তারেক রহমানের সংবর্ধনা ৩০০ ফিট বিস্তীর্ণ এলাকায়
প্রত্যাবর্তন ঘিরে উৎসবমুখর প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা বলয়
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, দেশের নন্দিত জননেতা তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ২৫ ডিসেম্বর ঘিরে চলছে উৎসবমুখর প্রস্তুতি। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরা উপলক্ষে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় গড়ে তোলা হচ্ছে নিরাপত্তা বলয়। বড়দিন ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সংবর্ধনা ও থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বলয় চলবে আগাম নির্বাচন পর্যন্ত।
বিএনপির সূত্র জানায়, আগামী ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান দেশে পৌঁছাবে। তাকে স্বাগত জানাতে সারাদেশের নেতাকর্মীরা ঢাকায় ছুটে আসবে। কোটিরও বেশি লোকের সমাগম আশা করা হচ্ছে। তার নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত একাধিক বৈঠক করে সর্বাত্মক নির্দেশনা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: অসহায় শিক্ষার্থী বাইজিদ হোসেনের পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: মব সহিংসতা গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছে: রিজভী
বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন, আসন্ন বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত নিরাপত্তা-সংক্রান্ত পদক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
পুলিশের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়, সম্প্রতি দুটি জাতীয় দৈনিক ও দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ভিডিও ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যে ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। রোববার বিকেলের বৈঠকে ওসমান হাদি হত্যায় জড়িত এবং অন্যান্য বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। সোমবার সকালে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভার শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হবে।
ঢাকায় অবতরণের পরপরই ৩০০ ফিট বিস্তীর্ণ এলাকায় বিএনপি রোড থেকে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সংবর্ধনা সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। বিমানবন্দর ৩০০ ফুট ও পার্শ্ববর্তী সড়ক-মহাসড়ক ঘিরে থাকবে লোকসমাগম।
তারেক রহমানকে বরণ করতে ওই দিন ঢাকায় লাখ লাখ জনতার উপস্থিতি থাকবে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে ২৫ ডিসেম্বর ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ঢাকাজুড়ে সাজানো হচ্ছে বিশেষ নিরাপত্তাবলয়। এরই মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত নিরাপত্তা প্রস্তুতির কার্যক্রম শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তারেক রহমান ঢাকায় পা দেওয়ার পর চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স-সিএসএফ তার নিরাপত্তার আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রধান নিরাপত্তাকর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরাপত্তার জন্য দলের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত যত বিষয় রয়েছে, এর সবই নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত নিরাপত্তা কার্যক্রমের বাইরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরাপত্তার বিষয়ে সিএসএফের সঙ্গে সমন্বয় করে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হচ্ছে। তার আগমনের দিন ছাড়াও চলাফেরার সময়ও বিএনপির চাহিদা অনুযায়ী নিরাপত্তা কার্যক্রম বলবৎ থাকবে।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। ঢাকায় ফিরে রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাসায় ওঠার কথা রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’ ওই বাড়ির দেয়াল লাগোয়া।
বিমানবন্দরের অদূরে তিনশ ফুট সড়কে দলের পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দেশে ফিরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেখানে তার মাকে দেখতে যেতে পারেন এবং শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে পারেন। এ কর্মসূচি ঘিরে ৩০০ ফুট সড়ক, এভারকেয়ার হাসপাতাল ও শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যান এলাকাতেও বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার প্রস্তুতি রয়েছে।
তারেক রহমানকে বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবনে পৌঁছে দিতে সিএসএফের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষ এস্কর্ট থাকবে। পোশাকে ও সাদা পোশাকে গোটা এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরের মধ্যে থাকবে। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত পুলিশের নিয়মিত তল্লাশি চৌকির পাশাপাশি অতিরিক্ত তল্লাশি চৌকি বসানো হচ্ছে অন্তত দুই দিন আগে থেকে। এ ছাড়া পুরো বিমানবন্দর এলাকাও থাকবে নিরাপত্তা চাদরের মধ্য। রাজধানীর সব থানাগুলোকে ২৫ ডিসেম্বর ঘিরে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে শুরু করে পুরো বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিমানবন্দরের ভিভিআইপি ও ভিআইপি টার্মিনালসহ সব এলাকায় নিরাপত্তা তল্লাশি চলছে। ব্যাপক ভিড় থাকলেও, ২৫ ডিসেম্বরও বিমানবন্দরে নিয়মিত ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণ করবে। এর জন্য বিদেশগামী যাত্রীদের সময় নিয়ে আগে আসতে বলা হয়েছে।
তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ওই দিন সারা দেশ থেকে অন্তত ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা চলছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরী থেকেও সম সংখ্যক মানুষের সমাগম করার পরিকল্পনা রয়েছে। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগের দিন অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর রাত থেকেই নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করবেন। এ অবস্থায় নিরাপত্তার পাশাপাশি জনসমাগমে শৃঙ্খলা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অন্তত দুদিন আগে থেকে দলটির সারা দেশের নেতাকর্মীরা ঢাকায় ঢুকতে শুরু করবেন। এতে রাজধানীর সড়কে বড় ধরনের যানজট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর দিনভর এবং ২৫ ডিসেম্বর ভোর থেকে ঢাকার প্রবেশপথগুলো রীতিমতো আটকে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন জেলা থেকে ওই দিন অতিরিক্ত বাস ঢাকায় প্রবেশের চেষ্টা করবে। এতে গাবতলী, পোস্তগোলা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনিরআখড়া, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সুলতানা কামাল সেতু, বছিলা-মোহাম্মদপুর এলাকা এবং গাজীপুর থেকে উত্তরা এলাকার প্রবেশ পথগুলোতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
২৫ ডিসেম্বর রাজধানীর অনেক সড়ক ডাইভারশন করা হবে, অনেক সড়ক বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে দুই-এক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা নগরবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে আসা যানবাহন জেলা বা বিভাগভিত্তিক কোথায় কোথায় পার্কিং করা হবে, তা নির্ধারণ করে বিএনপির নেতাদের অবগত করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আনিছুর রহমান নগরবাসীর ভোগান্তি এড়াতে অবগত করা হবে।





