ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্কের টিকা নেই, দুশ্চিন্তায় রোগীরা

Sadek Ali
অমর গুপ্ত, দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১:৪৯ অপরাহ্ন, ২১ মে ২০২৫ | আপডেট: ৬:২৫ পূর্বাহ্ন, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। টিকা না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। নিরুপায় হয়ে কেউ কেউ চড়া দামে বাইরে থেকে কিনছেন, কেউ আবার টিকা না পাওয়ার ভুগছেন দুশ্চিন্তায়।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিতে প্রতিদিন আসেন ২০ থেকে ২২ জন। রোগীরা টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংশ্লিষ্টদের।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেত্রকোণায় যুবদলের মিলাদ মাহফিল

মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, টিকা নিতে এসে অপেক্ষা করছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। অধিকাংশই এসেছেন জলাতঙ্কের টিকা নিতে। কিন্তু টিকা না থাকায় জরুরি বিভাগ থেকে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বিদায় দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়মতো ডোজ না নিলে আগের টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে জাফলং থেকে লুট হওয়া ৭ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার

ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রিফা আক্তার বলেন, ‘গত সপ্তাহে তাকে বিড়াল কামড় দিয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা দিতে এসে জানতে পারেন সরকারি টিকা নেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাহির থেকে র‌্যাবিস নামের টিকা কিনে দিতে হচ্ছে। প্রথম দিন ৬০০ টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া গেলে দ্বিতীয় ডোজ দিতে টিকা কিনতে হয়েছে ৭০০ টাকা দিয়ে।’

দিনমজুর আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কুকুর কামড়ে ডান পায়ে গভীর ক্ষত হয়েছে। ডাক্তার র‌্যাবিস নামের টিকা লিখে দিয়েছেন। দাম ৬৫০ টাকা। এত টাকা আমার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়।’

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর সিভিল সার্জন দপ্তরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২৪ সালের ২৪ এপ্রিল র‌্যাবিস নামের ১০০ ডোজ টিকা পাওয়া যায়। সেই টিকা দিয়ে ৩০০ রোগীকে দেওয়া হয়েছে। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ থেকে র‌্যাবিস নামের ৩৪০ ডোজ টিকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। বরাদ্দকৃত টিকা দিয়ে এক হাজার ৩৬০জন রোগীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত টিকা চলতি বছরের জানুুয়ারি মাসেই শেষ হয়ে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি মে মাস পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোনো প্রকার টিকা বরাদ্দ পাওয়া যায়নি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) মোছা. সেলিনা আক্তার বলেন, ‘প্রতিদিন নতুন রোগী আসছেন, কিন্তু সরবরাহ খুবই অপ্রতুল, তাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের টিকা দেওয়া যাচ্ছে না। এতে বহু রোগী টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের ক্ষোভ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ আমাদের হাতে কিছুই নেই।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘উপজেলায় প্রতি মাসে র‌্যাবিস ও ইমিউনগ্লোবুলিন মিলিয়ে অন্তত ৪০০ ডোজ টিকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সিভিল সার্জনের মাধ্যমে সরবরাহ আসে মাত্র ১০০টি, যা কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তবে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত কোন টিকা বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।