মোংলা থানার ওসির অপসারনের দাবীতে বাগেরহাটে মানববন্ধন

Abid Rayhan Jaki
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২:৫০ অপরাহ্ন, ২৪ মে ২০২৪ | আপডেট: ১০:৫০ পূর্বাহ্ন, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ধর্ষন চেষ্টা, হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় মামলা না নিয়ে উল্টো ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগ তুলে মোংলা থানার ওসির অপসারনের দাবীতে মানববন্ধন করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সামনে ভুক্তভোগী

মোংলা উপজেলাবাসির ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।

আরও পড়ুন: সাদা পাথর রক্ষায় প্রশাসনের ৫ দফা সিদ্ধান্ত

এসময় ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার, নাসিমা বেগমসহ অনেকে বক্তব্য দেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ন্যায় বিচারের জন্য মানুষ পুলিশের কাছে যায়। কিন্তু ধর্ষন চেষ্টা, হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় মামলা না নিয়ে মোংলা থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম দূর্বৃত্ত্বদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

গত ০৯ মার্চ বাড়িতে কেউ না থাকায়  মোঃ জলিল মাতুব্বর (৪৫) ধর্ষনে ব্যর্থ হয়ে আমার শরীরের গোপন স্থানে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে। আমার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে পালিয়ে যায় জলিল মাতুব্বর।

আরও পড়ুন: ‎পাবনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার

ঘটনার আধা ঘন্টা পরেই জলিল মাতুব্বরের ছেলে আমির মাতুব্বরসহ ৭/৮ জন সন্ত্রাসী দলবদ্ধ হয়ে আমার বাড়িতে বেআইনী ভাবে প্রবেশ করে। তারা ঘরের চালসহ ঘরের ভিতরের মালামাল ভাংচুর করে, আমির মাতুব্বর ও তার লোকজন। তারা আমাকে হত্যা করবার উদ্দেশে দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে ৯৯৯ এ ফোন করলে মোংলা

থানার এ্ধসঢ়;সআই রমজানসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমাকে উদ্ধার করে। পুলিশ ও স্থানীয়রা আমাকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মোংলা ২৫০ বেড শয্যা হাসপাতালে প্রেরন করে। সেদিনই ধর্ষন চেষ্টা ও হামলার মামলা নিয়ে মোংলা থানায় যায় আমার পরিবারের সদস্যরা। তবে মামলা না নিয়ে থানা থেকে বের করে দেন মোংলা থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম। পরে একাধিকবার মামলার জন্য মোংলা থানায় গেলেও ওসি বিষয়টি আমলে নেয়নি। এমতাবস্থায় আমি নিরুপায় হয়ে বাগেরহাট পুলিশ সুপার মহোদয়ের শরনাপর্ণ হই। ইহাতে মোংলা থানার ওসি ক্ষিপ্ত হয় এবং আমাকে বলে তুই কতো মামলা খেতে পারিস আমি ডোজে ডোজে তোকে দিব। পরে ৩১ মার্চ খুলনা সিটি মেয়রের লিখিত সুপারিশ নিয়ে গেলে অভিযোগ রাখে পুলিশ। তার পরে দেড় মাস অতিক্রম হলেও মামলাটি নথিভুক্ত করেনি পুলিশ। এখন আমাদের মামলা না নিয়ে মোংলা থানার ওসি আজিজুল ইসলামের হস্তক্ষেপে আমি ও আমার স্বামী মিজানুর রহমান, বোন পারভিন বেগম, ভগ্নিপতি কাওসার আকন, খালাতো ভাই শিমুল ও পারভেজকে জড়িয়্ধেসঢ়; আদালতে মানব পাচারসহ ৪টি মিথ্যা দায়ের করেন। আমরা বাড়িতে যেতে পারি না অত্যন্ত অসহায় জীবনজাপন করছি। এই ওসি আজিজের অত্যাচার ও মামলার ভয়ে ২১টি পরিবার বাড়িতে ঠিক ভাবে বসবাস করতে পারছেনা। সে যদি আমাদের মংলায় থাকে তাহলে আমাদের ২১টি পরিবার মাটির সাথে মিশে যাবে। তারা মোংলা থানার ওসি কেএম আজিুল ইসলামের দ্রুত অপসারন দাবি করেন।


এ ছাড়া মোংলা থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলান নানা অনিয়ম, দূর্নীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানানো হয় মানববন্ধনে।


দুই সন্তানের জননী এক নারীকে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কামড়িয়ে রক্তাক্ত করা হয়।

পরে ওই নারীর ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এলে পালিয়ে যায় ধর্ষণের চেষ্টাকারী জলিল মাতুব্বর নামে এক ব্যক্তি। ঘটনাটি ঘটে মোংলা পৌর শহরতলীর সিগনাল টাওয়ার এলাকায় গত ৯ মার্চ সকাল ৯টায়।তবে এ ঘটনায় থানায় কয়েক দফায় এজাহার নিয়ে গেলেও মামলা নেয়নি মোংলা থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম। এদিকে মামলা না নেওয়ার অভিযোগে নিরুপায় হয়ে গত বৃহস্পতিবার (৯মে) বাগেরহাট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারীর খালা নাছিমা বেগম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, গত ৯মার্চ তার বোনের মেয়ে দুই সন্তানের জননীর (২৮) স্বামী-সন্তান বাড়ীতে না থাকার সুযোগে তার ঘরে প্রবেশ করে স্থানীয় মৃত কাদের মাতুব্বরের ছেলে জলিল মাতুব্বর। এ সময় তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড় দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এ সময় তার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে জলিল মাতুব্বর পালিয়ে যায়। পরে তার বোনের মেয়েকে ওইদিন রাতে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা

হয়। এ ঘটনা স্থানীয় লোকজনকে জানালে আরও ক্ষীপ্ত হয়ে জলিল মাতুব্বর তার পরিবারের আরও ছয়জনকে মারপিট করে ঘরে ভাংচুর চালায়। পরে জলিল মাতুব্বরকে আসামি করে মোংলা থানায় ধর্ষণ মামলা করতে যান তিনি। এ মামলায় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়রের তালুকদার আব্দুল খালেকের লিখিত সুপারিশও রয়েছে। তবে থানায় এজাহার নিয়ে যাওয়া ধর্ষণ চেষ্টার শিকার ওই নারীর খালা নাছিমা বেগমকে ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম থানা থেকে বরে করে দেয় বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন তিনি। এরপর মামলা করতে কয়েক দফা থানায় গেলেও ওসি নানা অজুহাত দেখিয়ে মামলা আর নেননি। মামলা করতে থানায় যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৬মে বিকেলে আবারো নাছিমা বেগমসহ তার ছেলে শিমুল, পুত্রবধূ হাফিজা ও নাতী ওমরের ওপর হামলা চালায় জলিল মাতুব্বর গং। এ হামলার ঘটনায়ও এজাহার নিয়ে গেলে থানায় মামলা নেয়নি পুলিশ। ধর্ষণ চেষ্টা ও হামলার ঘটনার মামলা না নেয়ায় ভুক্তভোগীরা এ সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী এ পরিবার। এ বিষয়ে মোংলা থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি তার জানা নেই। আর মারামারির ঘটনায় থানা থেকে বের করে দেয়া হয়নি দাবী করে তিনি বলেন, এজাহারের সাথে তাদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। পরে তারা আর আসেননি। এজন্য ওই মামলাও নেয়া হয়নি, তবে অভিযোগটি তদন্ত দেয়া হয়েছে। তবে হামলার শিকার শিশু মোঃ ওমরের (৭) মা হাফিজা বেগম বলেন, ওসি মিথ্যা বলেছেন। মামলা করতে এজাহারে যাবতীয় সব কাগজপত্র নেওয়া হলেও ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম থানা থেকে তাদেরকে বের করে দেন।

এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আবুল হাসনাত খাঁন বলেন, বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যেসব অভিযোগে ওসি মামলা নেয়নি, সেই অভিযোগগুলোর কপি তার ওয়াটসএ্যাপে দিতে বলেন তিনি।