বিদেশ নিতে হাসপাতালের পাশে হেলিকপ্টার মহড়া
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় আশার আলো দেখছে ব্রিটেন-চীনের বিশেষজ্ঞরা
ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় আশার আলো দেখছেন ব্রিটেন ও চীন থেকে আসা শীর্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বুধবার সকালে ঢাকায় আসছেন লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড লি এবং রাতে এসেছেন চায়না সরকারের শীর্ষ চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চীন ও ব্রিটেন থেকে আসা চিকিৎসকদের সাথে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল বোর্ড দফায় দফায় বৈঠক করে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার উপযোগী করে তুলতেই কাজ করছে। ব্রিটেন ও চীন থেকে আশা এই শীর্ষ ৫ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ খুবই গুরুত্বসহকারে দেখছে মেডিকেল বোর্ড। ব্রিটিশ সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক Mr rechard beal ৩ মার্চ বুধবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে কাতার এয়ারওয়েজে করে একটি বিমানে ঢাকায় অবতরণ করেন। একই দিন রাত ৯ টা ১০ মিনিটে চীনের চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হলেন, Mr. Cai Jianfang, Deputy Director of the Internal Medicine Management Committee, Director of the Nephrology Department, Chief Physician।
Mr. Yuan Xin, Deputy Director of the Surgical Management Committee, Chief Physician।
আরও পড়ুন: শারীরিক সক্ষমতায় বিলম্ব খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা
Ms. Zhang Yuhui, Director of Heart Failure Center in Cardiology, Director of Heart Failure Intensive Care Unit, Chief Physician।
Ms. Meng Hong, Chief Physician।
আরও পড়ুন: এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদের বিয়ে, কনে ছাত্রনেত্রী শ্যামলী সুলতানা জেদনী
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চীন ও ব্রিটেনের এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামতের উপর পরবর্তী কার্যক্ষম নির্ভর করে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশেও নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। তার চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাদের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখছে মেডিকেল বোর্ড। চিকিৎসার অগ্রগতি বিষয়ে অধ্যাপক ডা জাহির হোসেন আবেগ আপ্লুত হয়ে বক্তব্য দেয়ায় অনেকে হতাশ হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
মেডিকেল বোর্ড, বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ, সরকারের একাধিক সংস্থা থেকে প্রাপ্ত বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বর্তমানে স্থিতিশীল। খালেদা জিয়ার শরীরের নানা মুখি সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট। ৭২ ঘন্টার পর্যবেক্ষণ শেষ হয়েছে। চীন সরকারের আগ্রহে গত সোমবার চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম দেশনেত্রীকে দেখার পর তারা একটি ইতিবাচক পরামর্শ দেয়। সেই মোতাবেক চীন সরকারের সর্বোচ্চ বিশেষজ্ঞদের উক্ত ৪ সদস্যের টিম বুধবার ঢাকায় আসে। সরকারের সাবেক সচিব মঞ্জুর মোর্শেদ চৌধুরী বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্চে তাদের স্বাগত জানিয়ে সরাসরি এভারকেরে নিয়ে আসেন। বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার করেন। তাদের তথ্যমতে নিয়মিত বিশেষ পদ্ধতিতে খাবারও গ্রহণ করছেন। এ পরিস্থিতিতে শারীরিক অবনতি হয়নি। চায়নার টিম উন্নত চিকিৎসার জন্য ক্যুইমিং বা বেইজিং হাসপাতালে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়। চীন সরকারের একান্ত আগ্রহে খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার বিষয় সর্বোচ্চ সহায়তার জন্য প্রস্তুত চীন। এ লক্ষেই হাসপাতালের পাশে হেলিকপ্টার উড্ডয়ন ও অবতরণ মহড়া চলছে। হাসপাতাল থেকে হেলিকপ্টারে বিমানবন্দর সেখান থেকে বিদেশ নেয়ার ট্রায়াল প্রস্তুতি চলছে। ঢাকা থেকে মাত্র চার ঘন্টা দূরত্বে চীনের যেকোনো বড় হসপিটালে যাওয়া সম্ভব। চীনের প্রেসিডেন্টের ব্যবহৃত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সকল চিকিৎসা সুবিধা সম্বলিত বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সটি খালেদা জিয়াকে নেয়ার জন্য ঢাকা পাঠাতে আগ্রহী চীন সরকার। এখন শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সিগন্যালের অপেক্ষায়। চিকিৎসায় শারীরিক সক্ষমতা তোলার পাশাপাশি চলছে বিদেশ নেওয়ার প্রস্তুতি।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গত ২৪ ঘণ্টায় তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছেন দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, আগের দিনের মতোই স্থিতিশীল রয়েছেন খালেদা জিয়া এবং প্রেসক্রাইব করা ওষুধগুলোতে তিনি সাড়া দিচ্ছেন—যা চিকিৎসকদের কাছে ইতিবাচক লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপি খালেদা জিয়ার বিষয়ে আর কোনো ব্রিফিং করেনি। তবে দুপুরে তার স্বাস্থ্য জানতে হাসপাতালে যান মৎস্য ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, আর সন্ধ্যায় খোঁজ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাতে আরও খোঁজখবর নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও।
গত ২৩ নভেম্বর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৭ নভেম্বর তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ফুসফুসের সংক্রমণসহ হৃদ্যন্ত্র, লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতার বিষয়টি চিকিৎসকরা আগেই নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতেই নতুন চিকিৎসক দল যুক্ত করা হয়েছে। বুধবার সকালে লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসক রিচার্ড বেলে ঢাকায় এসে মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে খালেদা জিয়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিদেশি চিকিৎসকরা সরাসরি শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেশি বোর্ডের সঙ্গে ক্লিনিক্যাল আলোচনায় অংশ নেবেন এবং পরবর্তী চিকিৎসা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেবেন।
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আরও জানান, দলের কাছে খালেদা জিয়ার সম্পূর্ণ মেডিকেল সামারি রয়েছে, এবং যেকোনো নতুন চিকিৎসা পরিকল্পনা গ্রহণের আগে যৌথ বোর্ডের আলোচনা প্রয়োজন হবে। প্রয়োজনে বিদেশে নেওয়া নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারে বোর্ড।
অন্যদিকে রাতেই চীনের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।
এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সারাদেশে দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন জেলায় কোরআন খতম, দোয়া মাহফিল ও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করে বিএনপি এবং বিভিন্ন সংগঠন। দেশের বাইরে থেকেও প্রবাসী সমর্থকদের উদ্যোগে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালের পাশের মাঠে হেলিকপ্টার অবতরণ পরীক্ষাকে ঘিরে যাতে কোনো বিভ্রান্তি ছড়ানো না হয়—সেজন্য সতর্কবার্তা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এসএসএফ-এর নিয়ম অনুযায়ী সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী পরীক্ষামূলক অবতরণ ও উড্ডয়ন পরিচালনা করবে, এবং এর সঙ্গে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কোনো সম্পর্ক নেই।





