ইউনাইটেডের করুণ পরাজয়, নেইমারে উদ্ভাসিত পিএসজি

Shakil
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:২৩ পূর্বাহ্ন, ১৪ অগাস্ট ২০২২ | আপডেট: ৫:২৩ পূর্বাহ্ন, ১৪ অগাস্ট ২০২২

নতুন কোচ এরিক টেন হাগের অধীনে ছন্দই খুঁজে পাচ্ছে না ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নতুন আসরের প্রথম ম্যাচে ব্রাইটনের কাছে তারা হেরেছিল ২-১ গোলে। এবার দ্বিতীয় ম্যাচে ব্রেন্টফোর্ডের মাঠে গিয়ে হারলো ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে।

প্রায় ৮৪ বছরের অপেক্ষার ইতি ঘটিয়ে ১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারির পর অবশেষে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ইউনাইটেডকে হারালো ব্রেন্টফোর্ড। একই বছরের এপ্রিলে গ্রিমসবি টাউনের বিপক্ষে ৬-১ গোলে জিতেছিল তারা। এরপর ইউনাইটেডকে হারানো চার গোলের জয়টিই তাদের সবচেয়ে বড়।

আরও পড়ুন: স্বপ্ন পূরণের পথে দাবাড়ু মুনতাহা, পাশে দাঁড়ালেন সাবেক ফুটবলার আমিনুল হক

পরপর দুই ম্যাচ হেরে প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলে এখন সবার নিচে অবস্থান করছে রেড ডেভিলরা। ১৯৯২ সালের পর প্রথমবারের মতো কোনো ম্যাচ শেষে টেবিলের তলানিতে নেমে গেলো তারা। সেবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইউনাইটেড। এটি থেকে অনুপ্রেরণা পেতেও পারেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরা।

শনিবার রাতে প্রথম ম্যাচের পরাজয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনেই আগের লিগের ১৩ নম্বর দল ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল ইউনাইটেড। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর বদলে উল্টো আরও পিছিয়েছে টেন হাগের শিষ্যরা। ম্যাচের প্রথমার্ধে ৩৫ মিনিট সময়ের মধ্যেই গোল চারটি করেছে ব্রেন্টফোর্ড।

আরও পড়ুন: আইএল টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার দল পেলেন মোস্তাফিজ

ম্যাচের দশ মিনিটে প্রথম গোলটি করেন জশ ডা সিলভা, মিনিট আটেক পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ম্যাথিয়াস জেনসেন। ঘড়ির কাঁটা ৩০-র ঘর ছুঁতেই স্কোরশিটে নাম তোলেন বেন মি। এর পাঁচ মিনিট পর হালিপূরণ করে স্বাগতিক দর্শকদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেন ব্রায়ান বিউমো।

এ চার গোলের পেছনেই ছিলো ইউনাইটেডের রক্ষণের ছোট-বড় ভুল। বিশেষ করে প্রথম দুই গোলে বাচ্চাসুলভ ভুল করেন গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া। প্রথমটি তার হাত ফসকে চলে যায় জালে, দ্বিতীয়টিতে নিজ ডিফেন্ডারের সঙ্গে থাকা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে না দেখেই পাস দিয়ে বসেন ডি গিয়া।

প্রিমিয়ার লিগের দীর্ঘ ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় দল হিসেবে ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধেই চার গোল করার কৃতিত্ব দেখালো ব্রেন্টফোর্ড। এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে টটেনহ্যাম হটস্পার ও পরের বছরের অক্টোবরে লিভারপুল এটি করে দেখায়।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর খুব একটা সুযোগ তৈরি করতে পারেনি ইউনাইটেড। এর মধ্যে আবার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ক্রিশ্চেন এরিকসেনদের জোরালো হেডও খুঁজে পায়নি জালের ঠিকানা। ফলে চার গোল হজম করে কিছু ফেরত না দিয়েই মাঠ ছাড়ে প্রিমিয়ার লিগের একসময়ের রাজারা।

অপরদিকে, চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স দিয়ে যেন পিএসজিকে এমনটাই বুঝাতে চাইছেন নেইমার। নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল তার, গুঞ্জন ছিল তাকে ছেড়েই দিতে চায় প্যারিসিয়ানরা। তার জবাবটা মাঠেই দিচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। আগের ম্যাচে করেছিলেন এক গোল, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছিলেন আরও তিনটি। গত রাতে মঁপেলিয়ের বিপক্ষেও ফর্মটা ধরে রাখলেন, করলেন জোড়া গোল। তাতেই পিএসজি পেল ৫-২ ব্যবধানের বিশাল জয়। 

নিজেদের মাঠ পার্ক দেস প্রিন্সেসে শুরু থেকেই বলের দখলে আধিপত্য ছিল তাদের। তবে ফিনিশিংয়ের দূর্বলতায় ক্রিস্তোফ গালতিয়েরের শিষ্যদের গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ম্যাচের ৩৯ মিনিট পর্যন্ত। ১৭ মিনিটে লিওনেল মেসি দারুণ এক বল বাড়িয়েছিলেন নেইমারকে, তবে প্রথম ছোঁয়ায় গড়বড় পাকিয়ে বলটা প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের হাতে তুলে দেন নেইমার। 

এর কিছু পরই ভিতিনিয়ার পাস থেকে নেইমার ছিলেন গোলের খুব কাছাকাছি, তবে দুরূহ কোণ থেকে শট নিয়ে গোলটা আর পাননি তিনি। 

মঁপেলিয়ে গোলরক্ষক ইয়োনাস অমলিনও ফর্মে ছিলেন দারুণ, মেসির দুর্দান্ত ফ্রি কিক ঠেকিয়েছেন, এর একটু পর একটা নিচু শটও ফিরিয়েছেন তিনি। প্রথমার্ধে ঠেকিয়েছেন কিলিয়ান এমবাপের পেনাল্টিও। সবকিছুর মিশেলে পিএসজির অপেক্ষাটা বড় হয়েছে ৩৯ মিনিট পর্যন্ত। 

মঁপেলিয়ের চোয়ালবদ্ধ রক্ষণ ভাঙে নিজেদের দোষেই। এমবাপের নিচু ক্রস নিজেদের জালে জড়িয়ে দেন সাকো৷ স্বস্তির গোলটা পায় পিএসজি। স্বাগতিকদের পরের গোলটার 'অবদানও' সাকোরই। বক্সে তার হ্যান্ডবলের কারণেই পেনাল্টি পায় পিএসজি। গোলরক্ষক অমলিনকে বোকা বানিয়ে গোল করেন নেইমার। 

তৃতীয় গোলটা বিরতির পরেই পায় পিএসজি৷ প্রথমার্ধে অতিমানব হয়ে ওঠা অমলিন করে বসেন শিশুসুলভ ভুল। তার নেওয়া গোল কিক রুখে দেন এমবাপে, এরপর আশরাফ হাকিমি হয়ে নেইমারের পায়ে আসে বল, ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডও কোনো ভুল করেননি।

ঘণ্টার কাটা পেরোনোর আগে মঁপেলিয়ে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিল বৈকি! ওয়াহির শট ঠেকালেও জিয়ানলুইজি ডনারুমা বলটা আয়ত্বে আনতে পারেননি পুরোপুরি। তা চলে যায় খাজরির কাছে, সহজ ট্যাপইনে সফরকারীদের ম্যাচে ফেরান তিনি।

তবে তাদের প্রত্যাবর্তনের আশা শেষ হয়ে যায় একটু পরেই। বক্সে বল বাড়িয়েছিলেন নেইমার, তা বিপদমুক্ত করলেও এমবাপের নৈপুণ্যে তিন গোলের ব্যবধান ফিরে পায় পিএসজি। শেষ সময়ে রেনাতো সাঞ্চেসের কল্যাণে পঞ্চম গোলের দেখা পায় পিএসজি। তবে যোগ করা সময়ে তা শোধ করে মঁপেলিয়ে। ফলে তিন গোলের ব্যবধানে জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের।