প্রকাশিত খসড়া
‘ব্যাংক-কোম্পানি বহিঃনিরীক্ষণ বিধিমালা ২০২৪’ এর উপর বিশেষজ্ঞ মতামত

ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্ষমতা পাবে মূলধন, মুনাফার ক্ষেত্রে উইন্ডো ড্রেসিং বা অন্য হিসাবের অর্থ সমন্বয় হয়েছে কিনা- তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার। এই লক্ষ্যে 'ব্যাংক-কোম্পানি বহিঃনিরীক্ষণ বিধিমালা, ২০২৪' নামে আসছে নতুন গাইডলাইন। ইতোমধ্যেই খসড়া প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত খসড়া ‘ব্যাংক-কোম্পানি বহিঃনিরীক্ষণ বিধিমালা, ২০২৪’ এর উপর-কোম্পানি বহিঃনিরীক্ষণ, ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং ও বিশেষজ্ঞদের মতামত। ‘দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার’ পক্ষ থেকে দেশে খ্যাতনামা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে খসড়া বিধিমালা ২০২৪ এর উপর সংক্ষিপ্ত মতামত তুলে ধরা হলো:
প্রথমত, খসড়া ‘ব্যাংক-কোম্পানি বহিঃনিরীক্ষণ বিধিমালা, ২০২৪’ কি ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন, ২০১৫-এর সাথে সংগতিপূর্ণ?
আরও পড়ুন: গণ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে হতাশার মুখোমুখি
ফাইনান্সিয়াল রিপোটিং আইন, ২০১৫ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন যার ৩ ধারার অধীনে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে অন্যান্য প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কর্তৃক মনোনীত একজন ডেপুটি গভর্নরও একজন সদস্য। প্রণীত আইনটিতে নিরীক্ষক নির্বাচন, নিরীক্ষকের কার্যাবলী, নিরীক্ষকের অপসারণ পদ্ধতি বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। এ সকল বিষয়ে বিধিমালা প্রণয়নকালে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও এই আইনের সাথে সংগতি রেখেই তা করা আইনসম্মত বলে আমরা মনে করি ।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক ৯.৯.২০১৫ তারিখে গৃহীত ফাইনান্সিয়াল রিপোটিং আইন, ২০১৫ (২০১৫ সনের ১৬ নং আইন) জনস্বার্থ সংস্থাসমূহের ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কার্যক্রমকে একটি সুনিয়ন্ত্রিত কাঠামোর আওতায় আনয়ন, হিসাব ও নিরীক্ষা পেশার স্ট্যান্ডার্ডস প্রণয়ন, যথাযথ প্রতিপালন, বাস্তবায়ন, তদারকি এবং এতদসংক্রান্ত অন্যান্য কার্যাবলী সম্পাদনের নিমিত্ত একটি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত একটি আইন।
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীর: আলাদা পরিচয় থেকে জাতীয় মূলধারায়
খসড়া ‘ব্যাংক-কোম্পানি বহিঃনিরীক্ষণ বিধিমালা, ২০২৪’ এর উপর মতামত অধ্যায়ওয়ারী নিম্নে সন্নিবেশিত করা হল:
দ্বিতীয় অধ্যায়: বহিঃনিরীক্ষক নিয়োগ
বিশেষজ্ঞরা জানান,
কোম্পানি আইনে নিরীক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ ক্ষমতা শেয়ারহোল্ডারদের। বার্ষিক সাধারণ সভায় একবার নিরীক্ষক নিয়োগের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সমীচিন নয়। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিধি হতে পারে না ।
তৃতীয় অধ্যায়: বহিঃনিরীক্ষার আওতা ও দাখিলযোগ্য প্রতিবেদন
বিশেষজ্ঞদের মতে,
এখানে বর্ণিত প্রতিবেদনসমূহ বিধিবদ্ধ নিরীক্ষার (Statutory Audit) আওতাভূক্ত কিনা তা বিবেচনা করা হয় নি। যেমন: অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন: অন্তর্বর্তীকালীন নিরীক্ষার জন্য ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যাংকের বহিঃনিরীক্ষককে এর জন্য দায়বদ্ধ করা যাবে না। ব্যবস্থাপনা প্রতিবেদন এবং বিশেষ প্রতিবেদনের জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপকগণ দায়ী থাকার কথা। আর প্রতিটি ব্যাংক মাসিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে গোপনীয় প্রতিবেদন প্রদান করার কথা।
নিরীক্ষা পদ্ধতি BSA (Bangladesh Standards of Auditing) এর নির্দেশনা অনুযায়ী হবার কথা। নিরীক্ষকের নিরীক্ষা পদ্ধতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হতে পারে না, যদি হয়ে থাকে তা সীমিত হয়ে যাবে ।
ষষ্ঠ অধ্যায়: তফসিলী ব্যাংকের বহিঃনিরীক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ
বিশেষজ্ঞরা বলেন,
‘‘১৩(১)- বাংলাদেশ ব্যাংক সময় সময় ব্যাংক-কোম্পানিসমূহে বহিঃনিরীক্ষার জন্য অনুমোদিত বহিঃনিরীক্ষকের তালিকা প্রণয়ন করিবে এবং তাহা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করিবে।’’
এখানে ‘সময় সময়’-এর স্থলে ‘প্রতি বৎসর জানুয়ারি মাসে’ কথাগুলি প্রতিস্থাপিত হওয়া প্রয়োজন ।
‘‘১৩(৫)-তা যদি হয় বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত বহিঃনিরীক্ষককে অনুমোদিত বহিঃনিরীক্ষকের তালিকা-বহির্ভূত করতে পারবে।’’
একে এভাবে প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন: ‘‘১৩(৫)-তা যদি হয় বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত বহিঃনিরীক্ষককে ব্যাংকিং কোম্পানিজ আইনের বিধি-বিধান এবং FRC-এর মতামতের ভিত্তিতে অনুমোদিত বহিঃনিরীক্ষকের তালিকা বহির্ভূত করতে পারবে, যা স্পষ্টীকরণ সহকারে নিরীক্ষককে লিখিতভাবে অবহিত করবে।’’
ষষ্ঠ অধ্যায়: বহিঃনিরীক্ষকের পদ শূণ্য হওয়া:
সংশ্লিষ্টদের মতে,
এখানে প্যারা-১৪(১) এবং (২) কে নিম্নের বাক্য দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে:
বহিঃনিরীক্ষকের পদ শূন্য হলে কোম্পানি আইনের বিধিমালা প্রতিপালিত হবে।
এখানে উল্লেখ্য, বহিঃনিরীক্ষক বুঝাতে যে স্থিতিপত্র নিজের নামসহ স্বাক্ষর করবে তাকেই বুঝাবে। বিষয়টি Document Verification Code (DVC) dated 1.12.2020 হতে আরও সুস্পষ্ট করা হয়। ইতোপূর্বে সিএ ফার্মসমূহ ফার্মের নামে স্থিতিপত্র স্বাক্ষর করত, বর্তমানে যা রহিত করা হচ্ছে। কোন ব্যক্তিগত পার্টনারের ভুলের জন্য সিএ ফার্মকে দায়ী করা সমীচিন নয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেন, ‘মনে রেখ, অপরাধের শাস্তি অপরাধী ব্যতীত অন্যের উপর বর্তাবে না । পিতার অপরাধের শাস্তি পুত্রের উপর এবং পুত্রের অপরাধের শাস্তি পিতার উপর বর্তাবে না ।
৬। বর্তমান প্রেক্ষিতে FRC, ICAB এবং BSEC শুধুমাত্র স্বাক্ষরকারী পার্টনারকেই Delist-করে, ফার্মকে নয়। আমাদের মতে, পার্টনারকে Delist করে ফার্মকে অর্থদন্ড করা যেতে পারে। যদি কাজের পরিধি বিবেচনা করা হয়, তবে ফার্মপ্রতি সর্বোচ্চ ব্যাংক-অডিট সংখ্যা ৬টির স্থলে ৩টিতে সীমিত করা প্রয়োজন। দেশের বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষার জন্য অডিট ফার্মের সংখ্যা বাড়ানো উচিৎ। কেবলমাত্র অভিযুক্ত পার্টনারকে Delist করে অন্য পার্টনারদের অডিটের সুযোগ দিলে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রতি বৎসর জানুয়ারি মাসে Cash Subsidy-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা সমীচীন। ফার্মকে Delist করার কারণে ফার্ম Cash Subsidy Audit হতেও বাদ পড়ে যায়, যার ফলে Cash Subsidy Audit-এর জন্য জনবল নিয়োগে ও অফিস স্পেস ভাড়া বাবদ অডিট ফার্মের যে ব্যয় হয়, তা ফার্মের পক্ষে আর পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। ফার্ম আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং কাজের উন্নয়নের গতিতে ভাটা পড়ে। এ ধরনের পরিপত্র জারির আগে ICAB, FRC, BSEC-এর মত স্বীকৃত নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের মতামত নেয়া প্রয়োজন ।