প্রধান উপদেষ্টা: জনগণের প্রতি সদয় হোন, অপসারণ করুন অযোগ্যদের

Any Akter
এম. এ. মাতিন
প্রকাশিত: ৫:৩৬ অপরাহ্ন, ২২ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ভূমিকাঃ-উপদেষ্টা নয়, বোঝা?

একটি রাষ্ট্র যখন ক্রমাগত ভুল সিদ্ধান্তে, নীতিগত জটিলতায় এবং নেতৃত্ব সংকটে নিমজ্জিত হয়—তখন কেবল প্রধান উপদেষ্টা বা প্রধানমন্ত্রী নয়, বরং তাদের পাশে থাকা মন্ত্রী বা মন্ত্রীর ময’দায় নিয়োগ করা উপদেষ্টা পরিষদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

আরও পড়ুন: অল্পের জন্য রক্ষা পেল তামিম!

বাংলাদেশে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ যেন এ এক ‘কাগুজে পদ’ধারীদের অকার্যকর মিছিল’—যারা না পারে কার্যকর পরামর্শ দিতে বা সরকারের দৈনন্দিন কায’ক্রম সুচারু ভাবে পালন করতে না পারে ভবিষ্যতের পথ দেখাতে।

বাংলাদেশে উপদেষ্টা পরিষদ: পদ আছে, প্রভাব নেইঃ

আরও পড়ুন: শহিদ জিয়ার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আলোকবর্তিকার উৎসব ‘অমর একুশ’

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক বা সাংস্কৃতিক কোনো জায়গায়ই দৃশ্যমান নেতৃত্ব দেখাতে পারছে না।

এই পর্ষদে থাকা অনেক সদস্য:-

দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে থেকেও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেননি,

কেউ কেউ বয়স ও বার্ধক্যের ভারে নীতিনির্ধারণে সম্পূর্ণ অক্ষম,

আবার কেউ দুর্নীতি বা জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ।

বাস্তব চিত্রঃ-

অর্থনীতি নিয়ে কোনো কার্যকর উপদেশ নেই: টাকার মান পতন, বৈদেশিক ঋণের বোঝা, মূল্যস্ফীতির চাপ—এসব নিয়ে উপদেষ্টারা কার্যকর কোন সমাধান দিতে ব্যর্থ।

বিদেশনীতি অচল:  পরনির্ভরতামূলক একমুখী কূটনীতি এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কোনো কৌশলগত পদক্ষেপ নেই।

শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে স্থবিরতা: উপদেষ্টারা অতীত অভিজ্ঞতার বাইরে যেতে পারেন না—ফলে কোনো উদ্ভাবনী চিন্তা বাস্তবে রূপ পায় না।

কমদক্ষতা, নৈতিক অবক্ষয় ও সিদ্ধান্তহীনতা—একত্রে জাতীয় বিপর্যয়ঃ-

উপদেষ্টা পরিষদের ব্যর্থতার পেছনে রয়েছে তিনটি প্রধান সংকট:-

১. কমদক্ষতা ও বার্ধক্যঃ-

অনেক উপদেষ্টার বয়স ৭০–৮০ পেরিয়ে গেছে। নীতিনির্ধারণে তারা এখন আর সমসাময়িক বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে পারেন না।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে একদিকে, আর অপর দিকে উপদেষ্টা পরিষদে আছে এমন সব মুখ, যাঁদের চিন্তা এখনো analog যুগে আটকে।

২. নৈতিক দুর্বলতা ও দুর্নীতিঃ-

গণমাধ্যমে বহুবার এসেছে—কিছু উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

তবুও সরকার তাঁদের রাখছে কেবলমাত্র আনুগত্যের কারণে। এটি জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি ধৃষ্টতা।

৩.নীতিহীন সিদ্ধান্ত ও সমন্বয়ের অভাবঃ- 

বাংলাদেশের প্রধান নীতিগুলো—যেমন শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ—সবখানেই নীতি একেক দিকে যাচ্ছে।

উপদেষ্টারা নিজেদের কমে’র মধ্যে সমন্বয় করতে ব্যর্থ, ফলে পুরো সরকারিভাবে একটি নীতিগত বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে।

এনজিও-ভিত্তিক পরামর্শের সীমাবদ্ধতাঃ-

বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এনজিও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে অধিক জ্ঞানী মনে করেন বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে এবং তাদের সংখ্যা অনেক এবং এরা অনেকেই অভ্যন্তরীণ প্রশাসন, কূটনীতি বা জাতীয় নিরাপত্তার বাস্তবতা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন।

এনজিওতে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্মানজনক—কিন্তু একটি রাষ্ট্র চালাতে হলে প্রয়োজন:-

গভীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ,

নিরাপত্তা কৌশল ও প্রশাসনিক বাস্তবতা,

এবং জনসাধারণের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল চাহিদা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

এসব বিষয়ে তাঁদের সীমাবদ্ধতা প্রতিনিয়ত স্পষ্ট হচ্ছে।

রাজনৈতিক আনুগত্য বনাম পেশাদার নেতৃত্বঃ-

বাংলাদেশে উপদেষ্টা নির্বাচন এখন অধিকাংশ সময়ই হচ্ছে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে।

প্রশ্ন হচ্ছে:-

“একজন হ্যাঁ-মানুষ কি রাষ্ট্র চালাতে পারে?”

“যে নিজের ব্যর্থতা দেখেও নির্লজ্জ থাকে, সে জাতিকে কোন আলো দেখাবে?”

যখন উপদেষ্টা পরিষদ মানে হয়ে দাঁড়ায়ঃ-

পুরস্কার হিসেবে আসন পাওয়া,

দায়মুক্তির প্রতীক,

কিংবা ‘পদভারে’ মুখচুনা কিছু নাম—

তখন সে পরিষদ একটি ব্যর্থ প্রতিরোধহীন রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি মাত্র।

করণীয়:সময় এসেছে শুদ্ধিকরণেরঃ-

এই মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টা এবং সরকার যদি সত্যিকারের নেতৃত্ব ও ভবিষ্যতের চিন্তা নিয়ে এগুতে চায়, তাহলে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন।

যে ধাপগুলো অবিলম্বে প্রয়োজনঃ-

অযোগ্য, বার্ধক্যজনিতভাবে অক্ষম, দুর্নীতিবাদী উপদেষ্টাদের পদত্যাগ নিশ্চিত করা।

জনসম্মুখে উপদেষ্টাদের দায়িত্ব ও পরামর্শের ফলাফল প্রকাশ করা।

নতুন উপদেষ্টা নির্বাচনে শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত সাফল্য ও প্রভাব বিশ্লেষণ বাধ্যতামূলক করা।

ভবিষ্যতমুখী, প্রযুক্তিবান্ধব, দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন মানুষদেরকে নেতৃত্বে আনা।

উপদেষ্টা পরিষদে নারীর অংশগ্রহণ এবং তরুণ নেতৃত্বের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।

উপসংহার: বিলাসিতা নয়, সময়ের দাবিঃ-

বাংলাদেশের মতো একটি উচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ, সম্ভাবনাময় দেশ অযোগ্য উপদেষ্টাদের নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার মত বিলাসিতা বহন করার অবস্থানে নেই।

উপদেষ্টারা রাষ্ট্রের সঠিক দায়িত্বশীল ভূমিকা পরিচালনা করার এবং  সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী। কিন্তু আজ তারা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ‘ব্ল্যাঙ্ক ট্যাঙ্ক’—যাদের চিন্তা নেই, দায়বোধ নেই, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নেই।

রাষ্ট্র পরিচালনার ‘মাথা’ যদি পঁচে যায়, তবে শরীরও পঁচে যাবে—এটাই ইতিহাসের নিয়ম।

এখনই সময় পদক্ষেপ নেওয়ার:- 

প্রধান উপদেষ্টার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জনগণের প্রতি সদয় হোন অপসারণ করুন অযোগ্যদের, গড়ে তুলুন নতুন নেতৃত্ব।

রাষ্ট্র ও জনগণের ভবিষ্যৎ সেই সৎ, যোগ্য এবং দুর্নীতিমুক্ত ব‍্যাক্তিদের হাতেই সুরক্ষিত হোক।