পরিবেশ ন্যায়বিচারে কঠোর অবস্থান অন্তর্বর্তী সরকারের: রিজওয়ানা হাসান

Sadek Ali
জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, আশুলিয়া
প্রকাশিত: ৩:০২ অপরাহ্ন, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১০:২৭ পূর্বাহ্ন, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ ন্যায়বিচার ও জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সাভারের ব্র্যাক সিডিএমে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস-এ ভার্চুয়াল প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুন: অমানবিক পুশইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুনকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করলো বিজিবি

রিজওয়ানা হাসান বলেন, তাঁর সারাজীবনের লড়াই একই—কর্পোরেট দখলদারিত্ব থেকে মানুষ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করা এবং অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে শক্তিশালী আইনি কাঠামোর মাধ্যমে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের এখন তিনটি প্রধান অগ্রাধিকার—সুষ্ঠু নির্বাচন, গুরুত্বপূর্ণ শাসনব্যবস্থার সংস্কার, এবং শিক্ষার্থীনেতৃত্বাধীন আন্দোলনে নিহতদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

উপদেষ্টা জানান, পরিবেশ প্রশাসনে সংস্কার ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ২২ বছর ধরে নিষিদ্ধ থাকা একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ব্যাগের কঠোর প্রয়োগ, প্লাস্টিকমুক্ত অঞ্চল সম্প্রসারণ, নদী–বনজ বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং বন্যপ্রাণী–জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা জোরদারের কথা তিনি তুলে ধরেন। সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় নতুন বননীতিতে ‘ফ্রি, প্রিয়র অ্যান্ড ইনফর্মড কনসেন্ট’–বিধান যুক্ত হওয়াকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন: জামালপুরের আলোচিত মনিরুল হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পর্যটন নিয়ন্ত্রণ, বিপজ্জনক বায়ুদূষণ কমাতে চলমান অভিযান এবং জলবায়ু ঝুঁকির ক্রমবর্ধমান চাপ—বিশেষত ফেনীর ভয়াবহ বন্যা, সীমান্তপারের আকস্মিক পানিপ্রবাহ, লবণাক্ততার বিস্তার—এসব বিষয়ও তিনি বক্তব্যে তুলে ধরেন। জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য স্বচ্ছ ও ন্যায্য অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, উন্নয়নের অগ্রাধিকার পুনর্গঠন জরুরি। মেগা প্রকল্পনির্ভরতা কমিয়ে জলবায়ু–ঝুঁকিপ্রবণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে জানান, সরকারি সব দপ্তরে রুফটপ সোলার স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নির্মূলে সরকারের চলমান উদ্যোগের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।পরিবেশ ন্যায়বিচার মূল্যবোধনির্ভর ধারণা, মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, মানুষ ও প্রকৃতিকে মূল্য দিতে চাইলে কর্মপরিকল্পনায় তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। 

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকার এসব সংস্কার টিকিয়ে রাখবে এবং আরও এগিয়ে নেবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, ইউএনডিপির অ্যাসিস্ট্যান্ট রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সরদার এম. আসাদুজ্জামান, সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম, বেলার চেয়ারম্যান মির্জা কামরুল হাসান এবং বেলার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা ইসলাম।