জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শহীদের ঋণ পরিশোধের এখনই সময়: তারেক রহমান

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৮:৫৯ অপরাহ্ন, ০১ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১১:১৩ পূর্বাহ্ন, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জনগণের জবাবদিহিমূলক সরকার ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের শহীদদের ঋণ পরিশোধের এখনই সময় বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, বহু মানুষের ত্যাগ-তিতীক্ষায় নতুন বাংলাদেশ দেখেছে। বাংলাদেশের ঘটনাবহুল ইতিহাসের একটি রক্তাক্ত অধ্যায় জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান। 

গতকাল বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত ‘গণঅভ‍্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন: সরকারি কর্মচারীদের বেতন সমন্বয়ে জাতীয় বেতন কমিশনের প্রথম সভা আজ

তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে জনগণের সামনে একটি আধুনিক ও প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের রাজনীতির প্রধান অঙ্গীকার নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির রাজনীতি। আমাদের এবারের রাজনীতি এই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও দৃষ্টান্ত স্থাপনের। 

জাতীয় স্বার্থে ও জাতীয় ইস্যুতে ঐক্যমত থাকাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামীতে আর কোনো অপশক্তি যেন বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়, মাথাচাড়া দেওয়ার দুঃসাহস না দেখায়; সে লক্ষে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রয়েছে, ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে। 

আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী প্রধানের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই: আইএসপিআর

চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ৩৬ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেছে বিএনপি। এদিন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনাসভা এবং শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি। অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার, আহত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ৬৩টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, বুদ্ধিজীবী, সিনিয়র সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষও উপস্থিত ছিলেন। শহীদ পরিবারকে ক্রেস্ট ও সম্মাননা দেওয়া হয়। অভ্যুত্থানের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

তারেক রহমান বলেন, দেড় দশকের আন্দোলনে গুম-খুনের শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। অপহরণের তালিকা অনেক দীর্ঘ। শুধু জুলাই আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ জনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত দেড় হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন। ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এক হাজারের বেশি পঙ্গু হয়েছেন। শিশু-বাচ্চারও শহীদ হওয়া থেকে বাদ যায়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় এভাবে শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম ও মুগ্ধর মতো অনেকেই জীবন দিয়েছেন। মানুষের প্রশ্ন যে- এভাবেই কি মানুষ জীবন দিতে থাকবে।

তিনি বলেন, একটি দেশের জন্য ৫৪ বছর কম সময় নয়। এই সময়ে মানুষের ত্যাগ আমরা ভুলে যেতে চাই না। বরং যারা দেশ ও জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করি তাদের অঙ্গীকার হলো- নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সুশৃঙ্খল রাজনীতি, ওয়াদা পূরণের রাজনীতি। এ সময় ভবিষ্যতে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশ গঠনের কিছু পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করে কাজ করব। জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। জাতীয় ঐক্যে সব দলের এক হওয়া জরুরি নয়। তাঁবেদার অপশক্তি যাতে মাথাচড়া দিতে না পারে সেদিকে জাতীয় ঐক্য অটুট রয়েছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ‘জুলাই-আগস্ট’ গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন এই কমিটির সদস্য সচিব ও বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম আদিব, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমি, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান,ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, এমএ মালিক, খায়রুল কবির খোকন,হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ,সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস,  ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মীর সরফত আলী সপু, নজরুল ইসলাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, মিফতাহ সিদ্দিকী, নিলোফার চৌধুরী মনি, ড. মাহদী আমিনসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আহত ব্যক্তি, শহিদ পরিবার ও এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ১২ দলীয় জোটের সৈয়দ এহসানুল হুদা, শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম, পেশাজীবী ও বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, সংগ্রাম সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান,আমরা বিএনপি পরিবারের আহবায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, বাসসের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আনোয়ার আলদীন, অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, আমিরুল ইসলাম কাগজী, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ড. আব্দুল হাই সিদ্দিকী, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, প্রকৌশলী মো. মোস্তফা-ই জামান সেলিম (সিআইপি), প্রকৌশলী একেএম আমিরুল মোমিন বাবলু, সাংবাদিক রাশেদুল হকসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী।