বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মান: চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সেনাবাহিনীর অবদান
শিক্ষা একটি দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যাপারে বলা হয়েছে। এই নীতির কেন্দ্র বিন্দু হলো নাগরিকদের চিন্তাশীল, যুক্তিবাদী, দেশ প্রেমিক এবং দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা। বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে শিক্ষার প্রবৃদ্ধির হার ও শিক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারণে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে শিক্ষার গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ, সমতা ও আধুনিকায়ন এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। বাস্তবতা হল যে আন্তর্জাতিক স্তরে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক নয়। ২০২২ সালের পারিবারিক আয় ও ব্যয় জরিপের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭৪% এবং অন্য সূত্র অনুযায়ী ২০২১ সালে তা ছিল ৭৬%। যদিও সাধারণ সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবুও বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি এবং উল্লেখযোগ্য অংশের মৌলিক দক্ষতার অভাবের মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার সর্বদা শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে এবং প্রতিবছর এই খাতের জন্য বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ করে আসছে। জাতির সেবায় সর্বদা নিয়োজিত থাকার উদ্দীপনায় এবং সরকার ও সরকারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পালনের প্রয়াসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় অগ্রগতির লক্ষ্যে তার যৌথ দায়িত্ব পালন করে আসছে।
বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত পাঁচটি স্তরে বিভক্ত: প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক (শ্রেণি ১ ৫), মাধ্যমিক (৬ ১০), উচ্চ মাধ্যমিক (১১ ১২), এবং উচ্চ শিক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ)। বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার্থীর ভর্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার ও বেসরকারি উভয় খাতেই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তার ঘটেছে। তবে “নতুন পাঠ্যক্রম” প্রবর্তন, শ্রেণি পরিকল্পনা ও পরীক্ষার ধরন পরিবর্তন করার মত পদক্ষেপগুলো মান উন্নয়নে কতটা কার্যকর হচ্ছে সে বিষয়ে নানা মতভেদ রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক–মাধ্যমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে স্থগিত বার্ষিক পরীক্ষা, বিপর্যস্ত শিক্ষাপঞ্জি
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হলো—
অনেক স্কুলে পাঠদানের পদ্ধতিতে বিশ্লেষণী ও সমস্যা সমাধান মুখীশিক্ষা দানের অভাব রয়েছে। শিক্ষক প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষক সংস্কার এখনও সেবার মান বা কৌশলগত উন্নয়নে যথেষ্ট নয়। গ্রামাঞ্চল ও শহরতলি এলাকায় অনেক স্কুল কলেজে পরিমিত শিক্ষক নেই, পর্যাপ্ত শ্রেণি কক্ষ নেই, প্রযুক্তি সুবিধা অপ্রতুল। ডিজিটাল অবকাঠামো (ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ই লার্নিং) পুরো দেশের জন্য অভিন্নভাবে পৌঁছায়নি। ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি ও স্কুল ছাড়ার হার বিশেষ করে হতদরিদ্র, প্রত্যন্ত এলাকায় ও মেয়েদের ক্ষেত্রে এখনও একটি বড় সমস্যা। ২০২৪ সালের জরিপ অনুযায়ী, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার বেড়ে ১৬.২৫% হয়েছে। বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি মাধ্যমের পাঠ্যক্রমের মধ্যে পার্থক্য, ব্যবহারিক দক্ষতা পরীক্ষার অন্তর্ভুক্তি কম হওয়া আরেকটি্ বড় কারণ। প্রশ্নপত্র ফাঁস, অনিয়ম এর কারণে কার্যকর পরীক্ষাগত ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি দেখা যায়। শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া, বেতন কাঠামো ও অনেক সময় অপ্রতুল। শিক্ষা খাতে বাজেটের কার্যকর ব্যবহার ও তহবিলের স্বচ্ছতা বা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার অনেক জায়গায় এখনও দুর্বলতা রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার কাছে জাতির আর্তনাদ !
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুদূর প্রসারী ভাবনার প্রতিফলন স্বরূপ তাদের পরিচালিত স্কুল ও কলেজ, ক্যাডেট কলেজ, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষা খাতেও অবদান রেখে আসছে। সেনাবাহিনী সারাদেশে সর্বমোট ৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষা খাতে মাইল ফলক স্থাপন করেছে। এর মধ্যে ৫৩ টি জেনারেল স্কুল ও কলেজ (বাংলা ও ইংলিশ মিডিয়াম), ১টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ১২ টি ক্যাডেট কলেজ, ৪ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, ৬টি মেডিকেল কলেজ, ২ টি ব্যবসা প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১০ টি বিশেষায়িত স্কুল (প্রয়াস)।
সেনাবাহিনী আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ফলপ্রসূ অবদান রাখছে। এম আই এসটি – মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং অন্যান্য তিনটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর দেশ জুড়ে হাজার হাজার প্রযুক্তিগত ভাবে সজ্জিত স্নাতক তৈরি করছে। এম আই এসটি ১৯ এপ্রিল ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে একাডেমিক প্রোগ্রাম শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে সামরিক শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অগ্রণী ব্যাচগুলি নির্বাচন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে, ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় এবং কর্তৃপক্ষ ২০০২ সাল থেকে বেসামরিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়। নিয়মিত শাখা ছাড়াও এম আই এসটি জৈব-চিকিৎসা প্রকৌশল, পারমাণবিক বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, পরিবেশগত প্রকৌশল, উপকূলীয় এবং জল সম্পদ প্রকৌশলের মতো অসংখ্য বৈচিত্র্যময় শাখা পরিচালনা করছে। এম আই এসটি এর নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (এনএসই) বিভাগ দুটি গবেষণা কাজের জন্য আন্তর্জাতিক পেটেন্ট স্বীকৃতি পেয়েছে। এম আই এসটি-এর শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল অ্যাটমিক কুইজ ২০২৫-এ তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ দলটি URC ২০২৫ গ্লোবাল প্রতিযোগিতায় ১৪তম স্থান অর্জন করেছে এবং এর আগে URC ২০১৫-তে সেরা এশিয়ান দল হিসেবে মনোনীত হয়েছিল।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে একবিংশতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একদল উৎসাহী ও নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসক তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, চিকিৎসা শিক্ষার বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ এর একাডেমিক কার্যক্রম ২০ জুন ১৯৯৯ সালে ৫৬ জন মেডিকেল ক্যাডেট নিয়ে শুরু হয়। কলেজটি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস এর সাথে অনুমোদিত এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল দ্বারা স্বীকৃত। উল্লেখযোগ্যভাবে, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী মেডিকেল স্নাতকের সার্টিফিকেট অর্জনের মাধ্যমে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করছে। বাংলাদেশে সরকারি এবং সরকারিসহ প্রায় ৮৩টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। প্রতি বছর মোটামুটি (৮৩ x ১৫০) ১২, ৪৫০ জন মেডিকেল স্নাতক পাস করে। অন্যদিকে, এএফএমসি এবং সারা দেশে অন্য পাঁচটি সেনা মেডিকেল কলেজ থেকেও প্রতিবছর প্রায় ৪০০ জন যোগ্য ডাক্তার তৈরি করছে। অতএব, গাণিতিকভাবে বলতে গেলে, প্রতিবছর প্রায় ৩% ডাক্তার সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তৈরি হচ্ছে।
দেশব্যাপী তরুণ স্নাতকদের মধ্যে ব্যবসা-সম্পর্কিত জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টায় ২০১৫ সাল থেকে আর্মি আইবিএ পরিচালিত হচ্ছে। আর্মি আইবিএ প্রতি বছর জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যবসায়িক স্নাতক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। আর্মি আইবিএ চমৎকার ব্যবসায়িক জ্ঞান সম্পন্ন তরুণ প্রতিভাদের লালন-পালন এবং গতিশীল কর্পোরেট জগতের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যোগ্য পেশাদার তৈরির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া, এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলি থেকে স্নাতকরা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক প্রতিযোগিতায় তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করছে। উদাহরণ স্বরূপ, আর্মি আইবিএ, (সাভার) এর একজন শিক্ষার্থী, ইফতেখার মাহমুদ ২০১৮ সালে টেলিন রইয়ুথ ফোরামে ১৪০০ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮ম স্থান অর্জন করেছিলেন।
বিশেষ শিশু, বিশেষ অধিকার এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে, বিশেষ করে নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পবিত্র উদ্যোগ 'প্রয়াস' ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী মান এবং প্রশংসা অর্জন করেছে। প্রয়াস জুলাই ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করছে। ঢাকা সেনানিবাসে সদর দপ্তরসহ, প্রয়াশ বিভিন্ন সেনানিবাসে আরও ১০টি শাখা ছড়িয়ে দিয়েছে। সারাদেশে, প্রয়াশের মোট ১১টি শাখা ১১৮০ জন শিক্ষার্থীকে বিশেষ শিক্ষা প্রদান করছে, যার লক্ষ্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শিশু বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা। প্রয়াসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সামরিক পরিবারের এবং বাকিরা বেসামরিক পরিবারের। কর্তৃপক্ষ ২০০৯ সালে বেসামরিক শিশুদের ভর্তি শুরু করে। প্রয়াশ ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের চাহিদা, ধরণ, দক্ষতা (যোগ্যতা) এবং বয়স অনুসারে ক্লাস আয়োজনের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মূলধারার পাঠ্যক্রমের বিদ্যমান শিক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য একটি বিস্তৃত পাঠ্যক্রম ও প্রণয়ন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রয়াসের পদ্ধতি অনুসরণ করে, এই শাখাগুলি প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। পাঁচটি প্রধান কর্মসূচি রয়েছে যার মধ্যে বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচি প্রধান এবং বাকি চারটি সহায়ক কর্মসূচি। বর্তমানে মোট ২৫৬ জন শিক্ষক, ৪৫ জন থেরাপিস্ট এবং ২২৭ জন কর্মচারী, যাদের মধ্যে শিক্ষক সহকারী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং কর্মীরা রয়েছেন যারা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য একসাথে কাজ করছেন।
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ১২টি ক্যাডেট কলেজে ৫৭৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে; তার মধ্যে ৫৭১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে, যা প্রায় ৯৯.১৩%। ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায়, ১২টি ক্যাডেট কলেজের ৫৮৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৮৭ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে, যাতাদের পরীক্ষার্থীর ৯৯.৬৬%। সেনা পরিচালিত স্কুল ও কলেজ গুলোতে ২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ৯,২৯৯ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল; এর মধ্যে বাংলা মাধ্যমের ৩৮টি প্রতিষ্ঠান এবং ইংরেজি মাধ্যমের ২৬টি প্রতিষ্ঠান। মোট জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬,২০০ জন; জিপিএ ৫ পাওয়া অনুপাত ৬৬.৬৭%। সার্বিক পাস অনুপাত প্রায় ৯৮.৮৫%। এইচএসসি ২০২৫ পরীক্ষায় ও সেনা পরিচালিত স্কুল ও কলেজ গুলোতে পাসের হার প্রায় ৯৮%। ক্যান্টনমেন্ট ভিত্তিক পাবলিক স্কুল ও কলেজগুলি ফলাফলে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। যেমন, ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ৮,৬০৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাসের হার প্রায় ৯৯.৪৮%। এর মধ্যে ৬০৩৯ জিপিএ ৫ অর্জন করে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কিছু প্রভাব তুলে ধরা হলো:
সেনাবাহিনীর স্কুল ও ক্যাডেট কলেজগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিবেশ। তাই সময়ানুবর্তিতা, দায়িত্ববোধ ইত্যাদি গুণাবলি ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে সহজেই গড়ে ওঠে। ক্যাডেট কলেজ ও সেনাবাহিনীর স্কুলগুলি জাতীয় ইতিহাস, সামরিক ঐতিহ্য, ভাষা ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ রক্ষণে গুরুত্ব দেয় যার ফলে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে দেশপ্রেম, সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে। ইংরেজি মাধ্যম ও শিক্ষার উচ্চমান বজায় রাখায় সেনা চালিত প্রতিষ্ঠান এর শিক্ষার্থীরা প্রায়ই আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করে যার ফলে ভবিষ্যতে বিদেশে পড়াশোনা বা কর্মসংস্থানের প্রস্তুতিতে সুবিধাজনক হয়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করে, যাতাদের ভবিষ্যৎ জীবনে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুল ও কলেজগুলোতে নৈতিক শিক্ষার উপর জোর দেয়া হয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীরা সামাজিক দায়িত্ববোধ ও নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জাতীয় মূল্যবোধের সংরক্ষণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা এবং সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
পরিশেষে বলা যায়, বাস্তব জ্ঞান ও দক্ষতা বিকাশের উপর জোর দিয়ে শিক্ষাক্রম পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। প্রযুক্তি-ভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তব প্রয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
যোগাযোগ দক্ষতা, দলগত কাজ, সমস্যা সমাধান ক্ষমতা ইত্যাদির উপর গুরুত্ব আরোপ করে পাঠ্যক্রম পুনর্গঠন করা যেতে পারে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতায় ইন্টার্নশিপ ও অন-দ্য-জব ট্রেনিং এর মাধ্যমে বাস্তবকর্ম অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ প্রদান করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা সুবিধা বাড়ানো এবং শিল্প-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। সকল স্তরের শিক্ষাক্রমে উদ্যোক্তা বিষয়ক কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সহজ শর্তে অর্থায়নের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই অনেক অর্জন করেছে — শিক্ষার হার বাড়ছে, প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে, এবং সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠান গুলো যেমন ক্যাডেট কলেজ, সেনা চালিত স্কুল ও কলেজ শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি মডেল হিসেবে কাজ করছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, সেনাবাহিনী পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বিভিন্ন পরীক্ষায় ঈষনীয় ফলাফল অর্জন করার মাধ্যমে অর্জিত সুনাম বজায় রেখেছে এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
যদি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সঠিকভাবে করা যায় — শিক্ষক উন্নয়ন, পাঠ্যক্রম ও মূল্যায়নের সংস্কার, বাজেট ও অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করা তাহলে বাংলাদেশ দ্রুত একটা শিক্ষাগতভাবে শক্তিশালী ও মানসম্মত দেশের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে।
তথ্য সূত্রঃ
১। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট।





