কে বড় দ্বন্দ্বে ববির কর্মকর্তাদের মধ্যে সংঘর্ষ : আহত ১০

বড়-ছোট দ্বন্দ্বে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি')তে দুই গ্রুপ কর্মকর্তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা, মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের একপক্ষ সরাসরি কর্মকর্তা এবং অন্যপক্ষ ধীরে ধীরে প্রমোশন পেয়ে কর্মকর্তা হয়েছেন। যে কারণে প্রথম পক্ষের কর্মকর্তারা ডিরেক্ট অফিসার্স এসোসিয়েশন তৈরি করে দ্বিতীয় পক্ষের থেকে নিজেদের পৃথক ও বড় দেখাতে চান বলে অভিযোগ দ্বিতীয় পক্ষ অফিসার্স এসোসিয়েশন কর্মকর্তাদের। তারা উভয়েই সার্বজনীন
পেনশন স্কিম 'প্রত্যয়' প্রত্যাহারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছিলেন। ২ জুলাই মঙ্গলবার সকালে কর্মবিরতি চলাকালে স্থান দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের কর্মকর্তারা প্রথমে বাকবিতন্ডা এবং পরে মারামারিতে জড়িয়ে পরেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। এ সময় উভয় গ্রুপের ১০ জন কমবেশী আহত হয়েছেন । তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে ।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেত্রকোণায় যুবদলের মিলাদ মাহফিল
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের নীচতলায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন ব্যানার টানিয়ে কর্মবিরতি পালন করছিল। কিছু সময়ের পর ওই স্থানে ডিরেক্ট অফিসার্স এসোসিয়েশন লেখা ব্যানার নিয়ে তা ঝোলাতে আরেকটি গ্রুপ সেখানে অবস্থান নিতে চায়। এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে দুই গ্রুপ মারামারিতে জড়িয়ে পরেন। পরবর্তীতে শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং পুলিশ এসে তাদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
এ বিষয়ে ডিরেক্ট অফিসার্স এসোসিয়েশনের ব্যানারের সভাপতি ও ববির অর্থ ও হিসাব বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সুব্রত কুমার বাহাদুর জানিয়েছেন, গতকাল সোমবারও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মবিরতি পালন করেছি। আজও তাই একইভাবে কর্মবিরতি পালন করতে প্রশাসনিক ভবন (১ম) এর নীচতলায় ব্যানার নিয়ে যাই। এ সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের নেতারা ওই ব্যানার ছিড়ে ফেলে বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আরো একটি ব্যানার আনা হয়। সেই ব্যানারও তারা কেড়ে নিয়ে যায়। এরপর চেয়ার নিয়ে তারা আমাদের উপর হামলা চালায়।হামলায় আমাদের ছয় কর্মকর্তা আহত হয়েছে বলে জানান ডিরেক্ট অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি।
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে জাফলং থেকে লুট হওয়া ৭ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার
তিনি আরো বলেন, আমাদের সংগঠনের রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে একটি সংগঠন যে কোন কারনে গড়ে উঠতে পারে। বৈধ অবৈধ বলতে কোন সংগঠন নেই। যারা সরাসরি কর্মকর্তা পদে রয়েছেন তাদের নিয়েই মুলত এ সংগঠন গড়ে উঠেছে। আর যারা ছোট পদ থেকে কর্মকর্তা হয়েছেন তারা রয়েছেন অপর গ্রুপে। এখানে তাদের মধ্যে আমাদের ব্যবধানটা অনেক বড়। এ কারনেই পৃথক সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সুব্রত কুমার বাহাদুর।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন এর সভাপতি এবং ববির ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ জানিয়েছেন, তাদের সংগঠনটি বৈধ সংগঠন। সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে এবং তিনি অফিসার্সদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সভাপতি হয়েছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা ৪টি সংগঠন বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখছে। হঠাৎ করে রাতারাতি এজটি ব্যানার নিয়ে আরেকটি সংগঠন গড়ে উঠেছে। এ সংগঠনটি গড়ে ওঠার মূল কারণ তারা পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আড় চোখে দেখছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট একজন কর্মচারীও অনার্স-মাস্টার্স পাশ। সেখানে সে ছোট পদে চাকরি নিয়ে তার কর্মক্ষেত্রে ধাপে ধাপে কর্মকর্তা হচ্ছেন। সেখানে তাদের নিয়ে কটাক্ষ এবং নতুন সংগঠন গড়ে তোলা সমোচিত হয়নি বলে জানান বাহাউদ্দীন গোলাপ।
হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা গতকালও আমাদের সাথেই কর্মবিরতিতে অংশ নিয়েছেন। আজও কর্মবিরতি পালন করছিলেন। আকস্মিক তারা সংগঠনের নামে ব্যানার নিয়ে এসে প্রশাসনিক ভবনের নীচতলায় অবস্থান নেয়। এ সময় তাদেরকে অন্যত্র সরে যেতে বললে তারা তাদের অবস্থানে অনঢ় থাকেন। এ নিয়ে বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে ওই সংগঠনের কর্মকর্তারা চেয়ার নিয়ে আমাদের কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালায়। হামলা প্রতিহত করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এতে আমাদের পক্ষের ৪ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাপ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন সয়ং বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ.আর. মুকুল জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। তাৎক্ষনিক প্রক্টর, শিক্ষক এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ, এ কারনে এ ব্যাপারে পুলিশ কোন হস্তক্ষেপ করবে না। তবে প্রক্টর জানিয়েছে যাতে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য পদক্ষেপ নেবেন।
বিষটি নিয়ে বিব্রত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কোনো বক্তব্য দিতে রাজী হননি তবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাইউম জানিয়েছেন, হাতাহাতির আকস্মিকতায় আমিও হতভম্ব হয়েছি। তাৎক্ষনিক পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। এতে কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন। তবে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য উভয় গ্রুপকে নিয়ে বৈঠক করা হবে।
এদিকে এ বিষয়টি বরিশালে এখন মুখরোচক গল্পে পরিণত হয়েছে। শিক্ষক কর্মকর্তাদের এমন আচরণ হলে এদের কাছে কি শিখবেন শিক্ষার্থীরা? শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে এ প্রশ্ন এখন বরিশালের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের।