের অনেক অংশে এখনো স্টলের নির্মাণকাজ চলছে। এটি আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক। মেলা উদ্বোধনের পরও যদি নির্মাণকাজ চালাতে হয়, তাহলে মেলা শুরুর আগে তারা কী করেছে।’
কথা হয় আড়াইহাজার থেকে আসা আনিশার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বান্ধবীদের সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছি। এসে দেখি এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি মেলা প্রাঙ্গণ। তাই হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। মেলার স্টলগুলোতে কসমেটিস ও অন্যান্য পণ্যের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি মনে হচ্ছে। এটি অনেকটা হতাশ করেছে আমাদের। এ ছাড়া মেলায় আসতে এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাসে দীর্ঘ যানজট পেয়েছি।’
দোকানের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ঢাকা থেকে মেলা এখানে স্থানান্তর হওয়ায় তাদের জন্য কিছুটা অসুবিধা হয়ে গেছে। এখানে দোকানের জন্য কর্মচারী নিয়োগ দেয়া, মালামাল আনা-নেয়ায় ঝামেলার কারণে অনেকেরই দোকান নির্মাণে কিছুটা দেরি হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহম্মেদ চৈাধুরী বলেন, ‘প্রতিবছরই মেলা শুরুর কয়েক দিন পর স্টল নির্মাণ সম্পন্ন হয়। আশা করি শুক্রবারের মধ্যে মেলার সব স্টল নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যাবে। গত ১ ডিসেম্বরে সব স্টল মালিকদের স্টল নির্মাণকাজ শুরু করতে বলেছিলাম। তারা দেরি করেছে। আমরা এ বছর সঠিক সময়েই সব কাজ সম্পন্ন করেছি।’