চার বছরেও শেষ হয়নি ৯ মাসের কাজ

Sanchoy Biswas
আশরাফ হোসেন রাজা, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর)
প্রকাশিত: ৮:৩৫ অপরাহ্ন, ১৯ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৮:৩৫ অপরাহ্ন, ১৯ অগাস্ট ২০২৫
ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে সুগারমিল দিঘলকান্দি এলাকায় নির্মাণাধীন রেলসেতু। ছবিঃ সংগৃহীত
ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে সুগারমিল দিঘলকান্দি এলাকায় নির্মাণাধীন রেলসেতু। ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের দিঘলকান্দি রেলসেতুটির কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। সেতুটি নির্মাণ কাজের চুক্তি মেয়াদ ছিল নয় মাস। কাজ সমাপ্তের সময়সীমার চার বছর পেরিয়ে গেলেও আটকে আছে ষাট ফুট দৈর্ঘ্যের ওই রেলসেতুটির কাজ। ঠিকাদার বলছেন, রেল কর্তৃপক্ষ সময়মতো গার্ডার সরবরাহ করতে না পারায় কাজ শেষ করা যায়নি। সেতুর সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ পথে চলাচলকারী শত-শত ট্রেনযাত্রীকে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।

রেলের একটি সূত্র জানায়, সেতুটি ২০২০ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই পথে রেল চলাচল সচল রাখতে ও ঝুঁকিমুক্ত করতে ওই বছরই রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সেতুটি পুনর্নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ২৭ লাখ টাকা। কাজ পায় এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেড সেন্টার নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সংস্কারের জন্য নয় মাসের সময় বেঁধে দিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। অর্থাৎ ওই বছরের শেষের দিকে রেলসেতুটির সংস্কারের কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয় রেলের। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালের শুরুতে সেতু সংস্কারের কাজ শুরু করে। কিন্তু চার বছর শেষ হতে চললেও এখনো শেষ হয়নি রেলসেতুটির সংস্কারের কাজ।

আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের হামলায় মানসিক ভারসাম্য হারানো ছাত্রদল নেতার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের সর্বশেষ স্টেশন দেওয়ানগঞ্জ। এ রেলপথে প্রতিদিন তিস্তা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ও জামালপুর কমিউটার নামে চারটি ট্রেন চলাচল করে। যাওয়া-আসায় প্রতিবারই ট্রেনগুলোকে সেতুর ওই স্থানে দাঁড়াতে হয় এবং সেতুর ওই স্থানে দায়িত্বরত রেলকর্মীর অনুমতিপত্র নিয়ে সেতুটি পারাপার হতে হয়। সেতুটিতে এখনো বসানো হয়নি স্টিলের গার্ডার, ওয়াল ক্যাপ। সেতুটির ওপর রেললাইনে স্লিপারে কাঠের বিটের পাত লাগানো হলেও তা নড়ে-বড়ে। মৃদুগতিতে ট্রেন চলাচলের সময়ও সেতুটি নড়ে-চড়ে ওঠে। তাছাড়া দুই পাশের ওয়াল, ব্লক ও মাটি কাটা, ঢালাইয়ের কাজসহ অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। ফলে প্রতিদিনই ওই পথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোকে বিরাটমাত্রার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন যাত্রী ও এলাকাবাসী।

দপড়পাড়া গ্রামের ট্রেনযাত্রী সাদ্দাম হোসেন রতন বলেন, আমি মাঝে মাঝে জামালপুর, ময়মনসিংহসহ ঢাকায় যাতায়াত করি। সেতুর ওপর ট্রেন উঠলে ট্রেন নড়ে-চড়ে ওঠে। তখন ভয় লাগে। দীর্ঘদিন থেকে এ অবস্থা চললেও প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সে দিক বিবেচনা করে রেলসেতুটির সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: রইস উদ্দিনকে ওমরাহ করিয়ে এবার তার বাড়িতে অপু বিশ্বাস

তারাটিয়ার ট্রেনযাত্রী মোবারক হোসেন হিমেল বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ওই রেলসেতুটির সংস্কার কাজ চলছে। এতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে শত-শত যাত্রী। যাতায়াতে ওই স্থানে ট্রেন থেমে যায়। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ওই স্থানে মাঝে মাঝে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। সেতুটির জন্য এ রেলপথ এখন নিরাপদ নয়। দ্রুত সেতুটির কাজ শেষ করার দাবি জানান তিনি।

কাউনিয়ারচরের ট্রেনযাত্রী আব্দুল ওয়াহাব জানান, অনেক দিন থেকে দেখছি রেলসেতুটির কাজ করতে। মাঝে মাঝে কাজ চলে, আবার মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে। সেতুর ওই স্থানে এসে প্রতিটি ট্রেন থামে। মৃদুগতিতে সেতুটি পার হয় প্রতিটি ট্রেন। বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষের আমলে আনা উচিত।

এ বিষয়ে কথা হয় সেতুটির সংস্কার কাজের ঠিকাদার সোহাগের সাথে। তার ভাষ্য, কাজটির দুইবার ডিজাইন বদল হয়েছে। গার্ডার পাওয়া যাচ্ছিল না, সে কারণে রেল কর্তৃপক্ষ গার্ডার দিতে বিলম্ব করেছে। তবে এখন কাজ চলছে। খুব শিগগিরই শেষ হবে।

দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন মাস্টার আব্দুল বাতেন বলেন, রেলসেতুটি সংস্কার করা খুব জরুরি। সেতুর ওই স্থানে একজন রেলকর্মী রাখা হয়েছে। সে ট্রেন চলাচলের সময় ঝুঁকির বিষয়টি দেখেন। তাতেও ঝুঁকি থেকে যায়। সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে। আশা করছি, খুব শিগগির কাজ শেষ হবে।

এ বিষয়ে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী সিরাজ জিন্নাত জানান, ওই রেলসেতুর কাজ এখন দ্রুতই শেষ হবে। সেতু সংস্কার করতে আনুষঙ্গিক যে উপকরণ প্রয়োজন তা ওই স্থানে নেওয়া হয়েছে। ৬০ ফুট একটি গার্ডার ওই সেতুতে প্রয়োজন, যা রেলপথে বহন করতে না পাওয়ার কারণে কাজটি বিলম্বিত হলো। এখন কাজ চলছে। খুব শিগগির ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হবে।