নরসিংদীতে প্রসূতি নারীর পেটের ভিতর কাপড় রেখেই সেলাই, সংকটাপন্ন নারী

Sanchoy Biswas
আশিকুর রহমান, নরসিংদী
প্রকাশিত: ৯:৩৫ অপরাহ্ন, ১৫ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৩:৩৫ অপরাহ্ন, ১৫ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নরসিংদীতে এক প্রসূতি নারীর সিজারের সময় ১৮ ইঞ্চি 'মব' (রক্ত পরিষ্কার) করার কাপড় পেটের ভিতর রেখে সেলাই করার অভিযোগ উঠেছে ডাক্তারের বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি ঘটে শহরের বাসাইল এলাকায় অবস্থিত নরসিংদী সিটি হাসপাতালে।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেত্রকোণায় যুবদলের মিলাদ মাহফিল

ভুক্তভোগী মোসা. লিমা আক্তার (২৮) শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের দত্তেরগাঁও মির্জাকান্দি গ্রামের রহিম মিয়ার স্ত্রী। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার। ভুক্তভোগী ওই নারী বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জুন লিমা আক্তারের প্রসব বেদনা দেখা দিলে নরসিংদী শহরের বাসাইল এলাকায় অবস্থিত নরসিংদী সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেলে তাকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. শিউলি আক্তার। এ সময় লিমা এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এরপর ২১ জুন দুপুরে লিমা আক্তারকে ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। লিমা আক্তার বাড়ি ফেরার পর তিনি পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন।

আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে জাফলং থেকে লুট হওয়া ৭ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার

এ বিষয়টি নিয়ে সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভুক্তভোগী নারীর ভাই জহিরুল ইসলাম। এ অবস্থায় গত ২৫ জুন ফের ভুক্তভোগী নারীকে পুনরায় নরসিংদী সিটি হাসপাতালে নিয়ে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে সেখানে কিছু ধরা পড়েনি বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পরে ভুক্তভোগী নারীকে নরসিংদীর আরেকটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক দ্রুত তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন এবং তার পেটে একটা কিছু রয়েছে বলে ধারণা দেন। সে অনুযায়ী স্বজনরা রোগীকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান এবং নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

সেখানে পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানকার চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষা শেষে নিশ্চিত হন তার পেটে রক্ত পরিষ্কারের 'মব' টুকরো রয়েছে, দ্রুতই অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানান।

৩ জুলাই গভীর রাতে চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ.এইচ.এম. শাখাওয়াত হোসেন দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করে ওই নারীর পেট থেকে ১৮ ইঞ্চি আকৃতির এক 'মব' (রক্ত পরিষ্কার) করার কাপড়ের টুকরো বের করেন। বর্তমানে ভুক্তভোগী ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ভুক্তভোগী নারীর বড় ভাই জহিরুল ইসলাম জানান, সিজার অস্ত্রোপচার করে এখন আমার বোন মৃত্যু পদযাত্রী। পেটে ইনফেকশন হয়ে গেছে, এখনো পেট ফুলে আছে, দুর্গন্ধ বের হয়, ব্যথায় প্রতিনিয়ত কাতরাচ্ছে সে। দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে মিলিয়ে ৫ দিন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হয়েছে। এখনো সে সংকটাপন্ন। শিশুটিও মায়ের সেবা এবং বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত, ঝুঁকিতে আছে শিশুটিও।

এ অবস্থায় মানসিক ও আর্থিকভাবে পুরো পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। তিনিও আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করেছি। বিএমডিসিতে অভিযোগ করবো এবং পারিবারিক সিদ্ধান্তে মামলা দায়ের করবো। আমরা এরকম জঘন্যতম চিকিৎসার প্রতিকার চেয়ে বিচার চাই।

নরসিংদী সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন মিয়া জানান, বিষয়টি আমরা জানার পর খোঁজখবর নিয়েছি। রোগীর বাড়িতেও গিয়েছি। দেড় লাখ টাকায় সমঝোতা করার চেষ্টা করেছি। তারা আরও অনেক বেশি টাকা চায়। ভুল করে বিষয়টি হয়ে গেছে, সেটি তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আমরা রোগীর চিকিৎসার দায়িত্বও নেওয়ার কথা বলেছি।

এ বিষয়ে নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মোঃ আমিরুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরকম জঘন্যরকম ভুল হতে পারে না। শুনেছি রোগী সংকটাপন্ন। রোগীর জীবন বিপন্ন করে তুলে এতো বড় ময়লা পরিষ্কার করার 'মব' কাপড় পেটে রেখে সেলাই করে ফেলেন কিভাবে? এর প্রতিকার দরকার।