কলকারখানার দুষনে সয়লাভ নরসিংদীর নদ-নদী, বাঁচানোর দাবী পরিবেশবাদীদের

Abid Rayhan Jaki
শরীফ ইকবাল রাসেল, নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৫:৫২ অপরাহ্ন, ০৪ জুন ২০২৪ | আপডেট: ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, ০৪ জুন ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নরসিংদী জেলার চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা নদী। এর শাখা নদীগুলোর মধ্যে- ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ, হাড়িধোয়া, পাহাড়িয়া, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র অন্যতম। এসব নদ-নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠছে নরসিংদীর শিল্পাঞ্চল। কিন্তু দূষণের কারনে বর্তমানে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এসব নদ-নদী। নদী তীরের মানুষকে বাঁচাতে হলে এই নদ-নদীকে রক্ষার দাবী জানান নদী তীরের মানুষজন।

নরসিংদীবাসীর আশ্বিবাদ হিসেবে নরসিংদীর আড়িয়াল খাঁ, হাড়িধোঁয়া, ব্রহ্মপুত্র, পাহাড়িয়া, মেঘনা শাখা নদী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র। আর মেঘনা নদী থেকে সৃষ্টি হয়ে শীতলক্ষায় গিয়ে সংযুক্ত হওয়া ৬০ কিলোমিটারের ব্রহ্মপুত্র অন্যতম। এসব নদী দিয়ে এক সময় বড় বড় জাহাজ আর পাল তোলা নৌকা চলতো। ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য করতে ছুটে আসতেন নদীপথেই। সেই থেকে নরসিংদীর নদী তীরে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকায় নদী সংকুচিত হতে থাকে। ফলে এখন বছরের বেশির ভাগ সময়ই নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় চলেনা নৌকাও। এ অবস্থায় এসব নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস পেলে প্রায় ৫'শ ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২শ ৩২ কিলোমিটার নদী পুণ:খনন করে সরকার। এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে নদী তীরের কলকারখানার ক্যামিকেল মিশ্রিত বিষাক্ত পানি পাইপের সাহায্যে নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমেও পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে। এ কারণে এই নদীতে এখন আর মাছ বাঁচে না।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেত্রকোণায় যুবদলের মিলাদ মাহফিল

রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের নদী নিয়ে বছরব্যাপী গবেষনার ফলাফলে সবচেয়ে দূষিত নদীর তালিকার দ্বিতীয় স্থানে নরসিংদীর ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের হাঁড়িধোয়া। এ নদীর পানিতে দ্রবিভূত অক্সিজেনের পরিমান ০.৬ এবং ক্ষারতার পরিমান ৪.১। ফলে এসব নদ-নদীর দূষিত পানি মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিষাক্ত বর্জ্যে এ নদী এখন এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এতে এখন আর মাছ পাওয়া যায় না, এমনকি পশুপাখির জন্যও সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হাড়িধোয়ার পানিতে নামলেই হচ্ছে খাঁজলী, পাচড়া, চর্মসহ নানা ধরনের মারাত্মক রোগ। এসব কারনে নদীর পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর বলে

বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন একাধিকবার। বর্তমানে নরসিংদীর নদ-নদীর পানি এতোটাই বিষাক্ত হয়েছে যে এতে মাছসহ জলজ প্রাণী বসবাসের অযোগ্য হয়ে দু-তীরের আঘাছা পর্যন্ত মারা যাচ্ছে। হাড়িধোয়ার পর এবার খরস্রোতা শীতলক্ষাও দুষনে পরিণত হচ্ছে। কেননা এই শীতলক্ষায় এক সময় বোয়াল, রুই, কাতলা, কাচকিসহ কমবেশী সকল প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। বিগত কয়েক বছর যাবৎ বছরের এই সময়ে শীতলক্ষার কাপাসিয়া থেকে ঘোড়াশাল পর্যন্ত নদীর সকল মাছ মরে ভেসে উঠছে। আর এসব মাছ শিকারের জন্য ধুম পরে

আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে জাফলং থেকে লুট হওয়া ৭ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার

নদীর তীরের মানুষের। দিনের বেলায় মাছ শিকারের জন্য পাখিদের উড়তে দেখা যায়। এই অবস্থায় নদীর দু- তীরের মানুষের দাবী-নদীতে কারখানার দুষিত ক্যামিকেল মিশ্রিত বর্জ্য ফেলা বন্ধের পাশাপাশি ব্যবহার

উপযোগী করা। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে নরসিংদী পরিবেশ আন্দোলন (আপন) সাধারণ সম্পাদক প্রলয় জামান, কিছু কলকারখানার বিষাক্ত গ্যাসের কারনে নদীর মাছ মারা যাচ্ছে, প্রতিবছর এভাবে নদী দুষন হতে থাকলে

আর নদীর মাছ মারা গেলে একসময় পরিবেশ হুমকির সম্মুখিন হবে। এছাড়া দেশে মাছের আকাল দেখা দিলে আমিষের ঘাটতি দেখা দেবে। তাই এবিষয়ে প্রশাসনের নজর দেয়া প্রয়োজন। নরসিংদী ড. বদিউল আলম বলেন, নদীর পানি দুষিত হওয়ার কারণ ও মাছ মারা যাওয়ার বিষয়ে সঠিত তথ্য বের করে প্রতিকারের লক্ষে শীঘ্রই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান। তিনি আরও জানান, যারা নদী দুষনে দায়ী তাদের বিষয়ে নদীরক্ষা কমিশনের সভায় আলোচনা ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহন করা

হবে।