প্রস্তাবিত বাজেট

আজ জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এই বাজেট বক্তৃতার পর মানুষ যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতা শুরু করার আগেই ব্যনার লেখা হয়ে যায় "মানুষ মারার বাজেট"। এক দল দাবী করে এই বাজেট গনমূখি হয়েছে আর অন্যরা বলবে গনবিরোধী বাজেট।
বেশ জমে উঠবে বাজেট আলোচনা। বিজ্ঞজনেরা টেলিভিশনের টকশো'তে বসে নানা রকম বিশ্লেষন করে বুঝিয়ে দিবেন কেন বাজেট ভাল হয়নি! রাজনৈতিক নেতারা যা বলবেন তা সকলেরই জানা। ইতিমধ্যে বি এন পি মহাসচীব মির্যা ফখরুল বলে দিয়েছেন "বাংলাদেশ বিরোধী বাজেট" হয়েছে। জাতীয় পার্টির জনাব কাদেরও বলেছেন " এই বাজেট গনমূখি হয়নি"। নেতাদের এসব বলতে হয় তাই বলেন আসলে নেতারাও কতটা বিশ্লেষন করে বলেন জানিনা।
আরও পড়ুন: গণ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে হতাশার মুখোমুখি
যে যা বলার বলুক প্রস্তাবিত বাজেট আর পরিবর্তন হবেনা। বাজেট নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা আমার একটুও নেই তবে, কিছু বরাদ্ধ নিয়ে প্রতিবারই মনে প্রশ্ন জাগে। সবচেয়ে বেশী অবাক হই ভর্তুকি বাজেট নিয়ে। কোন রুগ্ন খাতকে উৎপাদনমূখি করতে অন্য খাত থেকে অর্থ বিনিয়োগ করার নাম ভর্তুকি বাজেট। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কোন খাত কি আছে? বিলাসি পন্যের উপর কর বৃদ্ধি করা হয়েছে ( প্রতি বাজেটেই করা হয়) কিন্তু শিক্ষা খাতে বরাদ্ধের চিত্রটি পরিস্কার নয়।
বাংলাদেশে এই খাতটিতেই কম বরাদ্ধ হয় এবং দুর্নীতি বেশী হয়। অতএব সার্টিফিকেট পেলেও শিক্ষার মান ক্রমাগতভাবে পিছিয়ে। বাজেটে শিক্ষা খাতের উপর প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল। আরেকটি রুগ্ন খাত হল যোগাযোগ। ট্রেন, বিমান এবং পর্যটন খাত অনবরত লসের বোঝা টানছে। এই খাতে লোকসানের কোন সুযোগ নেই। কিন্তু দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারনে প্রতিবছর এই খাতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীর: আলাদা পরিচয় থেকে জাতীয় মূলধারায়
এই বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে সেখানে এই সম্ভাবনাময়ী খাতগুলিকে স্বচল করার কোন প্রস্তাবনা নেই। সবচেয়ে বেশী বিপদজনক হল দেশের ঘুষ আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করা। সরকার চাইলে দুর্নীতি বন্ধ করে ব্যপক রাজস্ব রক্ষা করতে পারে। দুর্নীতি করার সুযোগ রেখে কোন বাজেটই গনমূখি হবে মনে হয়না। বাজেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোন বাস্তব ভিত্তিক প্রস্তাবনা নেই। দেশ এখন অনেক উন্নত।
দেশের সম্পদ রক্ষা আর দেশীয় পন্য রপ্তানির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজেটে সেই লক্ষ্যমাত্রা চিহ্নিত করা হয়নি। নেতারা যা বলেন তা কেবলই দলের পক্ষে সাফাই গাওয়া। জনগনের বা দেশের কল্যানে গনমূখি বাজেট করতে হলে শুধু রুগ্ন খাত চিহ্নিত করা নয় দুর্নীতি বন্ধ করার আধুনিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। তাহলেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।পর্যটন খাতে রাজস্ব উৎপাদনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় এসব বিষয় উঠে এলে ভাল হত। বেশী ভাল হত বিগত অর্থবছরের বাজেটের একটি খতিয়ান প্রকাশ করলে। এই কাজটি কোন সরকারই কোন বাজেটে প্রকাশ করেনা। বাজেট ভাল হউক কিংবা মন্দ আম জনতার ইচ্ছা পুরন হয়না কোন বাজেটেই। এখন বিজ্ঞ জনদের আলোচনা শুনে বোঝা যাবে এই বাজেট কতটা গনমূখি হয়েছে!