দেশে ‘ষড়যন্ত্র থেমে নেই, নির্বাচনও খুব সহজ নয়’: তারেক রহমান
দেশে ‘ষড়যন্ত্র থেমে নেই, এই নির্বাচনও খুব সহজ নয়’ উল্লেখ করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে লন্ডনের সিটি প্যাভিলিয়নে লন্ডন বিএনপির আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: নির্বাচন বিধিভঙ্গে বিএনপি প্রার্থীকে শোকজ
তিনি বলেন, ‘আমি এক বছর আগে আপনাদেরকে বলেছিলাম যে, সামনে কিন্তু আমাদের কঠিন সময়। ষড়যন্ত্র থেমে নেই এবং এই নির্বাচনও কিন্তু খুব সহজ নয়। আপনারা অনেকেই কিন্তু ব্যাপারটা এখন বুঝতে পারছেন। এক বছর আগে যা বলেছি সেটা কিন্তু হচ্ছে।
এখন আমি আবারও বলছি, সামনের সময় কিন্তু খুব সুবিধার না। কাজেই সকলকে সজাগ থাকতে হবে, সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: তারেক রহমানের জন্য বাসভবন এবং অফিস প্রস্তুত করেছে বিএনপি
লন্ডন প্যাভিলিয়ন হল ভর্তি প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তারেক বলেন, ‘‘ আপনারা কী ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারবেন।’
প্রবাসীরা উচ্চ কন্ঠে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিলে তিনি বলেন, ‘‘ ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই আমরা আমাদের এই যে পরিকল্পনার (দেশ গড়ার পরিকল্পনা) কথা বললাম তা সফল করতে পারবো, ঐক্যবদ্ধ থাকলেই আমরা আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারবো, ঐক্যবদ্ধ থাকলেই আমরা বাংলাদেশের জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবো।”
যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ এই ব্রিটেনে যে আপনারা আছেন এই দেশে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা আছে বলেই এই দেশের মানুষ তার ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত হয় না। বাংলাদেশের মানুষ বহু বহু যুগ ধরে তাদের ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।”
কাজেই আসুন বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার যদি ফিরিয়ে দিতে হয় যে কোন মূল্যে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ না থাকার কোনই বিকল্প নেই আসাদের। ‘ ইউনাইটেড বি স্ট্যান্ড, ডিভাইডেড উই ফল’। কাজেই এই কথাটি আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে।
১/১১ এর সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে ২০০৭ সালে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। কারা হেফাজতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে উচ্চ আদালতের জামিনে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আসেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কণ্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে লন্ডনে আসেন ২০০৮ সালে। দীর্ঘ ১৮ বছর নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।
প্রবাসীদের সাথে বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানটি একদিকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান হলেও অন্যদিকে বিদায় অনুষ্ঠানও।
তারেক রহমানের বক্তব্যের শুরুতে বিদায়ের কথা উচ্চারিত হয় এবং প্রবাসীদের প্রতি তার কতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। প্যাভিলিয়ন ভর্তি প্রবাসীদের তিল পরিমান ঠাঁই ছিলো না। বক্তব্যের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকার অনুরোথ জানান তিনি।
আমি দেশে ফিরে যাচ্ছি, সকলের দোয়া চাই
তারেক রহমান বলেন, ২৫ তারিখে ইনশাআল্লাহ আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে আমি দেশে ফিরে যাব।
সকলের কাছে দোয়া চেয়ে যাচ্ছি। আপনারা দয়া করে দোয়া করবেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের সামনে যে পরিকল্পনা তুলে ধরেছি আল্লাহ যাতে আমাকে সেই তৌফিক দেন দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য সেই কাজগুলো যাতে সম্পূর্ণ করতে পারি।
‘কেউ হিথ্ররো এয়ারপোর্টে যাবেন না’
তারেক রহমান বলেন, আমি একটি বিনীত অনুরোধ করতে চাই। কী সেই বিনীত অনুরোধ। আপনাদের সাথে আমি ১৮ বছর ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। আপনাদের সাথে বহু স্মৃতি আমার রয়ে গিয়েছে, আপনাদের সাথে বহু দুঃখ কষ্ট আমি শেয়ার করেছি।
আপনারা বিভিন্ন সময় যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বিশেষ করে যারা জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন আপনারা বহু মানুষ বিভিন্ন সময় আমার, আমার পরিবারের দলের বিপদের সময় আমাকে মানসিকভাবে সাহস দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন, সমর্থন যোগিয়েছেন। ২৫ তারিখে ইনশাআল্লাহ আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে আমি দেশে ফিরে যাব। কিন্তু এখানে উপস্থিত এই ঘরে উপস্থিত প্রত্যেকটি মানুষের কাছে আমার অনুরোধ দয়া করে কেউ আপনারা এয়ারপোর্টে সেদিন যাবেন না।
তিনি বলেন, কারণ এয়ারপোর্টে গেলে একটি হট্টগোল তৈরি হবে এবং মানুষ জানবে যে এরা সব বাংলাদেশী। এতে দেশের সুনাম নষ্ট হবে, দলের সুনাম নষ্ট হবে।
যারা সেদিন এয়ারপোর্টে যাবেন না….আমার আজকের এই অনুরোধ যারা রাখবেন আমি ধরে নেবো তারা দল এবং সর্বোপরি দেশের সম্মানের প্রতি মর্যাদা রাখবেন। আর আমার মানা করা সত্ত্বেও আমার অনুরোধ করার পরেও যারা যাবেন আমি ধরে নিতে পার তারা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সেখানে গিয়েছেন।
বক্তব্যে শেষে দেড় মিনিটে একটি ভিডিও দেখানো হয় যেখানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২৪ এর ফ্যাসিস্টদের পতনে ছাত্র গণঅভুত্থানের নুতন বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হয়েছে।
তারেক রহমান তার বক্তব্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী, কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে তার প্রণীত দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরেন। এতে ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মাস কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, বেকার সমস্যা সমাধান প্রভতি বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন তিনি।
‘এ নির্বাচন শুধু এক্সপেরিমেন্ট নয়’
তারেক রহমান বলেন, এই আগামী নির্বাচন কিন্তু কোন এক্সপেরিয়েন্সের বিষয় না এক্সপেরিমেন্টের বিষয় না। এই সুযোগটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এইটিকে সৎ ব্যবহার করতে হবে।”
সবার মনে রাখতে হবে, আগামী যে সময়টা আসছে এটা কিন্তু একটা পরিবর্তনের সুযোগ। আমরা যদি এইবার দেশটাকে পরিবর্তন করতে পারি তাহলে আমরা এগিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, আপনাদের সকলকে প্রবাসীরা যেরকম আন্দোলনকে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে। একইভাবে প্রবাসীদের সামনে এখন বিশাল দায়িত্ব হচ্ছে যে সঠিক দলকে নির্বাচিত করতে সহযোগিতা করা। যেই দল সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে আগামী দিনে দেশকে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। যেই দল আগামী দিনে সঠিকভাবে বাংলাদেশকে সামনে নিয়ে যেতে পারবে। ”
‘প্রবাসীদের প্রতি কতজ্ঞতা’
তারেক বলেন, আপনারা যে প্রবাসে আছেন প্রবাসীদের কাছে প্রথমেই আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। আমাদের যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন এই আন্দোলনে প্রবাস থেকে বহু প্রবাসী বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। এই আন্দোলন সফলতার পিছনে প্রবাসীদের একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে।কাজেই প্রবাসীদের অবদানকে কোনভাবেই আমরা খাট করে দেখতে পারি না।
আপনাদের সামনে আমি যেই পরিকল্পনাগুললা তুলে ধরেছি আমাদেরকে আগে কাজ শুরু করতে হবে। আমরা যদি কাজ শুরু করতে না পারি এবং আমরা যদি সকলের দাবি উপস্থাপন করতে থাকি তাহলে কিন্তু একটা ইনডিসিপ্লিন তৈরি হবে। ফলে আমরা কিন্তু আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না।
একই সঙ্গে তারেক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, তার দল জনগণের সমর্থন নিয়ে আগামী সরকার গঠন করবে ইনশাল্লাহ।”





