মুন্সীগঞ্জে মেঘনা-গোমতি নদীতে আবার সক্রিয় ডাকাত জিতু বাহিনী, হত্যাসহ ২৯ মামলার আসামি

Any Akter
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১:৫৮ অপরাহ্ন, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫ | আপডেট: ৪:৩১ পূর্বাহ্ন, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার মেঘনা ও গোমতি নদীতে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে জলদস্যু ডাকাত জিতু রাঢ়ীর বাহিনী। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে জিতু তার সহযোগীদের নিয়ে ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার নৌপথ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসা, নৌযানে ডাকাতি ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, জলদস্যু জিতু ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে গৃহবধূ মমতাজ বেগম হত্যা, চাঞ্চল্যকর হালিম হত্যা, কিশোর সাগর হত্যা, র‍্যাবের সাথে গোলাগুলি, ভোট কেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স লুট, শ্যালকের স্ত্রীকে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা, চাঁদাবাজিসহ ২৯টি মামলা থাকলেও বহাল তবিয়তে জল ও স্থল পথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জলদস্যু জিতু গং।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেত্রকোণায় যুবদলের মিলাদ মাহফিল

অন্যদিকে ২০১১ সালে সংঘটিত হালিম হত্যা মামলা তুলে নিতে বাদী মিনু বেগম ও স্বাক্ষী হারুন সরকারকে প্রতিনিয়ত মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে জলদস্যু জিতু রাঢ়ী। এ কারনে প্রান ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে হত্যা মামলার স্বাক্ষী যুবদল কর্মী হারুন সরকার। এ বিষয়টি তুলে ধরে হত্যাসহ ২৯ মামলার আসামী জিতু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত বছরের ৩ অক্টোবর বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর লিখিত আবেদন করলেও গত ৪ মাসেও জলদস্যুদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন যুগ ধরে বাহিনীর প্রধান জলদস্যু জিতু রাঢ়ী ও তার দলের সদস্যরা গজারিয়ার গুয়াগাছিয়া, পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁ, চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকাধীন মেঘনা ও গোমতি নদীতে ডাকাতি, হত্যা, যাত্রীবাহী নৌযানে ডাকাতি, বালু ও মাটি বহনকারী বাল্কহেড এবং মাছের ট্রলার থেকে চাঁদা আদায়সহ নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।

আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে জাফলং থেকে লুট হওয়া ৭ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার

স্থানীয় সূত্র জানায়, মেঘনা ও গোমতী নদী মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, চাঁদপুরের মতলব উত্তর, কুমিল্লার দাউদকান্দি ও নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও সীমানা ঘেঁষা হওয়ায় নদী পথে সংঘটিত অপরাধ কর্মকান্ডের দায়-ভার নিতে চায় না কোনো জেলার থানা পুলিশ। আর এ সুযোগে জলদস্যু জিতু বাহিনী মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়ার মেঘনা ও কুমিলার দাউদকান্দির গোমতি নদীতে গড়ে তুলেছে অপরাধের বিশাল নেটওয়ার্ক। ফলে জিতু বাহিনীর অত্যাচারে জিম্মি হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ।

স্থানীয় গ্রামবাসী জানায়, নৌপথে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, খুন রাহজানিসহ অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় জায়গা করে নেয় জলজস্যু বাহিনীর প্রধান জিতু ও তার দলের সদস্যরা। জিতু ও তার বাহিনীর সদস্যরা একাধিকবার পুলিশ ও র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। জেল থেকে বের হয়ে আবারও শুরু করে একই কর্মকাণ্ড। এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানায় জলদস্যু জিতু ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের মধ্যে ২০১২ সালের ৩১ মার্চ গজারিয়ার মেঘনা নদীতে ডাকাতি করতে গিয়ে জলদস্যু জিতু ও তার বাহিনী মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪ বছরের এতিম কিশোর সাগরকে হত্যা করে। ট্রলার যোগে মতলব থেকে বাড়ি ফেরার পথে ডাকাতের কবলে পড়ে প্রান হারায় সাগর। এ ঘটনায় নিহতের দুলাভাই মহসিন মিয়া বাদী হয়ে জলদস্যু জিতুকে প্রধান আসামী করে গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।

২০১১ সালের ২৪ মার্চ গভীর রাতে জলদস্যু জিতু ও তার বাহিনী ঘরে ঢুকে আমেরিকা প্রবাসী গৃহবধু মমতাজ বেগমকে (৫৫) খুন করে ঘরে রক্ষিত স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুটে নেয়। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় জিতুর ভাই।

এ ঘটনার এক সপ্তাহ পর ৩১ মার্চ মতলব উত্তর বেলতলী লঞ্চঘাট থেকে দাবীকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় দোকান থেকে ডেকে নিয়ে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের যুবক হালিমকে হত্যা করে জলদস্যুরা। এ ঘটনায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানায় জলদস্যু জিতুকে প্রধান আসামী করে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে নিহতের মা মিনু বেগম।

২০০৯ সালের ২৮ মে রাতে গোমতি নদীর গুয়াগাছিয়ার বসুরচর এলাকায় জলদস্রু জিতু ও তার বাহিনী ডাকাতি করার প্রস্তুতিকালে র‍্যাবের সাথে গোলাগুলি হয়। গোলগুলি শেষে র‍্যাব জলদস্যু জিতুর দুই ভাই অলি ও কলিমউদ্দিনকে অস্ত্রসহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করে। এ ব্যাপারে র‍্যাব বাদী হয়ে গজারিয়া থানায় মামলা দায়ের করে। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে জলদস্যু জিতু রাঢ়ীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার যোগাযোগ বা বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গজারিয়া থানায় (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, নৌ ডাকাত ও জলদস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে পুলিশ। বাহিনীর প্রধান জিতু রাঢ়ী ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। শিগগিরই জলদস্যু জিতু রাঢ়ীকে আইনের আওতায় নেওয়া সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নৌ ডাকাত ও জলদস্যুেদের অপরাধ কর্মকাণ্ড রোধে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।