উস্কানিদাতা এবং অপচরকারীদের চিহ্নিত করছে গোয়েন্দারা
আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার পরিবর্তনে নানা গুঞ্জন
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের আইজিপি ডা. বাহারুল আলম ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলীকে বদলের গুঞ্জন চলছে বেশ কয়েকদিন ধরে। পিলখানা বিদ্রোহ ও সেনা কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার পর থেকেই আইজিপি পরিবর্তনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। পুলিশের শীর্ষ পদগুলোতে নতুন নিয়োগের তোরজোর আলোচনায় বাহিনীর চেইন অব কমান্ডে ধাক্কা লাগে। তবে জোরালো এই গুঞ্জনের ন্যূনতম কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ সরকারের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আইজিপি-কমিশনার বদলের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। নির্বাচনের জন্য পুলিশের বর্তমান নেতৃত্বকেই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
পিলখানার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর থেকেই বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু হত্যার বিচার ও বর্তমান আইজিপিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে পরিবারের সদস্যসহ এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা প্রায় প্রতিদিনই নানা কর্মসূচি পালন করছেন। মঙ্গলবার তারা শাহবাগ অবরোধ করে আটচল্লিশ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় পুলিশ সদর দপ্তর ঘেরাও করে অচল করে দেবে। বিডিআর বিদ্রোহের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বর্তমান আইজিপিসহ তৎকালীন শীর্ষ ৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন আসায় আইজিপির অপসারণের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
আরও পড়ুন: পুলিশি নিরাপত্তায় সচিবালয় ছাড়লেন অর্থ উপদেষ্টা
এরই মধ্যে হঠাৎ বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু হত্যার বিচার দাবি করে আন্দোলনে নামেন পিন্টুর স্ত্রী কল্পনা। নাসির উদ্দিন পিন্টুর ঢাকা–৭ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর আলোচনায় আসেন স্ত্রী কল্পনা। অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি মহলের উস্কানিতে আইজিপি অপসারণের আন্দোলনে প্রতিদিন শক্তি যোগান হচ্ছে।
বুধবার সারাদিন অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)সহ পুলিশের সর্বত্র আলোচনায় ছিল আইজিপি বদল প্রসঙ্গটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কতিপয় ইউটিউবার, ব্লগার ঝড় তুলে ফেলেছে বিষয়টি নিয়ে—বর্তমান আইজিপিকে অপসারণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলীকে নতুন আইজিপি নিয়োগ এবং সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি সিবগাত উল্লাহকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন কমিশনার এবং জসিম উদ্দিনকে সিআইডির প্রধান হিসেবে নিয়োগের সারসংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন করেছেন—মর্মে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: অর্থ উপদেষ্টা সচিবালয়ে চার ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ
সিআইডি কর্মকর্তাদের অনেকেই নতুন কমিশনার হিসেবে সিবগাত উল্লাহকে অভিনন্দন জানান। সিআইডি কর্মকর্তারা সারাদিন অপেক্ষায় ছিলেন কখন প্রজ্ঞাপন হবে। একই অবস্থা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তাদের রুমে রুমে। সারাদিনই তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ শাখায় খবর নিয়েছেন—কখন প্রজ্ঞাপন হবে? নতুন আইজিপি হিসেবে অনেকেই টেলিফোন করে শেখ সাজ্জাদ আলীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় এই গুঞ্জনে নির্বাচনমুখী পুলিশের কার্যক্রমে নতুন উপসর্গ তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী ৬ই আগস্ট আইজিপি নিয়োগ করা হয় ময়নুল ইসলামকে, ডিজি র্যাব নিয়োগ করা হয় একেএম শহিদুর রহমানকে এবং ডিএমপি কমিশনার নিয়োগ করা হয় মাইনুল ইসলামকে। ভঙ্গুর, পালিয়ে যাওয়া পুলিশ বাহিনীকে সুসংগঠিত করে তিন মাসেরও বেশি সময় তারা দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর বর্তমান আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আশানুরূপ উন্নতি না হলেও পুলিশের শৃঙ্খলা অনেকটাই ফিরে আসে।
বর্তমান আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারকে দুই বছরের চুক্তিতে নিয়োগ করা হলেও তাদের মেয়াদ এখনো প্রায় অর্ধেক বাকি। বর্তমান আইজিপি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যক্রম নিয়ে আপাতত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক দেখা যাচ্ছে না।
এক বছর আগে নিয়োগের শুরুতেই বিএনপির পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা সরকারি খোদাবক্স চৌধুরী, আইজিপি বাহারুল আলম ও ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলীর নিয়োগকে গণতন্ত্রবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করেন। এক বছরের বেশি সময় তারা দায়িত্ব পালন করলেও তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে কোনো আপত্তি দেওয়া হয়নি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও তাদের বিষয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে গুরুতর আপত্তি দেননি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে নির্বাচনের আগে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। সুযোগসন্ধানী কিছু চক্র বিভিন্ন সুযোগে ঢুকে উস্কানি দিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি করছে। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করার কাজ করছে বলে জানায়।





